বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষ কথামালার রাজনীতি আর চাচ্ছে না। তারা একটি পরিবর্তন চাচ্ছে। প্রতিশ্রুতি চাচ্ছে না, বরং প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাচ্ছে। এই আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে আমরা আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়নের চেষ্টা করছি।
’
সোমবার (৪ আগস্ট) রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের প্রাঙ্গণে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও আমার না বলা কথা’ শীর্ষক সমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল। অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুবদলের নিহত ৭৮ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা ও আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ পরিবর্তন চায়।
এখন আর স্বপ্ন কিংবা প্রতিশ্রুতি চায় না। জনগণ এবার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায়। সেই আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়নের চেষ্টা করছি। আগামী দিনের নীতি, জনগণের জীবন উন্নয়নের রাজনীতি, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা—এটি হবে আমাদের রাজনীতির অন্যতম মূল লক্ষ্য।
অর্থাৎ মানুষের ভোটের অধিকারকে যে রকম নিশ্চিত করা, মানুষের বাকস্বাধীনতাকে যেমন নিশ্চিত করা, একই সঙ্গে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ যার যে যোগ্যতা, সেই হিসেবে তাকে তার অবস্থান থেকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা এবং সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিএনপির একাধিক টিম দেশের প্রতিটি সেক্টরকে নিয়ে গভীরভাবে কাজ করছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্ল্যান-প্রগ্রাম বা কর্মসূচি আমরা পর্যায়ক্রমে তৈরি করছি। হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার নিয়োগের পরিকল্পনা করেছি আমরা। এই হেলথ কেয়ার নিয়োগের ৮০ শতাংশ হবে যুবসমাজের মধ্য থেকে নারী সদস্য। তারা একদিকে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটাবে, অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষ কথামালার রাজনীতি আর চাচ্ছে না। তারা একটি পরিবর্তন চাচ্ছে, প্রতিশ্রুতি চাচ্ছে না। বরং প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাচ্ছে। বিএনপি জনগণের জীবন মান উন্নয়নের সুনির্দিষ্টভাবে কতগুলো পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য কিন্তু প্রয়োজন জনগণের সমর্থন। শুধু জনগণের সমর্থনই প্রয়োজন নয়। একই সঙ্গে প্রয়োজন সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের সহযোগিতা। প্রয়োজন বিএনপির প্রতি জনগণের রায়। কারণ আমরা মনে করি, জনগণের রায় বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে যত দ্রুততার সঙ্গে সম্ভব এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু করব।’ নেতাকর্মীদের এ পরিকল্পনাগুলো দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা পরিচালনা করে দেখেছি, আগামী দিনে সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে আমরা যেকোনো মূল্যে সমগ্র দেশে শহীদ জিয়ার খাল খনন কর্মসূচি আবার শুরু করব। মানুষকে রক্ষায় এই খাল খনন কর্মসূচি একটি অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে।’
পাঁচ বছরে ৩০ কোটি গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি
গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে পরিবেশ এবং জলবায়ুর পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বোধ হয় কোনো সুযোগ নেই। পরিবেশের ব্যালান্স রক্ষা করার জন্য পাঁচ বছরে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ কোটি গাছ লাগানো। যেই গাছ পরিবেশকে যেমন রক্ষা করবে, একইভাবে বাংলাদেশকে বন্যা, খরা থেকেও রক্ষা করবে।’
শুধু জুলাই-আগস্ট নয়, বিগত ১৭ বছরের ত্যাগীদের সম্মান দেবে বিএনপি
তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর এই দেশের মানুষ তাদের রাজনৈতিক অধিকার, কথা বলার অধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। কত অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার তা আজ এই সমাবেশের মঞ্চে শহীদ পরিবারের সদস্য যারা বসে আছেন তাদের দেখেলেই বোঝা যায়। শুধু জুলাই-আগস্ট নয়, বিগত ১৫ বছর ধরে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মীর বাইরেও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা অধিকারের কথা তুলে ধরতে গিয়ে, দাবি আদায় করতে গিয়ে পলাতক স্বৈরাচারের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমরা প্রত্যেককে সত্যিকারভাবে সম্মানিত করতে চাই। তাদের ত্যাগের প্রতি যদি সম্মান জানাতে হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের সামনে এগোতে হবে। এই দেশকে সামনে নিয়ে যেতে হবে। তাদের শ্রদ্ধা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে তারা যে প্রত্যাশা নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছে, সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা। সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের সম্মান জানানোর একমাত্র উপায়।’
যুবদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা জনগণের বিশ্বাস ধরে রাখুন। মনে রাখবেন, জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে আপনি নেতা। জনগণ প্রত্যাখ্যান করলে আপনি নেতা নন। প্রশাসনিক সহায়তায় নেতৃত্ব হয়তো প্রদর্শন করা যায়, কিন্তু জনগণ সহায়তা করলে নেতৃত্ব দেওয়া যায়। মনে রাখবেন, আপনাদের প্রতি জনগণের সমর্থন থাকার কারণেই পলাতক স্বৈরাচারের প্রশাসন কিংবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যুবদলের নেতাকর্মী সমর্থকদের রাজপথ থেকে দূরে রাখতে পারে না। সুতরাং আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান জনগণের আস্থায় থাকুন।’