আফগানিস্তানে সেনা ঘাঁটিতে তালেবানের হামলায় নিহত ৫

SHARE

সরকার ও তালেবানের মধ্যে চলমান শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়ার মধ্যেই ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে আফগানিস্তান। মঙ্গলবার কাবুলের একটি মেটার্নিটি হাসপাতাল ও নানগারহারে এক শেষকৃত্যানুষ্ঠানে হামলার জন্য তালেবানকে দায়ী করেছে আফগান সরকার। এর পরই তালেবানদের ওপর সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেয়া হয়। অন্যদিকে সরকারের এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আফগান সেনাদের সমুচিত জবাব দেয়ার হুমকি দেয় তালেবান। এরই মধ্যে গতকাল তারা একটি সেনা ঘাঁটিতে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। খবর এএফপি।
আফগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল দেশটির পূর্বাঞ্চলের শহর গারদেজে একটি সেনা ঘাঁটিতে তালেবানরা ট্রাকবোমা হামলা চালিয়েছে। এতে নিহত হয়েছে অন্তত পাঁচ বেসামরিক নাগরিক। একই সঙ্গে পাঁচ সেনাসদস্যসহ আহত হয়েছে ১৯ জন। মূলত গত এক সপ্তাহ ধরেই দেশটিতে সরকার ও তালেবানদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি শান্তি আলোচনার স্বার্থে যে তুলনামূলক ‘নমনীয়’ অবস্থান নিয়েছিলেন, তা মঙ্গলবারের জোড়া হামলার পর বাতিল করেছেন। অনেকটা আক্রমণাত্মক মনোভঙ্গিতেই তিনি ফের তালেবানদের ওপর অভিযান চালুর জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। কিন্তু তার এ পদক্ষেপে তালেবানরাও তাদের অবস্থান স্পষ্ট জানিয়ে দেয়। মঙ্গলবারের হামলার দায় অস্বীকারের পাশাপাশি তারা জানায়, সেনাবাহিনীর যে কোনো ধরনের হামলা রুখে দিতে তারা প্রস্তুত।
পাকতিয়া প্রদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক বেলায়াত খান আহমাদজাই গতকাল সেনা ঘাঁটিতে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই ট্রাকবোমা হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছে, যার সবাই বেসামরিক নাগরিক। কিন্তু তালেবানের দাবি, পাঁচজন নয় মূলত মারা গেছে ১০ জন। তবে নিহতদের সবাই সেনাসদস্য। ওই হামলায় কোনো বেসামরিক মানুষ মারা যায়নি।
তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় গণমাধ্যমকে জানান, সরকারের পক্ষ থেকে আক্রমণাত্মক ঘোষণার পরই গতকাল কাবুল প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওই সেনা ঘাঁটিতে আত্মঘাতী হামলা পরিচালনা করা হয়। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বিস্ফোরকভর্তি ট্রাকটি সেনা ঘাঁটিতে পৌঁছানোর আগেই সেটিতে বিস্ফোরণ ঘটায়।
মূলত বেশ কিছুদিন ধরেই আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা নিয়ে দেনদরবার চলছিল। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তালেবান বন্দিদেরও মুক্তি দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবারের ন্যক্কারজনক হামলা পুরো প্রক্রিয়াকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ওইদিন এক বন্দুকধারী কাবুলের একটি মেটার্নিটি হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অন্তত ২৪ জন মানুষকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ছিল নবজাতক ও সেবিকা। এর পরই পূর্বাঞ্চলের প্রদেশ নানগারহারে একটি শেষকৃত্যানুষ্ঠানে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়। এতে মারা যায় আরো ৩২ জন। উভয় ঘটনা নিয়েই ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে হাসপাতালে নবজাতক ও মায়েদের মরদেহের ছবি হামলাকারীদের প্রতি সৃষ্টি করেছে তীব্র ঘৃণা। এ হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত ও জঘন্য সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। আর উভয় হামলার জন্যই তালেবানের পাশাপাশি আইএস জঙ্গিদের দায়ী করেছে আফগান সরকার।
এদিকে সরকার ও তালেবানের আগ্রাসী মুখোমুখি অবস্থানের কারণে দেশটির শান্তি প্রক্রিয়া ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মূলত গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন ও তালেবানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী আগামী এক বছরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে ধীরে ধীরে সব বিদেশী সেনা প্রত্যাহার করার কথা রয়েছে।