পিস্তল, ইয়াবা থেকে যৌন উত্তেজক ওষুধ- সবই আছে কাউন্সিলর মনজুর বাসায়

SHARE

রাজধানীর টিকাটুলী এলাকার রাজধানী সুপারমার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপারমার্কেটের ‘স্বঘোষিত’ সভাপতি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মনজু। এই বেপরোয়া চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। সম্প্রতি রাজধানী সুপারমার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপারমার্কেটে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে প্রতিটি ৩৫ বর্গফুট আয়তনের দোকান নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মনজু। সেখানে গতকাল ওই সব দোকান নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। এর পরই মনজুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাব টিকাটুলীর অফিসে অভিযান চালিয়ে কাউন্সিলর ময়নুল হক মনজুকে গ্রেপ্তার করে। পরে হাটখোলা রোডে তাঁর বাসায় অভিযান চালায়। এসব স্থান থেকে দুটি পিস্তল, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। বাড়ি থেকে মনজুর গাড়িচালক সাজ্জাদকেও গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এর আগে গত বুধবার রাতে কাজী রনি নামে রাজধানী সুপারমার্কেটের একজন ব্যবসায়ী ওয়ারী থানায় মনজুর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেন। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাঁদাবাজির মামলায় প্রথমে গ্রেপ্তার করা হলেও মনজুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে গতকাল দুটি মামলা হয়েছে। অর্থপাচারের প্রমাণ মিললে মানি লন্ডারিং আইনেও মামলা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মনজু ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের গত কমিটির সদস্য ছিলেন। বর্তমানে ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সদস্য। প্রভাবশালী এই কাউন্সিলর সিটি করপোরেশনের সভায় নিয়মিত অনুপস্থিত থাকতেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে দক্ষিণ সিটির যে ২১ কাউন্সিলরকে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠানো হয়েছিল তার মধ্যে মনজু একজন।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাধীন রাজধানী সুপারমার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপারমার্কেটের এক হাজার ৭৮৮টি দোকান থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় করতেন দোকানপ্রতি ৯৫০ টাকা। এর বাইরে ঈদে বা পূঁজায় দিতে হতো বাড়তি চাঁদা। জেনারেটর, বেয়ারসহ অন্যান্য খরচের নামেও দিতে হতো চাঁদা। তাঁর বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও র‌্যাব সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ, এমনকি মামলা করলেও পাননি প্রতিকার। টানা আট বছর মনজু আর তাঁর ক্যাডার বাহিনীর কাছে জিম্মি ছিলেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

অবৈধ টাকায় আঙুল ফুলে হয়েছেন বটগাছ। দুই মার্কেট থেকে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকার চাঁদা তুলে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাতেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা পরিবারের কাছে। মাদক সেবন ও কারবারে জড়িত মনজু মাতাল অবস্থায় ব্যবসায়ীদের হুমকি দিতেন। তাঁর কথার অবাধ্য হলে ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ধরে এনে টর্চার সেলে চালাতেন নির্যাতন। প্রতিবাদ করায় হুমকি পেয়ে ব্যবসায়ী আজমল হোসেন, হাফিজুর রহমান, ফজলুল হক, সেন্টু চৌধুরী, আবু বকর ও মতিউর রহমান ওয়ারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

মনজুকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে র‌্যাব-৩ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, টিকাটুলীর রাজধানী সুপারমার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপারমার্কেটে চাঁদাবাজি, অবৈধ দখলদারির পাশাপাশি মাদকের কারবারের অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। মনজুর বৈধ কোনো আয় নেই। সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজিই তাঁর অর্থের উৎস। সেই টাকা তিনি হুন্ডির মাধ্যমে আমেরিকায় পাঠান বলেও অভিযোগ আছে। কী পরিমাণ অর্থ তিনি পাচার করেছেন এটি তদন্তের বিষয়। কাউন্সিলর মনজু নিজেও একজন মাদকসেবী।

হাটখোলার বাসায় অভিযানের সময় দেখা যায়, চারতলা ওই ভবনের সিঁড়ি, গ্যারেজ বেশ অপরিচ্ছন্ন। নিচতলায় কেউ নেই। দোতলায় তালা লাগানো। তিনতলা ও চারতলা নিয়ে গড়ে তোলা ডুপ্লেক্স বেশ ঝকঝকে তকতকে। দামি টাইলস আর আসবাব দিয়ে প্রতিটি কক্ষ সাজানো। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে সাবেক মন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মনজুর ছবি টানানো।

সেখানে উপস্থিত হয়ে মনজুর আত্মীয় পরিচয় দেন সুমি বেগম নামে এক নারী। তিনি বলেন, মনজুর স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে প্রায় ১৮ বছর ধরে আমেরিকায় থাকেন। মনজুও নিয়মিত আমেরিকায় যাতায়াত করেন। মনজুর বাড়িটি নিয়ে মামলা চলছে।