একজন উপস্থাপিকা এবং আমি

SHARE

ইমারত হোসেন ইমু

সম্ভবত ২০১৫ সাল অফিসে ঢুকে দেখি কনফারেন্স রুমে শ্যূটিং চলতেছে। মধ্য বয়স্ক শাড়ি পরা এক নারী ক্যামেরার সামনে কিছু একটা বলছে। আমি দেখেও না দেখার ভান করে আমার রুমে চলে আসলাম। কাজ শেষে ঐ নারীর সাথে আমার সহকর্মী অনি ভাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। স্বাভাবিক ভাবে আমি মাথা নেড়ে বিদায় জানাই। চ্যানেল আই ছেড়ে এটিএন এ আসার পরও আমার ভাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরের দিন সকালে এসে ইউটিউব সার্চ করে শ্যূটিং কারীদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। তবে দুই একজন ছাড়া কারোরই তেমন কোনো তথ্য পাওয়া গেলো না। তবে ঐ নারীর কিছু ভিডিও দেখে বুঝলাম আসলে সে মধ্য বয়স্ক নারী না, অল্প বয়সী সম্ভাবনাময় একজন উপস্থাপিকা। ঐ দিনের শাড়ি এবং মেকাপের কারনে বয়স্ক মনে হয়েছে। যাই হোক এটিএন লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হবে, আমি ঐ মেয়েটাকে দিয়ে উপস্থাপনা করানোর জন্য আমার স্যার মীর মোতাহার হাসান শরীফকে বললাম। স্যার আমার কথা অনুযায়ী মেয়েটাকে উপস্থাপনা করতে দিলো। আমি বসে বসে তার অসাধারণ বাচন ভঙ্গি লক্ষ করি, মেয়েটার ব্যবহারও অমায়িক। মনে হচ্ছিলো মেয়েটা ভালো একজন অভিভাবক পেলে একদিন অনেক বড় উপস্থাপিকা হবেন। আমি এটিএন লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন এর ফাউন্ডার এডিটর হওয়ায় উপস্থাপিকার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা কথা হলো। মনে মনে ভাবলাম আমাদের কালচারাল প্রোগ্রামে মেয়েটাকে নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। বয়সে আমার অনেক ছোট হওয়া সত্ত্বেও তাকে আমি আপা বলেই সম্বোধন করি। কারন আমাদের দেশে কোন মেয়েকে নিয়মিত প্রোগ্রামে সুযোগ করে দিলে নানা কথা রটতে থাকে, তাই শুরুতেই বড় বোন বানিয়ে ফেলি। এর মাঝে মেয়েটার সাথে আমাদের অফিসে দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে, কাজ নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। আমরা রামু ক্যান্টনমেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এটিএন বাংলায় লাইভ করবো, তাই আর্টিস্ট সিলেকশন হচ্ছে। উপস্থাপিকা হিসেবে এই মেয়েটাকে নিবো অনেকটা ফাইনাল। আমার সব সিলেকশন ঠিক থাকলো উচ্চ মহলের চাপে উপস্থাপিকা পরিবর্তন করতে হলো। সেদিন মনটা ভীষণ খারাপ হচ্ছিলো এই ভেবে, একজন সম্ভাবনাময় উপস্থাপিকাকে সুযোগ করে দিতে পারলাম না। তবে মেয়েটা তার নিজের চেষ্টা এবং যোগ্যতায় বিভিন্ন জায়গায় প্রোগ্রাম করে যাচ্ছে। ভারত থেকে শ্রেয়া ঘোষাল কে আনা হবে প্রোগ্রাম এর জন্য সব কিছু ফাইনাল করে ফেললাম। তবে প্রোগ্রাম এর আগের দিন রাত পর্যন্ত উপস্থাপিকা নিয়ে আলোচনা চলছে। আমাদের সাথে অন্য একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পার্টনার হওয়াতে মতের অমিল হচ্ছে। বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে মেয়েটাও আমাদের সাথে অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করছে। আমি খুবই নাছোড়বান্দা মেয়েটাকে দিয়ে উপস্থাপনা করাবোই। দফায় দফায় আলোচনা শেষে ফাইনাল হলো দুইজন যুগলবন্দী হয়ে উপস্থাপনা করবে। রাত তিনটার সময় মেয়েটাকে জানালাম আপনি আগামীকাল শ্রেয়া ঘোষাল এর প্রোগ্রামে উপস্থাপনা করবেন। মেয়েটা অসাধারণ উপস্থাপনা করে সবার হৃদয় জয় করলো। নিজের যোগ্যতা দিয়ে মেয়েটি আজ উপস্থাপনার স্বর্ণশিখরে পৌঁছেছে। আমি নিজেও অনেক জায়গায় তার নাম্বার দিয়ে প্রোগ্রামে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি, তবে কখনো মেয়েটিকে জানতে দিইনি। এরপর থেকে আমার অসংখ্য প্রোগ্রাম একসাথে সাফল্যের সাথে সম্পূর্ণ করেছি। টিভি খুললেই আজকাল সব টিভি চ্যানেলে তাকে প্রায়ই উপস্থাপনা করতে দেখা যায়। বর্তমানে তুমুল জনপ্রিয় উপস্থাপিকা হিসেবে বাংলাদেশের মিডিয়া অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বলা যেতে পারে এই সময়ের বাংলাদেশের অন্যতম সফল উপস্থাপিকা। তার নাম ডাক সব জায়গায়, গ্রহণ যোগ্যতাও অনেক বেশি, যাকে বলে সেলিব্রিটি উপস্থাপিকা। তবে আজও আমি তাকে বড় বোন করেই রেখেছি, আমি আপা ডাকি বলে অনেকেই তাকে আপা বলেই ডাকে, জাতীয় বড় আপা। তার মধ্যে কোন অহংকার নাই, যখন কোনো কাজে ডাকি ফ্রী থাকলেই ছুটে আসে, কৃতজ্ঞতাবোধ আছে বলেই আজ সে একজন শান্তা জাহান। আজ শান্তার জন্মদিনে না বলা অনেক কথা লিখে ফেললাম। শান্তা জাহান যত বড় উপস্থাপিকা হোক, সে আমার খুব পছন্দের ছোট বোন। শুধু এতোটুকো বলবো শান্তা জাহান তুমি স্বপ্নের সমান বড় হও, মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করো। শুভ জন্মদিন ছোট বোন শান্তা জাহান।