আমার ভয়ে রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা রদ: এরশাদ

SHARE

গণতন্ত্রকে ভালোবেসে নয়, তার ভয়ে নব্বইয়ের আন্দোলনকারী দলগুলো রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা রদ করেছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।image_112420_0

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন। এর আগে বেলা তিনটার দিকে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন করেন এরশাদ।

তার সরকার বৈধ ছিল দাবি করে এরশাদ বলেন, “আমরা ছিলাম সংবিধানস্বীকৃত বৈধ সরকার। আমি দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা শুরু করেছি। দেশের মানুষ এখন যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলতে পারছে তার ভিত আমিই তৈরি করে দিয়েছি।” রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক ও স্থাপনার নাম উল্লেখ করে সেসব তার আমলে নির্মিত বলে দাবি করেন এরশাদ।
এরশাদের পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলো তার ভয়ে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা চালু করেছে দাবি করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, “গণতন্ত্রকে ভালোবেসে নয়, এরশাদকে ভয় করে রাষ্ট্রপতির শাসনব্যবস্থা বাদ দিয়ে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। তারা ভেবেছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতি চালু থাকলে এরশাদ আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবে। এ ভয়েই তৎকালীন রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনী করে।” সেটিকে তিনি আতঙ্কের পরিবর্তন বলে মন্তব্য করেন।
আগামী দিনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলের প্রতি আলোচনার আহ্বান জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “আসুন সবাই একসঙ্গে বসি। কীভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা করি।”
এরশাদ তার ভাষণে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করেন। তারেকের সুস্থতা নিয়েও সংশয প্রকাশ করে এরশাদ।
খালেদা জিয়া এ দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেন্-এমন অভিযোগ করে বিএনপির চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ করে এরশাদ বলেন, “উনি আমাকে ছয় বছর জেলে রেখেছেন। আমার স্ত্রীকে আড়াই বছর জেলে রেখেছেন। আমার ছেলেকে ছয় বছর আমার সঙ্গে দেখা করতে দেননি। এখন তিনি প্রতিহিংসার ফল ভোগ করছেন। তিনি এখন দুই ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। কবে পারবেন তা-ও জানেন না।”
এরশাদ আরো বলেন, “আমার ১৪২টি সামাবেশে তিনি ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন। আজ যে তার এই অবস্থা হবে, তখন তার মনে ছিল না। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। এখন তিনি ইতিহাসের ফল ভোগ করছেন।”
“যুবরাজ তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজাকার বলেছে”—উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, “শেম শেম শেম। যে বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বলতে পারে, সে কি সুস্থ মানুষ! সুস্থ রাজনীতিক!”
মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জি এম কাদের, কাজী ফিরোজ রশিদ, মশিউর রহমান রাঙ্গা, মুজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ হান্নান, জাপার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, সালমা ইসলাম, এস এম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সুনীল শুভরায় প্রমুখ।
এদিকে সমাবেশ মাঠে দলের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে তর্কাতর্কির ঘটনা ঘটে। কাজী ফিরোজ রশীদের সংসদীয় এলাকা থেকে তার অনুসারীরা দুটি হাতি নিয়ে সমাবেশস্থলে এলে ফয়সাল চিশতীর সঙ্গে তার এ তর্কাতর্কি হয়। পরে দলের চেয়ারম্যান এরশাদ তাদের শান্ত করেন।