আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ভবিষ্যৎ নেতা নির্ধারণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। বর্তমান আমির বয়োবৃদ্ধ শাহ আহমদ শফী চট্টগ্রাম নগরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার বিকেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংগঠনের মজলিসে শূরার একটি অংশ আমির হিসেবে দেখতে চায় শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে। আরেকটি অংশের পছন্দ বর্তমান মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীকে। আবার আরেকটি পক্ষ আমির হিসেবে চায় দলের প্রভাবশালী নায়েবে আমির মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে। এই তিন পক্ষের একটি পক্ষের সখ্য আছে জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে। একটি অংশ সুসম্পর্ক বজায় রাখছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার হাটহাজারীতে হেফাজত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর পক্ষে সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক
ইসলামাবাদী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এতে হেফাজতের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে_ রাজনৈতিক সহিংসতা ও ক্রসফায়ারে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে দেশের সব মাদ্রাসা ও মসজিদে নিয়মিত দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা করা।
হেফাজতের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে সম্প্রতি মাওলানা আজিজুল হক বলেন, ‘আহমদ শফী যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এ পদ নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। তবে তার অবর্তমানে কে হেফাজতের হাল ধরবেন তা নির্ধারণ করবে মজলিসে শূরার সদস্যরা।’ আমির পদে একাধিক আগ্রহী ব্যক্তি থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগঠনে উত্তরাধিকার সূত্রে আমির হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এলেম, বয়স, আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও শারীরিক যোগ্যতা বিবেচনা করে আমির নির্ধারণ করবেন মজলিসে শূরার সদস্যরা।’ আমির নির্ধারণে হেফাজতে ইসলামে কোনো প্রতিযোগিতা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
জানা গেছে, শাপলা চত্বরের সমাবেশ ও নির্বাচন ইস্যু নিয়ে গত এক বছর ধরেই হেফাজতের নেতাদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। বিএনপির চলমান আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিয়েও আছে বিভক্তি। হেফাজতের একটি অংশ বিএনপি ঘোষিত হরতাল-অবরোধে একাত্মতা পোষণের পক্ষে। এ অংশই সম্প্রতি সুদ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য ও হিজাব পরা নিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে তাদের মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করার দাবি জানায়। এমনকি হেফাজতকে দিয়ে হরতালেরও ঘোষণা দিয়েছিল তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা হেফাজতের আরেকটি অংশের তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত আর বাস্তবায়ন হয়নি এ ঘোষণা। বর্তমান আমির শাহ আহমদ শফীও রাজনৈতিক ইস্যুতে হেফাজতকে জড়ানোর বিপক্ষে।
সংগঠনের একটি অংশ মধ্যপন্থি হলেও হেফাজতে ইসলামের অধিকাংশ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ আছে বিএনপি ও জামায়াতের। এ অংশের নেতৃত্বে আছেন গ্রেনেড বিস্ফোরণের আসামি ও হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি ইজহার। তিনি পলাতক থাকায় সক্রিয় আছেন দুই যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দিন রুহী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ। ৫ জানুয়ারি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের একজন হাটহাজারী থেকে ও আরেকজন রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচন করতেন বলে গুঞ্জন ছিল।