অ্যান্টিগুয়ার ঝকঝকে নীল জলে ভাসছিল ৯ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডের সুপারইয়ট আলফা নিরো। গত সপ্তাহে ক্যারিবীয় উপকূলরেখায় দর্শনার্থীরা প্রমোদতরীটিকে নোঙর করা অবস্থায় দেখেছিলেন। কিন্তু অল্প কয়েকজন পর্যটকই বুঝেছিলেন, কালো মসৃণ বহিরাবরণের এমন প্রমোদতরী দেখতে পাওয়া আসলেই অত্যন্ত ভাগ্যের ব্যাপার!
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রুশ বিলিয়নিয়ার আন্দ্রে গুরিয়েভের মালিকানাধীন প্রমোদতরীটি সামুদ্রিক ট্র্যাফিক শনাক্তে ব্যবহৃত বিশ্বব্যাপী ট্র্যাকিং মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
গত সপ্তাহান্তে পর্যবেক্ষকেরা দেখেছেন, যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রুশ অলিগার্কদের সঙ্গে সম্পর্কিত কমপক্ষে ছয়টি সুপারইয়ট ট্র্যাকিং সিস্টেম থেকে উধাও হয়ে গেছে। এর মধ্যে অ্যান্টিগুয়ার জলে ভাসা ইয়টটি একটি।
ইউক্রেন আক্রমণের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রুশ ধনীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। ফলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তাঁদের সম্পদ অনুসন্ধানের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে দক্ষিণ ফ্রান্স থেকে ফিজি পর্যন্ত প্রায় ২ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের অন্তত ১৩টি জাহাজ এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে। এর পরে সুপারইয়ট আমেদিয়া জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র। এটি বিলিয়নিয়ার স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুলেমান করিমভের মালিকানাধীন বলে জানা যায়।
বিশ্লেষকেরা দেখেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত ইয়টগুলোর সঙ্গে ট্র্যাকিং সিস্টেমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। বড় জাহাজ ট্র্যাক করার জন্য ব্যবহৃত স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সিস্টেমটি বৈধ কারণে বন্ধ করা যেতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কিছু জাহাজ শনাক্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে এটি করছে।
মেরিটাইম এবং অ্যাভিয়েশন মার্কেট ইন্টেলিজেন্স ফার্ম ভেসেল ভ্যালুর সংকলিত এআইএস ডেটার একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বেশ কয়েকটি সুপারইয়ট শনাক্তকরণ সিস্টেম থেকে গায়েব হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
৭২ মিটার দৈর্ঘ্যের সুপারইয়ট ক্লাইও। শিল্পপতি ওলেগ দেরিপাস্কা এটির মালিক। ইউক্রেন আক্রমণের পর ভারত মহাসাগর থেকে তুরস্কে যাত্রা করেছিল ইয়টটি। গত ১৮ এপ্রিল এটির সর্বশেষ অবস্থানটি ছিল কৃষ্ণ সাগরে, রুশ বন্দর সোচি এবং নভোরোসিস্কের সীমার মধ্যে।
৭০ মিটার গ্যালাকটিকা সুপার নোভা। লুক অয়েলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভ্যাগিত আলেকপেরভ এটির মালিক। জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত করা হয় ২ মার্চ ক্রোয়েশিয়ার উপকূলে।
১৪০ মিটার ওশান ভিক্টোরি, মালিক রুশ অলিগার্ক ভিক্তর রাশনিকভ। ১ মার্চ মালদ্বীপে নোঙর করা অবস্থায় এটি সর্বশেষ সংকেত পাঠিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞায় থাকা একজন রুশ অলিগার্কের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি সুপারইয়টের ক্রুদের একজন গত সপ্তাহে সংবাদমাধ্যম অবজারভারকে বলেছিলেন, ‘আমাদের এআইএস বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আমরা পাওয়ার প্লাগের স্ক্রুগুলো খুলে ফেলেছি।’
খাত সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, বর্তমানে সমুদ্রে প্রায় ৯ হাজার ৩০০টি সুপারইয়ট রয়েছে, যার মূল্য ৫০ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি। এই বহরের আনুমানিক ১০ শতাংশ রাশিয়ানদের মালিকানাধীন।