বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের আশঙ্কা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’র

SHARE

police action20বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর চলমান নির্যাতন-নিপীড়ন অব্যাহত থাকলে দেশটিতে জঙ্গিবাদের উত্থান হতে পারে। এমনটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আমেরিকার বিখ্যাত পত্রিকা দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিয়ে সোমবার পত্রিকাটি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়

সৈয়দ জাইন আল-মাহমুদ লিখিত ‘এমিড পলিটিক্যাল কেওস, বাংলাদেশ ফিয়ারস এ রাইজ ইন মিলিটেন্সি’ শিরোনামের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় সরকার বিরোধীদেলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক করেছে। বিরোধীদলের মিছিল মিটিং করতে দিচ্ছে না সরকার। জানুয়ারির থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক লোক নিহত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে গত জানুয়ারিতে রাজপথে নামার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে অন্তত একশ’ মানুষ। পুলিশ হাজার হাজার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। বিরোধী দলগুলোর মিছিল নিষিদ্ধ।নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিরোধীরা বিক্ষোভ করায় দেশব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ রাজনৈতিক মতকে গলাটিপে ধরা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা করায় মানবাধিকার কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, এই সুযোগে উগ্রপন্থীরা দীর্ঘ সময় ধরে সহনশীল মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে নির্যাতিত লোকদের দলে ভেড়ানোর ভালো মওকা পেতে পারে।

আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, গণতন্ত্র যদি অবমূল্যায়িত হয় তাহলে চরমপন্থা আসকারা পেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ভিন্নমত পোষণের খুব কমই সুযোগ আছে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে মত প্রকাশে হস্তক্ষেপ বা বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রশাসন ‘শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক’ রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমোদন দিচ্ছে। তবে ‘সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাধা দিচ্ছে।

দেশটির পুলিশ প্রধান (ইন্সপেক্টর জেনারেল) শহীদুল হক বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীগুলো শুধু নিজেদের রক্ষায় গুলি করে থাকে।

অন্যদিকে, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলছেন, রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার সব দরজা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এখানকার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ইসলামী দলগুলো রাজনৈতিক পন্থা বাদ দিয়ে ‘তালেবান’ হয়ে উঠতে পারে। দেশের বাইরের জঙ্গি গ্রুপগুলো এই অস্থিরতার সুযোগ নিতে পারে বলেও তার আশঙ্কা।

বিগত সপ্তাহগুলোতে পুলিশ একাধিকবার বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধারসহ অনেককে আটক করে দাবি করেছে তারা জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এই জঙ্গি গ্রুপটি ২০০২ সালে বিভিন্ন আদালত, সিনেমা হল এবং শপিং মলে বোমা হামলার জন্য দায়ী।

সম্প্রতি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের একটি প্রদেশে বোমা বানানোর সময় জেএমবির সাত সদস্যকে আটকের পর নিরাপত্তা বাহিনীর ধারণা, গ্রুপটি আবারো যেকোনো সময় স্বমূর্তিতে ফিরে আসতে পারে।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের মূল হচ্ছে গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিতর্কিত পুনঃনির্বাচন।নির্বাচনের সময়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নেয়া সংক্রান্ত সংবিধানের একটি অধ্যায় শেখ হাসিনা বাতিল করে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনার বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিকতার অভিযোগ এনে বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করে। এরপর থেকে বিরোধী বিভিন্ন পক্ষ তার পদত্যাগ এবং দ্রুত নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আর তার সহযোগীরা দীর্ঘ সময় ধরে মধ্যপন্থী বলে পরিচিত বিএনপিকে জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর সাথে তুলনা করে থাকেন।

সংকটের এই পর্যায়ে চলতি মাসেই বিএনপির মুখপাত্র সালাহ উদ্দিন আহমেদকে অস্ত্রধারীরা তুলে নিয়ে যায়। পরিবারের দাবি অনুযায়ী, অস্ত্রধারীরা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের লোক। এর পর তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ স্বামীর সন্ধান চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করলেও পুলিশ আদালতের কাছে এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে।

হাসিনা আহমেদ বলেন, “আমরা খুব ভয়ের মধ্যে আছি। তাকে অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছে এবং শারীরিকভাকে ক্ষতি করা হতে পারে।”

সরকার সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে বললেও স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে কাউকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর নিহত বা কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার ঘটনাগুলো ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ হিসেবে গণ্য হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

