পাওনা টাকার জন্য ২৮ বছর ধরে আদালতে ঘুরছেন ইসমাইল!

SHARE

‘বিচার চেয়ে কী হবে? গরিবের পক্ষে কোনো বিচার নাই। গরিবরা অন্যায় করলে শাস্তি হয়। কিন্তু গরিবের প্রতি অন্যায় কেউ দেখে না।’ কথাগুলো কালের কণ্ঠ’র কাছে বলছিলেন, রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের বাসিন্দা মো. ইসমাইল।

কামরাঙ্গীর চরের ভূমি অধিগ্রহণের টাকা আদায়ের মামলা করে ২৮ বছর ধরে আদালতে ঘুরছেন ইসমাইল। বোন মর্জিনা বেগমের পক্ষে ওই মামলার তদবির করেন ইসমাইল। ১৯৯১ সালে এই মামলা দায়ের করা হয়। তিনি জানান, আদালতে ঘুরতে ঘুরতে হয়রান অবস্থা। এখন অসহায় লাগছে।

ইসমাইল বলেন, আর ঘুরতে ভালো লাগে না। ইচ্ছা করছে এখন দাবি ছেড়ে দিই। আর কত বছর এভাবে ঘুরতে হবে, তা তিনি অনুমানও করতে পারছেন না বলে জানান। তিনি জানান, আদালত তাঁদের পাওনা টাকা বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ১৫ বছর আগে। কিন্তু প্রশাসন ওই নির্দেশ মানছে না। টাকা তো মিলছেই না, উল্টো আদালতে ঘুরে ঘুরে টাকা-পয়সা খরচ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এখন বড় অসহায় আমরা।’

ইসমাইল প্রশ্ন করেন, আদালতের আদেশ মানে না প্রশাসন। এ কেমন বিচার? তাহলে আদালত, মামলা-মোকদ্দমার দরকার কী?

ইসমাইলের কথা থেকে জানা গেল তাঁদের মামলার কাহিনি। তাঁর আইনজীবী হাফিজুর রহমানের কাছে থাকা মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, কামরাঙ্গীর চরের বেড়িবাঁধ নির্মাণের সময় ওই এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। রাজধানীর লালবাগ থানার রাজ নারায়ণ ধর রোডের বাসিন্দা আবদুল খালেকের ৩৩ শতাংশ জমি ১৯৮৯ সালে অধিগ্রহণ করা হয় (এলএ কেস নম্বর ৪২/৮৯-৯০)। অধিগ্রহণসংক্রান্ত নোটিশও মালিককে দেওয়া হয়। অধিগ্রহণ করা জমির মূল্য ও ক্ষতিপূরণ বাবদ মোট ১২ লাখ ১২ হাজার ৪৯৯ টাকা ৯৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু জমির মালিক আবদুল খালেক মনে করেন, তাঁকে জমির বদলে যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৯৯১ সালে একটি সালিসি রিভিশন দায়ের করেন (রিভিশন নম্বর ২৩৫/৯১)। ওই রিভিশন শুনানি শেষে আবদুল খালেকের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। এদিকে ১৯৯৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জমির মালিক আবদুল খালেক প্রথম কিস্তির টাকা তিন লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৩ টাকা ৭৫ পয়সা গ্রহণ করেন। এরপর আবদুল খালেক মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মেয়ে মর্জিনা বেগম আবদুল খালেকের উত্তরাধিকারী চারজনের পক্ষে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ ও আরবিট্রেশন আদালতে জমির মূল্য ও ক্ষতিপূরণ বাড়াতে ১৯৯৩ সালের ১১ অক্টোবর আরবিট্রেশন রিভিশন মামলা দায়ের করেন (নম্বর ১৫০/৯৩)। এদিকে ওই মামলা চলাকালেই জেলা প্রশাসন দীর্ঘদিন চলার পর ওই মামলায় যুগ্ম জেলা জজ ও আরবিট্রেশন আদালত ২০০৪ সালের ১৪ জুন রায় দেন। রায়ে মর্জিনা বেগম ও অন্যদের জমির মূল্য ও ক্ষতিপূরণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এক কিস্তির টাকা নেওয়ার পর বাকি আট লাখ ৬৬ হাজার ৫৩৬ টাকা ২২ পয়সা বাদীকে দিতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে (ডিসি-এলএ) নির্দেশ দেওয়া হয়।

মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরও জেলা প্রশাসক জমির মালিকদের টাকা দেননি। আর এ কারণে ২০০৫ সালের ৩০ জুলাই মর্জিনা ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ ও আরব্রিটেশন আদালতে টাকা আদায়ের জন্য ডিক্রিজারি মামলা করেন। ১২ বছর পার হয়ে গেছে, জেলা প্রশাসক ওই টাকা দেননি। আদালত থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও দেওয়া হয়; কিন্তু টনক নড়ে না কোনো জেলা প্রশাসকের।

ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এলএ শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না

করার শর্তে বলেন, এ রকম অনেক মামলা, মামলার আদেশ রয়েছে। নথি দেখতে হবে। তারপর জানা যাবে কেন মর্জিনা বেগমরা টাকা পাননি।