মোহামেডান ক্লাবের ক্যাসিনোর টাকা পাঠাতেন তারেকের কাছে

SHARE

যুবলীগ নেতা (বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালম লোকমান ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ক্যাসিনো ব্যবসার সাথে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য মিলছে। তাঁদের দেওয়া তথ্যের বিষয়টি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, ক্যাসিনোর আইডিয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। দলটির শাসন আমলেই ঢাকায় ক্যাসিনো কারবার গেড়ে বসে। এ কারবারে মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির অন্তত তিন নেতা জড়িত ছিলেন।

ক্যাসিনো সাম্রাজের গডফাদারদের মধ্যে শুধু ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটই নন, বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। তাঁরাও ক্যাসিনোর গডফাদার। গোয়েন্দা সূত্রগুলো তাই বলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘তারেক রহমানই প্রথম দেশে ক্যাসিনো কারবারকে প্রতিষ্ঠিত করার আইডিয়া দেন। তারেক রহমানের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কনসালট্যান্টের মাধ্যমেই ক্যাসিনো থেকে কাঁচা টাকা আয়ের মূল ধারণাটি আসে।’

এ বিষয়ে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ক্যাসিনো থেকে যে আয় করা সম্ভব এ ধারণা প্রথম তিনি পান তারেক রহমানের কাছ থেকে। বিএনপির আমলে এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে। এরপর ২০১৬ সালেও তিনি লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলেন। তখন তারেক রহমান তাঁকে ক্যাসিনো কারবার চালিয়ে যেতে বলেন। সেই অনুযায়ী তিনি প্রথমে মোহামেডান ক্লাবে ক্যাসিনো কারবার শুরু করেন। ক্যাসিনোর টাকা তারেক রহমানকেও পাঠাতেন তিনি।

রিমান্ডে থাকা যুবলীগ নেতা খালেদ ও ঠিকাদার জি কে শামীম বলেছেন, বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠ লুত্ফর রহমান বাদলও ক্যাসিনো কারবারের সঙ্গে যুক্ত। যদিও মানি লন্ডারিং মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বর্তমানে নেপাল রয়েছেন তিনি। দেশে ক্যাসিনো কারবারে যেসব নেপালি এসেছিল তাদের পাঠাতে সহযোগিতা করেছিলেন বাদল। তিনি তারেক রহমানেরও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

এ ছাড়া সাদেক হোসেন খোকা, মোসাদ্দেক আলী ফালু ও মির্জা আব্বাসের নাম বলেছেন খালেদ ও জি কে শামীম। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা বলেছেন, মতিঝিলসহ ঢাকায় ক্যাসিনো কারবার বিস্তারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যাঁরাই জড়িত তাঁদের সঙ্গেই এসব শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার সম্পর্ক ছিল।

খালেদ আরো বলেছেন, একসময় মতিঝিল পাড়া নিয়ন্ত্রণ করতেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও তাঁর ভাই মির্জা খোকন। তাঁদের নির্দেশে তিনি মতিঝিল এলাকার ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো কারবারের পাশাপাশি জুয়ার আসর চালাতেন। জি কে শামীমও একসময় মির্জা আব্বাসের লোক ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে সে সময় যুবদলের নিয়ন্ত্রণে ছিল ক্যাসিনো ও জুয়ার কারবার। সে সময়ও তাঁদের হাত দিয়ে দেশের বাইরে ক্যাসিনোর অর্থ পাচার হতো। নেপাল, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় বিএনপি ও যুবদল নেতারা ক্যাসিনোর টাকা পাচার করেন।

রিমান্ডে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া বলেছেন, এরশাদ জামানার শেষের দিকে ঢাকায় জুয়ার কারবার শুরু হয়। নব্বইপরবর্তী সময়ে বিএনপি সরকারের সময় বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে ক্লাব পর্যন্ত এর বিস্তার ঘটে। এরপর ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো সরঞ্জাম বাড়তে থাকে। শুরু হয় ক্যাসিনো কারবার। ওই সময় মোসাদ্দেক আলী ফালু ও লোকমানের সহযোগিতায় ক্লাবপাড়ায় যুবদল-ছাত্রদলের একচ্ছত্র প্রভাব ছিল।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকার সময় জি কে শামীম ছিলেন ঢাকা মহানগর যুবদলের সহসম্পাদক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা মহানগর যুবলীগের এক বড় নেতাকে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে দিয়ে যুবলীগের ছত্রচ্ছায়ায় আসেন তিনি।