ওয়াদুদ বেপারি নামে ৩০ বছরের এক শ্রমঅধিকার কর্মী এবং বিএনপি নেতা পুলিশ হেফাজতে মারা গেছেন। তার বাবা আবদুল আলী বেপারী মধ্যরাতে তার কাছে ছেলের মৃত্যুসংবাদের খবর আসার কথা স্বরণ করে বলেন, অজ্ঞাত একজন মাঝরাতে ফোন করে বলল ‘মর্গে এসে ছেলের লাশ নিয়ে যান। এরপরই ফোনের লাইন কেটে গেল।’

পুলিশ বলছে, ওয়াদুদ বেপারিকে গত মাসে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে’ জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়। এরপর তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় বিরোধী নেতাকর্মীদের সাথে এক ‘ক্রসফায়ার’র ঘটনায় তিনি মারা যান। সুরতহাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওয়াদুদের বুকে এবং পিঠে অন্তত ছয়টি গুলির চিহৃ ছিল।

ওয়াদুদের বাবা জানান, তিনি পুলিশের বক্তব্য বিশ্বাস করেন না। তার ছেলে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা যত বাড়ছে ওয়াদুদের মতো ‘ক্রসফায়ারে’ নিহতের ঘটনাও বাংলাদেশে  প্রতিনিয়ত ঘটছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অনুসন্ধান বিভাগের পরিচালক নূর খান বলেন, “ক্রসফায়ার, একাউন্টার অথবা অন্য যে নামেই ডাকা হোক এগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।”

আবুল বাশার (৩২) নামে জামায়াতে ইসলামীর এক কর্মী জানান, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি তার বাড়িতে রাত কাটাতে পারেন না। তার ভয় পুলিশ যদি তাকে আটক করে তাহলে মেরে ফেলবে।

পেট্রলবোমা নিক্ষেপের সন্দেহে তাকে পুলিশ খুজেঁ বেড়ালেও এ ধরনের কোনো হামলায় তার জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন বাশার। তিনি বলেন, ওই ঘটনা যখন তার গ্রামে ঘটে তখন তিনি ঢাকায় ছিলেন।  তিনি বলেন, “আমাদের জন্য কোনো আইন নেই, কোনো নিরাপত্তা নেই।”

বাশারের নিজেরও ধারণা, যদি তাদের আন্দোলন এখনো ‘শান্তিপূর্ণ’ আছে, কিন্তু তার ভয় হচ্ছে অনেক কর্মী আস্তে আস্তে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়ে উগ্রপন্থায় ঝুঁকতে পারেন। তিনি বলেন, লোকজন তাদের বন্ধু, ভাইদের হারিয়ে ফেলেছে। তাদের ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে তারা বেপোরায়া হয়ে উঠছে।

ওয়াল স্টিট জার্নালের পুরো প্রতিবেদনটি এখানে দেয়া  হলো:

Amid Political Chaos, Bangladesh Fears a Rise in Militancy
Extremist groups are thought to benefit as government cracks down on opposition-party protesters

Syed Zain Al-Mahmood
Updated March 23, 2015 5:09 p.m. ET

DHAKA, Bangladesh—A heavy crackdown on antigovernment protesters in Bangladesh has been fueling anger and fear within the country’s opposition movement, creating an opening for militant extremism to take root here, rights advocates and others say.

More than 100 people have died since January, when supporters of the main opposition Bangladesh Nationalist Party and its ally, the Jamaat-e-Islami, took to the streets to call for early elections. Police have arrested thousands of activists and banned the opposition groups from holding demonstrations. The opposition has defied that ban, leading to clashes across the country.

As police respond to the violent protests with tactics that critics allege include stifling political speech and carrying out extrajudicial killings, rights advocates fear that militant groups could be better positioned to attract new recruits from among embittered opposition sympathizers in this country long known as a bastion of moderate Islam.

“If democracy is undermined, militancy could rise,” said Shahdin Malik, a civil-rights lawyer in Dhaka. “There is very little political space for dissent right now.”

The government denies that it is curbing political speech or carrying out extrajudicial killings.

Mohammed Nasim, a senior minister who often acts as a government spokesman, said the administration would allow “peaceful and democratic” political activities but would crack down on “anarchy and terrorist activities”.

The Inspector General of Bangladesh’s national police, Shahidul Hoque, said security forces only open fire in self-defense.

“If all avenues of political discourse are closed, Islamist parties that are part of electoral politics here could renounce the political system and become our Taliban,” said Badiul Alam Majumdar, the secretary-general of Citizens for Good Governance, an advocacy group that campaigns for transparency in government. “Militant groups from outside could also take advantage of the upheaval,” he added.

