প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জেব্রা ক্রসিংয়ের বাইরে কারো মৃত্যু হলে কেউ দায় নেবে না। সে দায়িত্ব যে রাস্তা পার হবে তার। দরকার হলে প্রতিটি স্কুলে একজন শিক্ষককেই দায়িত্ব দিতে হবে ছুটি হলে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পার করে দেবে। শুধু চালককে দোষ দিলে হবে না, পথচারীকেও সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়া যাবে না।
আজ বুধবার ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২০’ উদযাপন উপলক্ষে বনানীতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক শুধু তৈরিই করিনি, সেই সড়ক নিরাপদ করারও চেষ্টা করেছি। কোথায় কোথায় সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে, কেন বেশি হচ্ছে সেসব নজর রেখেছি। মহাসড়কের যেখানে যেখানে দুর্ঘটনা হয়, সেই জায়গাগুলো নিরাপদ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার সাথে জেলা, উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। তবে সড়ক নির্মাণে নিরাপত্তার সঙ্গে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও যাতে ঠিক থাকে- সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে প্রচুর পরিমাণে সড়ক, সেতু, কালভাট নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব নির্মাণে যেন প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষ যাতে এসব থেকে উপকৃত হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চালকদের জন্য সড়ক পথে বিশ্রামাগার তৈরি করতে হবে। বাসে বিকল্প চালকের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ফিটনেসবিহীন যান চলাচল এবং ওভারটেকিংয়ের মতো অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গাড়ি চালকের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রামের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চালকরাও মানুষ তাদের যে বিশ্রাম বা আহারের প্রয়োজন রয়েছেন সে বিষয়ে সকলে নজর দেন কি না সন্দেহ, অনেকেই এ নিয়ে ভাবেন না। কাজেই, একজন চালক দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালাতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই একটু ঝিমুনি আসতে পারে আর তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। তাই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দূরপাল্লার গাড়ির চালকদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বিকল্প চালক না থাকায় অনেককেই অদক্ষ হেলপারের হাতে গাড়ি ছেড়ে দেয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে।’
শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েদের জন্য আমরা আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করেছি। ছাত্রছাত্রীদের চলাচলের জন্য ১৮৮টি গাড়ির ব্যবস্থা করেছি। বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করেছি তাদের গাড়ি লাগবে কি না। তারা অনেকেই ‘না’ বলেছে। স্কুলে অনেকে নিজের গাড়িতে করে আসে। স্কুলে এসে বলে, আমি ওই গাড়িতে করে এসেছি। বাসে গেলে তো সেটা বলতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্তানদের সুশিক্ষা দিতে হবে। সম্পদের অহমিকাবোধটা যেন না থাকে। সম্পদ থাকলেই সবকিছু করা যায় না, সবকিছু ভোগ করা যায় না। মহামারী করোনাভাইরাস আমাদের সেটা শিখিয়ে দিয়েছে। জানি না, কয়জন এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা ৬টি মেট্রোরেল করে দিচ্ছি। মেট্রোরেলগুলো চালু হলে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় যানজট কমে আসবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়ে গেছে। ফলে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। পরিবেশ ঠিক রাখতে কাপড়ের তৈরি মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। তাহলে বর্জ্যও কম তৈরি হবে। আমিও সেটাই ব্যবহার করছি।
এবার চতুর্থবারের মতো পালিত হচ্ছে নিরাপদ সড়ক দিবস। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর বান্দরবানে স্বামী নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। এর পর থেকে ইলিয়াস কাঞ্চন ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ নামে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন।
নিসচার আন্দোলনের ফল স্বরুপ ২০১৭ সালের ৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রীসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই বছর থেকেই বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়ে আসছে।