রাজধানীর ওয়ারীতে সিলভারডেল স্কুলের নার্সারির ছাত্রী সামিয়া আফরিন সায়মাকে ধর্ষণের পর খুনের দায়ে এই মামলার একমাত্র আসামি হারুন-অর-রশীদকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার (৯ মার্চ) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক কাজী আবদুল হান্নান এই রায় দেন।
ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে। আসামি হারুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আসামি বর্বরতার পরিচয় দিয়েছেন। একটি শিশুকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করায় আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য। আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। সেক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টেও অনুমোদন নিতে হবে। তবে আসামি ইচ্ছে করলে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। ট্রাইব্যুনাল মামলার নথি, মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য দ্রুত হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত বছর ৫ জুলাই সন্ধ্যার পর ওয়ারীর একটি বাড়ির নয় তলায় শিশু সায়মার লাশ পাওয়া যায়। ওই বাড়ির ষষ্ঠ তলায় সায়মা তার পরিবারের সঙ্গে থাকতো। লাশ পাওয়ার আগে সে তার মাকে ওপরের তলায় খেলতে যাচ্ছিল বলে জানায়। কিন্তু সে ফিরে না আসায় তার খোঁজ করতে করতে নবম তলায় তার গলায় রশি পেঁচানো অবস্থা পাওয়া যায়।
ওই ঘটনায় সায়মার বাবা আবদুস সালাম বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় মামলা করেন। পুলিশ গত বছর ৭ জুলাই কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকা থেকে হারুন অর রশিদকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন হারুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে সায়মাকে হত্যার দায় স্বীকার করেন।
তিনি জবানবন্দিতে বলেন, এক মাস আগে থেকে তার খালাত ভাই পারভেজের বাসায় ছিলেন। ওয়ারীতে যে ভবনে ঘটনা ওই ভবনের সাততলায় পারভেজ থাকেন। ঘটনার আগে ভবনের লিফট দিয়ে নামার সময় সায়মার সঙ্গে তার দেখা হয়। লিফটইে তিনি সায়মার সঙ্গে খারাপ কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। পরে ছাদ দেখার কথা বলে তিনি সায়মাকে ছাদে নিয়ে যান। ছাদে নিয়ে সায়মাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু সায়মা চিৎকার করতে থাকে। এরপর মুখ চেপে ধরে সায়মাকে ধর্ষণ করেন তিনি।
ধর্ষণের একপর্যায়ে সায়মা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখন হারুন ভয় পান। সায়মার জ্ঞান ফিরলে সে মানুষের কাছে ঘটনা বলে দেবে। এ কারণে যাতে ঘটনা প্রকাশ না পায় সেজন্য তার গলায় দড়ি পেঁচিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। পরে সায়মাকে টেনে নিয়ে রান্না ঘরের সিংকের নিচে ফেলা হয়। এরপর পালিয়ে যান হারুন।
এ মামলায় সায়মার বাবা, মা, ভাই-বোন, প্রতিবেশী, সায়মার ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক, আসামির জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট, তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন সাক্ষ্য দেন।