ম্যাডাম বললে সিটি নির্বাচনে লড়বেন সাদেক হোসেন খোকা

SHARE

khokaচিকিৎসার জন্য কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করলেও দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া চাইলে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা।

স্থানীয় সময় সোমবার বিকালে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে একথা জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খোকা।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ম্যাডাম যদি নির্দেশ দেন তাহলে অবশ্যই সে নির্দেশ পালন করব। তবে সেটি নির্ভর করবে চিকিৎসকের সর্বশেষ পরামর্শের ওপর। আমার শরীর যদি পারমিট করে তাহলে ম্যাডামের নির্দেশ পালনে সচেষ্ট থাকব।

বিএনপির ঢাকা মহানগরের সাবেক আহ্বায়ক খোকা পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের বাসিন্দা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ঢাকার মেয়র নির্বাচিত হয়ে মেয়াদ পূর্তির পরেও প্রায় চার বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগে ভাগ হওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় পড়েছেন অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ মেয়র।

তিনি বলেন, এর আগেও আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। এখনও অনীহা নেই। তবে সব কিছু নির্ভর করছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর।

তবে এখন সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেওয়ার পিছনে সরকারের অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করেন সাদেক হোসেন খোকা।

বেগম জিয়ার নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে দিশেহারা শেখ হাসিনার সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আয়োজন করে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে। কারণ সরকারের দমন-পীড়নে জনগণের কাছে থেকে তারা একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, বলেন তিনি।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে গত আড়াই মাস ধরে সারা দেশে লাগাতার অবরোধ চালিয়ে আসছে বিএনপি-জামায়াত জোট।

এরইমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৮ এপ্রিল তিন সিটি করপোরেশনে ভোটের দিন রাখা হয়েছে; মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ২৯ মার্চ পর্যন্ত।

বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো নির্বাচনে কাউকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করা না হলেও দলের কয়েক নেতার কথায় সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার আভাস মিলেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সোমবার আইনজীবীর মাধ্যমে মনোয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন কারাবন্দি বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু। পুরান ঢাকার সাবেক এই সাংসদ পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত।

‘বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি’র ব্যানারে সাদেক হোসেন খোকা নিউ ইয়র্কে ওই সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও তার পাশে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাদের দেখা যায়।

লিখিত বক্তব্যে নিজের শারীরিক অবস্থা ও  চিকিৎসা নিয়ে খোকা বলেন, আপনারা জানেন যে, একটি দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বিগত কয়েক মাস যাবত চিকিৎসার প্রয়োজনে আমাকে এই দূরদেশে অবস্থান করতে হচ্ছে।

ঐকান্তিক ইচ্ছা সত্ত্বেও কেবলমাত্র হাসপাতাল-ডাক্তারের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে থাকার বাধ্যবাধকতার কারণে জাতির এই ‘দুর্দিনে দেশবাসীর বাঁচার’ লড়াইয়ে আমি সশরীরে অংশ নিতে পারছি না।

গত প্রায় ১৫ দিন ধরে নিখোঁজ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে অবিলম্বে তার পরিবারের কাছে ‘ফিরিয়ে’ দেওয়ার দাবি জানান খোকা।

ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে অজ্ঞাত স্থান থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে অবরোধের পাশাপাশি হরতালের ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিবের খোঁজ না পাওয়ার কথা বলছে তার পরিবার।

পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহ উদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয়েছে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ নাকচ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে তাকে আটক করতে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সাদেক হোসেন খোকা বলেন, সালাহ উদ্দিনকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে ময়লার বস্তার সঙ্গে পাচার করে দেয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সবাই হতবাক হয়েছে।

একজন নাগরিক তথা বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতার জীবন নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ধরনের অমানবিক ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ নিষ্ঠুর মন্তব্যে সমগ্র দেশবাসী হতবাক হয়েছে।আমাদের প্রশ্ন- প্রধানমন্ত্রীর কাছে যদি এ ধরনের কোনো তথ্য থেকেই থাকে তাহলে তিনি সময়মত ব্যবস্থা নেননি কেন?

সরকারের বিরুদ্ধে গুম’ ও ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতা খোকা বলেন, বর্তমানে দেশে আইনের শাসনকে পুরোপুরি বিপন্ন করে দেওয়া হয়েছে কথিত ক্রসফায়ার আর বন্দুকযুদ্ধের নামে। এর বিপরীতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে জবরদখলে নিয়ে দেশবাসীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ভয়ঙ্কর জুলুমবাজীর এক ‘বেআইনি শাসন’।

অবরোধে পেট্রোল বোমা হামলার জন্যও সরকারের দিকে অভিযোগ তুলেছেন সাদেক হোসেন খোক, যদিও হাতবোমা বানানো ও ছোড়ার সময় বিস্ফোরণে কয়েক বিএনপি-জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক হাতবোমা, পেট্রোল বোমাসহ বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের অনেকে ধরা পড়েছেন।

খোকা বলেন, একদিকে সরকারের নিয়োজিত সন্ত্রাসী ও গোয়েন্দা এজেন্টদের দিয়ে যাত্রীবাহী যানবাহনে ‘পেট্রোল বোমা মেরে’ দেশবাসীর ন্যায্য আন্দোলন-লড়াইকে সন্ত্রাসী তৎপরতা  হিসাবে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে জনগণের বিরুদ্ধেই এক অকল্পনীয় ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানোর’ কাজে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাদের মধ্যে  আব্দুল লতিফ সম্রাট, গিয়াস আহমেদ, শরাফত হোসেন বাবু, জিল্লুর রহমান, আব্বাস উদ্দিন দুলাল, মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন