আসামের এনআরসি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের উদ্বেগ নেই

SHARE

গতকাল শনিবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আলোচনায় শেখ হাসিনা আসামে নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এনআরসি প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রক্রিয়া যত দিন না শেষ হচ্ছে তত দিন বাংলাদেশের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

পাশপাশি প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের কথা তুলে ধরে ভারতের সহযোগিতা চান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর দেশও চায় রোহিঙ্গারা দ্রুত, নিরাপদ ও টেকসইভাবে ফিরে যাক। ফিরে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে ভারত মিয়ানমারের রাখাইনে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য ভারত পঞ্চমবারের মতো মানবিক সহযোগিতা পাঠাবে।

শীর্ষ বৈঠকে উভয় নেতাই পরস্পরের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান, সমতা, বোঝাপড়া ও সহযোগিতার ভিত্তিতে বিদ্যমান সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দুই দেশের সম্পর্ক ‘স্ট্র্যাটেজিক’ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে তাঁরা মনে করেন। নরেন্দ মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পূর্ণ সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এই অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টা এবং সন্ত্রাসের ব্যাপারে তাঁর কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার নীতির প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

উভয় পক্ষই দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত সহজ করার ওপর জোর দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশিদের ভারতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে যেকোনো বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। উভয় পক্ষই একমত হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের ভিসা নিয়ে দুই দেশের যেকোনো বন্দর দিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অবশিষ্ট যে বিধিনিষেধ আছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে উঠে যাবে। আখাউড়া ও গজলডোবা (পশ্চিমবঙ্গ) দিয়েই এটি শুরু হবে। উল্লেখ্য বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসায় কোন বন্দর ব্যবহার করে আসা-যাওয়া করা যাবে তা নির্দিষ্ট থাকে।

আসাম রাজ্যে হালনাগাদ ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি) বা নাগরিক তালিকা আগামী ৩১ আগস্ট প্রকাশিত হয়। সেই তালিকায় বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে যে চূড়ান্ত খসড়া এনআরসি প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে যত জনের নাম বাদ পড়েছিল, চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়েছে তার অর্ধেকের কাছাকাছি নাম। আসাম বিজেপি এত কম সংখ্যক মানুষের নাম বাদ পড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

এর আগে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছিল, ২০০৪ সালের ১৪ জুলাই ভারতের সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের খতিয়ান অনুসারে ভারতে ১ কোটি ২০ লাখ অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন, যার মধ্যে ৫০ লক্ষের বাস আসামে।