রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা, সে বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত জানাননি মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আইনজীবীরা তার সঙ্গে দেখা করলে তিনি এই তথ্য জানান।
মি. কামারুজ্জামানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির কারাগার থেকে বেরিয়ে বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পড়ে শোনানোর পর এখন করনীয় সম্পর্কে আমাদের কাছ থেকে আইনের বিধিবিধানগুলো জেনেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন এবং পরামর্শ চেয়েছেন। অন্যান্য দেশেও কি নজীর রয়েছে, সেগুলো আমাদের কাছ থেকে জেনেছেন।
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাবেন, বলে মি. মনির জানিয়েছেন।
তবে চিন্তাভাবনার জন্য কতটা সময় লাগবে বা জেল কর্তৃপক্ষকে কখন জানাবেন, সে বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই বলে মি. মনির জানান।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি ‘রিজনেবল’ সময় নেবেন বলে তিনি আমাদের বলেছেন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সময়মতো বিষয়টি জানাবেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে আইনজীবীরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন।
বুধবার রায় প্রদানকারী চার বিচারপতি রায়টি চূড়ান্ত করার পর তাতে স্বাক্ষর করেন। এরপরই সেটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে বিকালে কারাগার কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছায়।
বিকালে রায়টি তাকে পড়ে শোনানো হয়।
রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা, কারা কর্তৃপক্ষ জানতে চাইলে তিনি আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করার সিদ্ধান্ত জানান।
এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পেতে হলে কামারুজ্জামানকে একমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করতে হবে। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করলে তিনি রেহাই পেতে পারেন।
নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করলে সেই প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি রায় কার্যকর করার বিধান নেই। তবে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা না করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে জানানো হয়। এরপর মন্ত্রণালয় ফাঁসির দিনক্ষণ নির্ধারণ করে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মি: কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ফাঁসির আদেশ দেয়।
প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগে বলা হয়েছিল, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মি. কামারুজ্জামান জামায়াতে ইসলাম-এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি ছিলেন।
তার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতা বিরোধী অপরাধের মোট সাতটি অভিযোগ আনা হলেও ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয় বলে জানান ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের একজন আইনজীবী তুরীন আফরোজ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন জানান মি: কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা।
তবে আপিল বিভাগ ফাঁসির ওই আদেশই বহাল রাখেন। তখনই মি: কামারুজ্জামানের একজন আইনজীবী তাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন তারা এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন।
এরপর গত ৫ মার্চ ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করে আসামি পক্ষ।
মি. কামারুজ্জামানকে পুলিশ ২০১০ সালে গ্রেপ্তার করে ।