গভীর সম্পর্ক দু’জনের৷ কতটা গভীর? রিচি বেনোর মৃত্যুতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে শেন ওয়ার্নের লেখা খোলা চিঠি এবং স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেটাই ধরা পড়ল৷
ক্রিকেটের নিরিখে রিচি বেনোর তাৎপর্য কতখানি, সেটা কথায় বর্ণনা করা খুব কঠিন৷ আমার কাছে উনি ক্রিকেটের থেকেও বড়৷
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ওয়ালি এডওয়ার্ডস শুনলাম বলেছেন, ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের পর রিচি বেনোই সবথেকে প্রভাবশালী ক্রিকেটার৷ কিন্তু আমি বলব, ডন ব্র্যাডম্যানের থেকেও ওনার প্রভাব আরও বেশি ছিল৷ ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা প্লেয়ার যে ব্র্যাডম্যান, এটা নিয়ে তর্কের অবকাশ নেই৷ কিন্তু রিচি অনেক বেশি প্রভাবশালী৷ ভাবুন একবার, কীভাবে ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটের মাধ্যমে ক্রিকেটে নবদিগম্ত এনেছিলেন৷ ভাবুন, কীভাবে আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্বে নতুন মাত্রা এনেছিলেন৷ ওনার বোলিং, ব্যাটিং, ক্রিকেট খেলার ধরন! এক কথায় অসাধারণ৷
তার পর খেলা ছেড়ে দিয়ে সর্বকালের অন্যতম সেরা ধারাভাষ্যকার৷ সব খেলার নিরিখে এ কথা বলছি৷ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই কাজ করে গেছেন৷ কখনও ইংল্যান্ডে, কখনও অস্ট্রেলিয়ায়৷
আমরা দুর্দান্ত প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি৷ আমাদের ডেম এডনা এভারেজ আছে, কিলি মিনোগ আছে৷ কিন্তু রিচি সবার ওপরে৷ সত্যিই কী নিপাট ভদ্রলোক৷
ওনাকে আর ডাফনিকে (বেনোর স্ত্রী) প্রায় ৩০ বছর ধরে চিনি৷ সবার কাছে উনি সত্যিকারের কিংবদম্তি৷ সব অর্থে৷ ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার এবং মানুষ হিসেবে আমার কাছে সেরা৷ উনি যে আমার এত ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং মেন্টর ছিলেন, তার জন্য আমি গর্বিত, সম্মানিত৷
আমরা বহু অসাধারণ মুহূর্ত একসঙ্গে কাটিয়েছি৷ ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছি৷ বিশেষ করে লেগ স্পিন নিয়ে আমরা দু’জনেই কতটা মুগ্ধ, ওটা আমাদের দু’জনের কাছেই কতটা ভালোবাসার জায়গা, তা নিয়ে কত কথা হয়েছে৷
আর আমাদের সেই ডিনারগুলো? বছরের পর বছর ধরে আমরা কত মজা করেছি৷ খাওয়ার টেবিল থেকে আপেল তুলে নিয়ে লেগ স্পিনের গ্রিপ আর টেকনিক নিয়ে আলোচনা করেছি৷
যখন ছোট ছিলাম, তখন উনি আর ডাফনি আমার জন্য কত সময় দিয়েছেন৷ থ্যাঙ্ক ইউ৷ মনে আছে, তখন আমি ১৮ বছরের একজন লেগ স্পিনার, নিজেকে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছি৷ সেই সময় ওনার মূল্যবান পরামর্শ পেয়েছি৷ এগুলো আমার কাছে অনেক৷
কমেন্ট্রি বক্সে ওনাকে পাশে পাওয়া আর একটা অসামান্য অভিজ্ঞতা৷ মুগ্ধ হয়ে দেখতাম ওনাকে৷ সেখানেও লেগ স্পিন নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে৷ সারা বিশ্বের উঠতি লেগ স্পিনারদের আমরা পরামর্শ দিয়েছি৷
মনে পড়ছে ওনার শেষ টেস্টের কথা৷ ২০০৫ অ্যাশেজ৷ আমরা সবাই উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে ওনাকে বরণ করে নিয়েছিলাম৷ উনি শুধু অস্ট্রেলীয় নন, সারা বিশ্বের আইকন৷ সত্যিকারের লিজেন্ড৷
হাস্যরস, সময়জ্ঞান, প্রবচন– নাঃ, আর একজন রিচি বেনোকে আমরা পাব না৷ সম্ভব নয়৷ ক্রিকেটের জন্য যা করেছেন, মনে হয় না আর কেউ সেটা করতে পারবে৷
রিচিকে সবাই খুব ভালোবাসে৷ রিচি ক্রিকেটের গডফাদার৷ ওনাকে আমরা সবাই বড্ড মিস করব৷ ভালো থাকবেন বন্ধু৷ আমার হিরো৷