In recent weeks, police have announced the discovery of several weapons caches they say are linked to the Jamaat’ul Mujahideen Bangladesh, a banned militant group blamed for a series of bomb attacks on courts, cinemas and malls in 2002. They fear the group could be making a comeback, after India late last year arrested several people who its police said were JMB members following an explosion in a state bordering Bangladesh.

Bangladesh’s political turmoil is rooted, in part, in the highly contentious re-election of Prime Minister Sheikh Hasina last year.

Ms. Hasina scrapped a provision in the constitution that required an interim government to take over during elections. The opposition then boycotted the polls, accusing Ms. Hasina of authoritarian tendencies. Opposition groups have called on her to step down and allow new elections.

For her part, Ms. Hasina has referred to BNP leader Khaleda Zia, as a “terrorist,” and her aides have compared the BNP, which has long been regarded as a centrist political party, with the militant group Islamic State for trying to impose a nationwide blockade of road, rail and river transport to press its demands.

The government alleges the BNP and its allies are responsible for a series of firebomb attacks on vehicles that have killed more than 60 people. The opposition groups deny the allegation and say they have only acted peacefully.

In this Feb. 4, 2015, file photo, Bangladeshis raise their hands for fruit sold during a strike called by the BNP-led alliance in Dhaka. Photo: A.M. Ahad/Associated Press

Adding to the tensions this month, an opposition spokesman and leader of the BNP, Salahuddin Ahmed, was taken from his home by armed men that his family said were police detectives. His wife, Hasina Ahmed, filed a habeas corpus writ in the High Court demanding the police produce her husband before a court. The police, in a written statement submitted to the court, denied holding Mr. Ahmed.

“We’re terrified that he is being held at an undisclosed location and may be physically harmed,” said Ms. Ahmed.

As the government has sought to curb upheaval, local and international rights groups say they see a pattern of deaths among people being held by police or during what security forces describe as “encounters” with people they claim are terrorists or criminals. These deaths, they say, amount to a form of illegal execution.

‘If democracy is undermined, militancy could rise’

A former police inspector general, Nurul Huda, declined to speak directly about alleged extrajudicial killings. But, he said, “the demands on the police forces to maintain public order have increased disproportionately due to the current turmoil,” adding: “When the police are overstretched, civil liberties and due process sometimes suffer.”

Wadud Bepari, a 30-year-old labor activist and member of the BNP, died apparently while in police custody in Dhaka.

His father, Abdul Ali Bepari, recalled the phone call he received in the middle of the night recently, bearing the grim news. “Come and get your son from the morgue,” the unknown man on the other end of the line said, according to Mr. Bepari. Then the line went dead.

Police said the younger Mr. Bepari had been detained last month on suspicion of involvement in “terrorist activity” and then, while in custody, was caught in a “crossfire” between police and opposition activists. He was shot at least six times in the chest and back, according to a coroner’s report.

The elder Mr. Bepari said he doesn’t believe the police version of what happened to his son. “He wasn’t involved in any criminal activity,” added the 60-year-old cloth trader.

Rights groups say that alleged “crossfire” deaths such as Wadud Bepari’s are becoming increasingly common as Bangladesh’s political crisis drags on.

“Whether these are called crossfire, encounter or by some other name, they are extrajudicial killings,” said Nur Khan, director of investigations at Ain O Salish Kendra, a Bangladeshi civil-rights and legal-aid group.

The group has documented the cases of 37 people it says were killed by security forces in February, often after they had been taken into custody. There were 15 extrajudicial killings in January and 7 in December, the group says.

Bangladesh’s Home Ministry, which oversees the country’s police and security forces, didn’t respond to requests for comment. Last year, responding to a report by U.S.-based Human Rights Watch that called on the country to stop alleged extrajudicial killings, the minister of state for home affairs, Asaduzzaman Khan Kamal, said, “There are no abductions or extrajudicial killings in Bangladesh.”

Abul Bashar, a 32-year-old Jamaat-e-Islami activist, says he has been afraid to spend the night at his home for more than a year, fearing police would kill him if they arrest him.

Mr. Bashar says he is wanted by police on suspicion of participating in firebomb attacks. He denies any involvement in the attacks, which he said happened in his hometown in central Bangladesh while he was in Dhaka. “There’s no law, no protection for us,” he said.

Although he insisted that the opposition movement was still “peaceful”, he feared many activists would gradually be driven underground and would resort to more extreme tactics.

“People have lost friends, brothers and have been driven from their homes,” he said. “They’re getting desperate.”