ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বন্দরে শনিবার ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ২৮ জনে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরো এক হাজারের বেশি মানুষ। বিস্ফোরণের ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পর রবিবারও সেখানে আগুন জ্বলছে বলে জানিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট। ঘটনার পর হরমুজগান প্রদেশে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের শহীদ রাজাই বন্দরে শনিবার বিস্ফোরণটি হয়, যা হরমুজ প্রণালির কাছে অবস্থিত। এ প্রণালি দিয়ে বিশ্বের মোট তেলের এক-পঞ্চমাংশ পরিবাহিত হয়। রেড ক্রিসেন্ট প্রধান পিরহোসেইন কুলিভান্দ রবিবার সরকারের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জানিয়েছেন, ২৮ জন নিহত ও এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারে রবিবার ঘটনাস্থল থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।
ঘটনাস্থল থেকে রাষ্ট্রীয় টিভির একজন সংবাদদাতা রবিবার বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো সম্পূর্ণ নেভানো যায়নি।’
এ ছাড়া তাসনিম বার্তা সংস্থার রবিবার প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশে একটি হেলিকপ্টার পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। তাদের আরো কিছু ছবিতে দেখা যায়, দগ্ধ ও উল্টে যাওয়া কার্গো কনটেইনারের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা কাজ করছেন এবং একটি মরদেহ সরিয়ে নিচ্ছেন। ঘটনাস্থলে যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ওই এলাকার ফুটেজ শুধু ইরানি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে।
দম বন্ধ করা ধোঁয়া ও বায়ুদূষণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় রবিবার বন্দরের প্রায় ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাসের সব স্কুল ও অফিস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে কর্তৃপক্ষ জরুরি সহায়তায় মনোযোগ দিতে পারে। রাষ্ট্রীয় টিভি এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান রবিবার বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। রাষ্ট্রীয় টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট বন্দর আব্বাসের শহীদ রাজাই বন্দরের বিস্ফোরণের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।’
এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাসিন্দাদের ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ ঘরের বাইরে না যাওয়ার এবং সুরক্ষামূলক মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।
অন্যদিকে কুলিভান্দ জানিয়েছেন, আহতদের কয়েকজনকে চিকিৎসার জন্য রাজধানী তেহরানে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা ঘটনাস্থল থেকে এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি উত্তরে অবস্থিত।
এদিকে রাশিয়ার দূতাবাস জানিয়েছে, মস্কো ইরাননের অনুরোধে ‘কয়েকটি বিমান ও বিশেষজ্ঞ দল’ পাঠাচ্ছে আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তার জন্য।
নিউইয়র্ক টাইমস ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) সঙ্গে সম্পর্কিত এক ব্যক্তির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বিস্ফোরিত পদার্থ ছিল সোডিয়াম পারক্লোরেট, যা কঠিন জ্বালানিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির একটি মূল উপাদান। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রেজা তালাই-নিক রাষ্ট্রীয় টিভিতে বলেছেন, ‘এ এলাকায় সামরিক জ্বালানি বা সামরিক উদ্দেশ্যে আমদানি কিংবা রপ্তানির কোনো কার্গো ছিল না।’
বন্দরের কাস্টমস অফিস রাষ্ট্রীয় টিভিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিস্ফোরণ সম্ভবত বিপজ্জনক ও রাসায়নিক পদার্থ সংরক্ষণাগারে আগুন লাগার পর ঘটেছে। কয়েকটি কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়েছে বলে একজন আঞ্চলিক জরুরি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
বিস্ফোরণটি এমন সময় ঘটল, যখন ওমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় মিলিত হচ্ছিল, যেখানে উভয় পক্ষই অগ্রগতির কথা জানিয়েছে। যদিও ইরানি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বিস্ফোরণকে দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করছে, তবে এটি এমন এক সময় ঘটল, যখন ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে ইরান। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ২০২০ সালে ইসরায়েল শহীদ রাজাই বন্দরে একটি সাইবার হামলা চালিয়েছিল।