প্রায় ১১ সপ্তাহ ধরে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরাইল। এতে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়ে উপত্যকার বাসিন্দারা। সোমবার (১৯ মে) মাত্র ৫ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয়, যা প্রয়োজনের মাত্র ১ শতাংশ। তবে ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গাজায় প্রতিদিন ১০০ ট্রাক ত্রাণ সরবরাহের অনুমোদন দেয় নেতানিয়াহু সরকার।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রতিদিন গাজায় ১০০ ট্রাক ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি পেয়েছে তারা, যদিও দিনে উপত্যকাটিতে ৫০০ ট্রাক ত্রাণের প্রয়োজন।
এদিন জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, আজও (২০ মে) গাজা উপত্যকায় কোনো মানবিক সাহায্য বিতরণ করা হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের একটি দল কেরেম শালোম এলাকায় প্রবেশ করে ইসরাইলি সবুজ সংকেতের জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিল। দুর্ভাগ্যবশত, তারা আমাদের গুদাম থেকে পণ্য আনার অনুমতি দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, গাজা উপত্যকায় আরও সরবরাহ এসেছে তবে স্থলভাগে থাকা জাতিসংঘের দলগুলো আমাদের গুদাম এবং ডেলিভারি পয়েন্টগুলোতে পৌঁছাতে পারেনি।
এর আগে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সতর্ক করে বলেছেন, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ চরম রূপ নিয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অনাহারে ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
মঙ্গলবার বিবিসির রেডিও ফোরস টুডে প্রোগ্রামে গাজায় ইসরাইল যে পরিমাণ সাহায্য দিচ্ছে তা নিয়ে কথা বলেন টম ফ্লেচার।
তিনি বলেন, ইসরাইল ১১ সপ্তাহের অবরোধ তুলে নেয়ার পর গতকাল গাজায় মাত্র পাঁচ ট্রাক ত্রাণ গেছে। এটা বাসিন্দাদের প্রয়োজনের তুলনায় একেবারের নগণ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা মরুভূমির মধ্যে এক ফোঁটা পানি ফেলার মতো’।
তিনি আরও বলেন, শিশু খাদ্য ও পুষ্টিকর খাবারের লরিগুলো গাজার কাছাকাছি রয়েছে কিন্তু সীমান্তের ঠিক ওপারে থাকায় বেসামরিক লোকদের কাছে পৌঁছায়নি।
ফ্লেচার বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সাহায্য না পৌঁছে, তাহলে প্রায় ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে। তার কথায়, ‘আমি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যতটা সম্ভব এই ১৪ হাজার শিশুকে বাঁচাতে চাই।’
এদিকে গাজায় অযৌক্তিক হামলার জেরে ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। একইসঙ্গে দেশটিতে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (২০ মে) যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি হাউজ অব কমন্সে জানিয়েছেন, তারা ইসরাইলের সঙ্গে একটি নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০৩০ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রোডম্যাপের আওতায় সহযোগিতার বিষয়টি পর্যালোচনা করবো। নেতানিয়াহু সরকারের কর্মকাণ্ডই এ সিদ্ধান্তকে দরকারি করে তুলেছে।’
ডেভিড ল্যামি বলেন, ইসরাইলের রাষ্ট্রদূতকে ফরেন অফিসে তলব করে জানানো হয়েছে যে গাজায় ত্রাণ দেয়ার ক্ষেত্রে ইসরাইলের অবরোধ ‘অসমর্থনযোগ্য’।