গত শুক্রবার ১৮ জুলাই আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ দেশটির আগদাম অঞ্চলের ঐতিহাসিক জিয়াসলি মসজিদের পুনর্নির্মিত সংস্করণের উদ্বোধন করেন। এটি ছিল এক প্রতীকী মুহূর্ত যা অঞ্চলটির ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের পুনরুদ্ধারকে দৃশ্যমান করে।
রাষ্ট্রপতির সহকারী আনার আলি আকবরভ রাষ্ট্রপতির সামনে মসজিদের সংস্কার প্রকল্পের বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেন এবং উল্লেখ করেন যে, মসজিদটির মূল স্থাপত্যশৈলীর প্রতি সম্মান রেখেই ব্যাপক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।
এই পূর্ণাঙ্গ সংস্কারকাজ শুরু হয় ২০২২ সালে, হেইদার আলিয়েভ ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে।
কাজের সময় আর্কাইভচিত্র, ভিডিও এবং পুরাতন নথিপত্র ব্যবহার করে যথাসম্ভব নির্ভুলভাবে ঐতিহাসিক নিদর্শন পুনঃস্থাপন নিশ্চিত করা হয়।
মসজিদের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত দুইটি মিনার পুনর্নির্মাণ করা হয় ভিতরে সংরক্ষিত সর্পিল সিঁড়ির অবকাঠামো ঠিক রাখার ভিত্তিতে। পাশাপাশি ঢালু পাথরের স্তম্ভগুলো বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মেরামত করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত গম্বুজ ও মিহরাবও পুনরায় ঠিক করা হয়েছে।
মসজিদের বাইরের প্রাচীর পরিষ্কারে ব্যবহার করা হয় বিশেষ রাসায়নিক উপাদান, এবং পুরনো পাথরসমূহ পুনরায় স্থাপন করা হয় আগের নকশা অনুযায়ী। এতে মসজিদের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য এবং স্থাপত্যরীতি আবারও ফুটে ওঠে।
ভবিষ্যতে মসজিদটিকে একটি কার্যকর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এর চারপাশে কিছু সহায়ক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এই মসজিদ আবারও নামাজি ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো।
উল্লেখ্য, ২০০১ সাল থেকেই আজারবাইজানের মন্ত্রিসভা জিয়াসলি মসজিদকে একটি স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্মারক হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমান সময়ে এটি আগদাম অঞ্চলে ইসলামী পরিচয়ের একটি শক্তিশালী প্রতীক হয়ে উঠেছে।
আগতাম শহরের এই মসজিদটি ১৯ শতকে নির্মিত হয়। এটি আজারবাইজানের প্রখ্যাত স্থপতি কারবালাই সাফিখান কারাবাগির (Karbala’i Safikhan Karabakhi) ডিজাইন অনুসারে ১৮৬৮-৭০ সালের মধ্যে নির্মিত হয়। আগদাম শহরটি ১৯৯৩ সালে আর্মেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, এবং তখন থেকেই শহরটি সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
আগদাম মসজিদ ছিল কারাবাখ অঞ্চলে একমাত্র মসজিদ যা পুরোপুরি ধ্বংস না হয়ে টিকে ছিল, যদিও সেটি ভয়াবহ অবমাননার শিকার হয়। কিছু সূত্রে বলা হয়, আর্মেনীয় কর্তৃপক্ষ সেখানে পশুপালনের মতো কার্যক্রমও পরিচালনা করে।
২০২০ সালের দ্বিতীয় নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধের পরে আজারবাইজান যখন আগদাম পুনরুদ্ধার করে, তখন থেকেই মসজিদটির পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পুনর্গঠনকাজ ২০২২ সালে শুরু হয় এবং এটি সম্পূর্ণ হয় ২০২৪ সালের মাঝামাঝি। সংস্কার কাজের সময় মূল স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ সংরক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়।
সূত্র: আলোকা.নেট; প্রেসিডেন্ট.আজ; আজারনিউজ