হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন ওয়াসার এমডি

SHARE

বুড়িগঙ্গা নদীতে পড়া ওয়াসার সকল সুয়ারেজ লাইন সরাতে ঢাকা ওয়াসাকে ৬ মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওয়াসার ৬ মাস সময় চেয়ে করা আবেদনে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে আগামী একমাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বুড়িগঙ্গায় ঢাকা ওয়াসার কোনো সুয়ারেজ পতিত হয়নি বলে গত ১৮ জুন ওয়াসার পক্ষ থেকে লিখিতভাবে দেওয়া অসত্য তথ্যের জন্য হাইকোর্টের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। আইনজীবীর মাধ্যমে এ আবেদন করা হয়েছে। তবে আদালত এ আবেদন রেখে দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, সুয়ারেজ লাইন সরানোর ওপর নির্ভর করে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।

এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া বুড়িগঙ্গার দুই তীরে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে বর্জ বুড়িগঙ্গায় পড়ছে সেইসব প্রতিষ্ঠান আগামী এক মাসের মধ্যে বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আদালত আগামী ৮ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।

বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রবিবার এ আদেশ দেন। আদালতে বুড়িগঙ্গায় পড়া সুয়ারেজ লাইন সরাতে ৬ মাস সময় চেয়ে ওয়াসার করা এক আবেদনে এ আদেশ দেন আদালত। এই মামলা পরিচালনার জন্য ওয়াসার তার আইনজীবী বদল করেছে। ব্যারিস্টার এ এম মাছুমকে বাদ দিয়ে অ্যাডভোকেট উম্মে সালমাকে নিয়োগ দিয়েছে ওয়াসা। ব্যারিস্টার মাসুম শুনানিতে ঠিকমতো উপস্থিত না থাকায় আদালতের ক্ষোভ জানানোর পর নতুন আইনজীবী নিয়োগ দিলো ওয়াসা। আজ ওয়াসার পক্ষে সময়ের আবেদন করেন অ্যাডভোকটে উম্মে সালমা। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আমাতুল করিম।

গত ১৮ জুন ওয়াসার দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বুড়িগঙ্গায় ওয়াসার কোনো সুয়ারেজ লাইন নেই। কিন্তু এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন এলাকায় ৬৮টি স্থান দিয়ে দূষিত বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলা হচ্ছে। এরমধ্যে ৫০টি ওয়াসার সুয়ারেজ লাইন। এই দুই প্রতিবেদন দেখার পর গত ১৭ নভেম্বর ওয়াসার এমডিকে শোকজ করেন হাইকোর্ট। শোকজ নোটিশ আদালতের আদেশ অমান্য করা এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। এ অবস্থায় ওয়াসার এমডির একটি জবাব ২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। এতে বলা হয়, বুড়িগঙ্গায় ৬৭টি স্থান দিয়ে বর্জ্য পড়ছে। তারমধ্যে ওয়াসার লাইন ১৬টি। ওয়াসার এই দুই ধরণের প্রতিবেদনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। এ অবস্থায় ওয়াসা ওইদিন তাদের ২ ডিসেম্বর দেওয়া প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে নেয় এবং গতকাল নতুন করে জবাব দাখিল করে। এই জবাবে ১৮ জুনের প্রতিবেদনের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া হয়। একইসঙ্গে সুয়ারেজ লাইন সরাতে ৬ মাস সময় চাওয়া হয়। এ প্রেক্ষাপটে আদালত উল্লেখিত আদেশ দেন।

আজ শুনানিকালে ওয়াসার আইনজীবী বলেন, ঢাকা ওয়াসাও চায় বুড়িগঙ্গার পানি পরিস্কার ও দূষনমুক্ত রাখতে।

এসময় আদালত বলেন, বুড়িগঙ্গার পানি পরিস্কার ও দূষনমুক্ত রাখতে ওয়াসার যদি ইচ্ছাই থাকতো তাহলে এভাবে সুয়ারেজ লাইন রাখা হতো না। আর বুড়িগঙ্গার পানির পরিবর্তে পদ্মা ও মেঘনার পানি এনে ঢাকায় সরবরাহ করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করতো না। আসলে যত প্রকল্প, ততই টাকা উড়ে যাবার সুযোগ-এই কারণে হয়তো এমনটি করা হয়।

মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিট মামলায় হাইকোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর থেকে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। এছাড়া নদীর পানি যাতে দুষিত না হয় সেজন্য সব ধরণের বর্জ্য ফেলা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রায়ের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এখনও কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে তরল বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। যা নদীর পানিকে দূষিত করছে। যা এইচআরপিবি’র পক্ষ থেকে আদালতের নজরে আনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুনানি চলছে।