মালয়েশিয়ায় পাচারকালে সংঘবদ্ধ চক্রের ৯ জন আটক

SHARE

maloy24সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় পাচারকালে সংঘবদ্ধ চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার এবং ১২ জনকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব। টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ নিরীহ লোকদের বিনা পয়সায় মালয়েশিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দালালের মাধ্যমে লোক সংগ্রহ করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

টাঙ্গাইল, কুমিল্লা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রীদের প্রথমে চট্টগ্রাম এনে, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের টেকনাফে নিয়ে আসে তারা। পরে টেকনাফ থেকে ধাপে ধাপে তাদের মালয়েশিয়াগামী মাছ ধরার ট্রলারে উঠানো হয়।

ট্রলারে উঠানোর পর থেকেই যাত্রীদের বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো দালালরা। নির্যাতন ও অনাহারে যাত্রীদের মধ্যে কোন যাত্রী গুরুতর অসুস্থ বা মৃত্যুবরণ করলে তাদের সাগরে ছুড়ে ফেলা হতো।

টাঙ্গাইল র‍্যাব ১২ এর সিপিসি ৩ নং কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, গত ১২ মার্চ তারিখে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে মো: আনিসুর রহমান ও একই উপজেলার বাগারাড়ী গ্রামের মৃত নাজিম উদ্দিনের ছেলে ফজলু র‍্যাব কার্যালয়ে এসে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগে তারা জানায়, প্রায় ২মাস পূর্বে মো: আনিসুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (১৭) তার বাবাকে মোবাইলে ফোন করে জানায়, মো: ইউনুছ আলী নামের এক ব্যক্তি মানব পাচারকারী দলের সদস্যদের সহায়তায় তাকে ট্রলারযোগে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাঠানোর নাম করে কক্সবাজার নিয়ে যায়।

পরে মোঃ ইউনুছ নামের ওই মানব পাচারকারী দলের সদস্য তার (আনিসুরের) মোবাইল ফোনে জানায়, তার ছেলে জাহাঙ্গীর মালয়েশিয়ার কাছাকাছি আছে। এখন ২লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করলে তার ছেলেকে মালয়েশিয়া ঢুকতে দিবে।

নতুবা তার ছেলেকে সাগরে ফেলে দেয়া হবে। এ সময় মোবাইল ফোনেই জাহাঙ্গীরকে মারধর ও কান্নার শব্দ শুনিয়ে টাকা পরিশোধ করার জন্য চাপ দিতে থাকে। পরে আনিছুর রহমান র্যা ব-১২ কে বিষয়টি জানায়।

পরে র‍্যাব-১২, টাঙ্গাইল এক একটি বিশেষ আভিযানিক দল গত ২২ মার্চ  তারিখ ভোর রাতে টাঙ্গাইল মডেল থানাধীন চৌবাড়ীয়া গ্রাম থেকে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রুবেল নামের একজন মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে ৪টি পাসপোর্ট এবং ১১টি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করে।

পরে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত রুবেল জানায়, সে মোঃ ইউনুছ ও সহিদুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তির সহায়তায় কক্সবাজার হয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া লোক পাঠিয়ে থাকেন।

রুবেলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শহিদুল ইসলামকে গত ২২ মার্চ একই এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শহিদুল জানান, তার কাজ হলো স্থানীয়ভাবে লোক সংগ্রহ করে ইউনুছকে জানানো এবং ইউনুছের বোন জামাই শওকতের মাধ্যমে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেয়া।

পরে শহিদুল এর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে টাঙ্গাইল শহর থেকে জাফর মুন্সীর ছেলে মোঃ শওকতকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শওকতের বাসা তল্লাশী করে মানব পাচারকারী দলের সদস্যদের নিকট প্রেরিত ১ কোটি টাকারও বেশী অংকের লেন-দেন সম্পর্কিত ব্যাংক রশিদ পাওয়া যায়।

শওকতের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ২২ মার্চ বিকেলে চট্টগ্রাম অলংকার মোড়ে থেকে  আবু মোহাম্মদ এবং পিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়।

আবু মোহাম্মদ ও পিন্টুকে গ্রেফতার করার সময় তাদের হেফাজত হতে সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া প্রেরণের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ১২ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আবু মোহাম্মদ ও পিন্টুর কাছ থেকে জানা যায়, সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী যে সকল লোক সারাদেশ থেকে চট্টগ্রাম আসেন তাদের তারা গ্রহণ করেন এবং টেকনাফে অবস্থানকারী কালামের নির্দেশনা অনুযায়ী আনোয়ার নামক ব্যক্তির মাধ্যমে সকল লোক টেকনাফ পাঠান।

গ্রেফতারকৃত আবু মোহাম্মদ ও পিন্টুর দেয়া তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম থেকে ১২ জন মালয়েশিয়াগামী যাত্রীকে মাইক্রোবাসযোগে টেকনাফে প্রেরণের সময় চট্টগ্রাম কর্ণফুলী ব্রীজ এলাকা হতে ২২ মার্চ আনোয়ার নামক এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আনোয়ার জানান, অবৈধপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য যে সকল লোক আসেন তাদের সবাইকে কালামের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রহণ করে টেকনাফে প্রেরণ করে থাকেন।

গ্রেফতারকৃত আনোয়ার ও ১২ জন যাত্রীকে সঙ্গে করে উখিয়া থানাধীন রাবেতা নামক স্থানে পৌছে মাহমুদুল নামক একজন লোকের নিকট যাত্রীদের হস্তান্তরের ফাঁদ পেঁতে ২২ মার্চে মাহমুদুলকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত মাহমুদুল বলেন, টেকনাফ শাহ পরীর দ্বীপ এ অবস্থান করা কালামের নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রীদের হামিদুল নামের একজন ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করা হবে। গ্রেফতারকৃত মাহমুদুলকে সঙ্গে নিয়ে টেকনাফের ভাঙ্গা বিল্ডিং নামক স্থানে পৌঁছলে হামিদুল হক নামক এক ব্যক্তি যাত্রীদের গ্রহণ করার জন্য এগিয়ে আসলে তাকে  গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত উপরোক্ত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্য মতে মালয়েশিয়া পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা হতে ২৩ মার্চ (সোমবার) ভোরে  মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম মূূূল হোতা ইউনুছকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের পর ইউনুছের কাছ থেকেও পাওয়া যায় অনেক তথ্য। ইউনুস জানান, তিনি কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন শাহ পরীর দ্বীপ এ অবস্থিত জনৈক কালাম ও আলী এবং মালয়েশিয়ায় অবস্থিত জিয়ার মাধ্যমে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠিয়ে থাকেন। অভিযোগকারীদের সন্তানদের তিনি উক্ত মানব পাচারকারীদের মাধ্যমে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছেন।

তবে তারা পৌঁছেছে কি না তা তার জানা নেই। লোক ট্রলারে উঠিয়ে দেয়ার পর টাকা নেয়ার নিয়ম, লোক মরে গেলেতো টাকা আদায় করা যাবে না। তাই তিনি অভিযোগকারীদের টাকা দেয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন এবং ট্রলারে থাকা মোবাইল ফোনে অভিযোগকারীদের ফোন করে ছেলেকে মারধর করে কান্নার শব্দ শুনিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছেন।