সংক্রমণের চূড়াতেও রাশিয়ায় লকডাউন শিথিলের ঘোষণা

SHARE
Info about RUSSIA

দেশ যখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চূড়ায় তখন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মহামারি মোকাবেলায় আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণা পর্যবেক্ষকদের অবাক করেছে৷
রাশিয়ার এখনো প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে৷ বর্তমান বিশ্বে যা সর্বোচ্চ৷ এছাড়া মোট আক্রান্তের সংখ্যায়ও দেশটি তালিকায় দুই নম্বরে উঠে গেছে৷ জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দেশটিতে আড়াই লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাদের উপরে আছে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র (১৪ লাখের বেশি)৷ তবে রাশিয়ার মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে রাখতে পেরেছে৷ দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু দুই হাজার ৩০৫ জন৷
দেশের এ অবস্থায় কেন সরকার বিধিনিষেধ শিথিল করছে তা নিয়ে অনেক নাগরিকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে৷ করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর টানা ছয় সপ্তাহ ধরে দেশটি লকডাউন হয়ে ছিল৷ মঙ্গলবার সরকার ঘোষিত ওই সাধারণ ছুটি শেষ হয়৷
সংক্রমণ এখন থেকে কম থাকার পরও তখন কেন সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল? দেশ এখন সংক্রমণের চূড়ায়, এ অবস্থায় কেন নিয়ম শিথিল হচ্ছে? এমন নানা প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষকসহ সাধারণ নাগরিকদের মনে ঘুরছে৷
এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যায় রাশিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আব্বাস গ্যালিয়ামোভ ডয়চে ভেলেকে বলেন, প্রেসিডেন্ট দেশকে পশ্চিমা দেশগুলোর পেছনে পড়ে যাওয়া থেকে আটকাতে চাইছেন৷
“ইউরোপের দেশগুলো এরই মধ্যে লকডাউন তুলে নিতে শুরু করেছে৷ তারা নিশ্চিতভাবেই সমস্যার সমাধান করেছে এবং জনজীবন আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে৷
“পুতিন বুঝতে পেরেছেন, যদি রাশিয়া তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারে তবে রুশ নাগরিকদের চোখে তিনি ছোট হয়ে যাবেন৷”
ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় রাশিয়ায় লকডাউন চালিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন বলেও মনে করে এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী৷ বলেন, রাশিয়ায় জীবন যাত্রার মান তাদের চেয়ে নিম্ন এবং বেশিরভাগ রুশ নাগরিকের হাত কোনো সঞ্চয় নেই৷
ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় করোনা ভাইরাস যখন থাবা বিস্তার করছিল তখন পুতিন নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে জনগণের কাছে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন বলেও সমালোচনা করেন গ্যালিয়ামোভ৷
বলেন, “পুতিন রাশিয়ার জনগণকে এটা বিশ্বাস করাতে চেয়েছিলেন যে, পশ্চিমের মানুষদের তুলনায় তারা ভালো আছেন৷ বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে এমনভাবে পশ্চিমা দেখগুলোর খবর প্রচার করা হয়েছিল যেন সেখানে চরম বিপর্যয় চলছে৷
“খবরে স্পেনের অবস্থা অত্যন্ত নাটকীয় ভাবে বলা হত৷ বলা হত, যুক্তরাষ্ট্রে চারিদিকে মৃতদেহ পড়ে আছে৷ তিনি নিজেই নিজের ওই প্রপাগান্ডার ফাঁদে আটকা পড়েছেন৷ এখন তিনিও বাস্তবতা এবং পরিসংখ্যানকে উপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন৷ এখন লকডাউন শিথিল করার পর সংক্রমণ ও মৃত্যু না বাড়লেই বাঁচি৷”
পুতিন অবশ্য লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্তে কিছুটা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন৷ বিধিনিষেধ শিথিল হবে নাকি হবে না সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার তিনি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন৷ তাঁরাই নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন৷
যদিও রাজধানী মস্কোতে মে মাসের শেষ পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত থাকবে৷
মস্কোর বাসিন্দাদেরই প্রথম ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ এখন হয়তো তারাই সবার শেষে ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি পাবেন৷ কারণ, মস্কোতে প্রতিদিনই নতুন সংক্রমণের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে৷
লকডাউন শিথিল করা হলেও ৬৫ বা তার বেশি বয়সের মানুষ এবং অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার কারণে যারা ঝুঁকিপূর্ণদের দলে তাদের অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে৷ সারা দেশে সব মানুষকে বাইরে বের হতে হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