গাজা উপত্যকার বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থা বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চল প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েলি সহায়তা অবরোধের অধীনে রয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য গাজা থেকে সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা হলেও তাদের ‘চূড়ান্ত লক্ষ্য’ হলো হামাসের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন। ২০২৩ সালে হামাসের হামলার জবাবে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় সামরিক অভিযান ফের শুরু করেছে ইসরায়েল।
গাজার দক্ষিণে খান ইউনিস শরণার্থীশিবিরে আবু সাহলুল পরিবারের বাড়িতে বিমান হামলায় বৃহস্পতিবার আটজন নিহত হয় বলে জানিয়েছেন বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থার কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইয়্যির। তিনি বলেন, গাজা সিটির আল-তুফাহ পাড়ার শা’আফের পূর্বে আরো চারজন নিহত হয়েছে।
এ ছাড়া গাজাজুড়ে অন্যান্য হামলায় আরো অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছে বলেও সংস্থাটি জানিয়েছে, যার মধ্যে একটি হামলা ছিল গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর এল-বালাহ শহরের কাছে বাস্তুচ্যুতদের এক তাঁবুতে।
হামাসশাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল ফের হামলা শুরুর পর থেকে অন্তত দুই হাজার ৩২৬ জন নিহত হয়েছে।
এতে ২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৪১৮ জনে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে মোট এক হাজার ২১৮ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশির ভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক। হামলার সময় ২৫১ জনকে জিম্মিও করেছিল হামাস। এখনো ৫৮ জনকে গাজায় আটকে রাখা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
ইসরায়েলের দাবি, তাদের নতুন সামরিক অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে হামাসকে বাধ্য করা, যাতে তারা এসব জিম্মিকে মুক্তি দেয়। জেরুজালেমে ইসরায়েলের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা জীবিত ও মৃত—দুই ধরনের জিম্মিদেরই ফিরিয়ে আনতে চাই। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মিশন। কিন্তু যুদ্ধের একটি সর্বোচ্চ লক্ষ্য রয়েছে—আর সেটি হলো আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয় এবং আমরা সেটি অর্জন করব।’
এদিকে সামরিক অভিযান ফের শুরুর কয়েক দিন আগেই ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, গাজা এখন ‘মানবিক বিপর্যয়ের’ মুখোমুখি। তিনি এ সপ্তাহে আরো বলেছিলেন, ‘গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর এমন জীবনযাপন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা ধীরে ধীরে তাদের ওই অঞ্চলে অস্তিত্ব বজায় রাখার ক্ষমতার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হয়ে উঠছে।’