মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত এবং তেহরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার জেরে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিনদের ওপর হামলা চালালে তেহরান নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনবে বলে হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর জবাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কখনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না তেহরান ।
ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক পৌঁছেছে তলানিতে। দুপক্ষই পাল্টাপাল্টি হুমকি দিয়ে চলেছে। আশঙ্কা, বড় ধরণের যুদ্ধ লেগে যেতে পারে যেকোনো সময়। তবে ধর্মীয় আর আদর্শগত কারণেই ইরান কখনও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না বলে আশ্বস্ত করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। এসময় তেহরান কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না বলেও জানান তিনি।
ইরানের শীর্ষ রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়ও আধ্যাত্মিক নেতাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নির্লজ্জতার পরিচয় দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বর্তমানে লেবানন, সিরিয়া, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সুন্নি-শিয়াসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ ইরানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশ মানেন। তাদের জানা উচিৎ ছিল, সর্বোচ্চ নেতার সম্পদ বলতে একটি হোসাইনিয়া ও খুব সাদামাটা একটা বসত বাড়ি ছাড়া কিছুই নেই। যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিষেধাজ্ঞায় তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার কথা বলেছে। এ পদক্ষেপ খুবই হাস্যকর।
প্রতিশোধ নিতে তেহরান যেকোনো ধরণের হামলার চেষ্টা চালালে তা দমন করতে প্রস্তুত ওয়াশিংটন। এবং প্রয়োজনে তা ধ্বংসাত্মক রূপ নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
রুহানির মন্তব্যকে ‘অপরিণত’ উল্লেখ করে সারাবিশ্বে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর জন্য আবারও ইরানকে দায়ী করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। মঙ্গলবার আফগানিস্তান সফরে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এদিকে, ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তবে কোনো অবস্থাতেই ২০১৫ সালের সাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়া তেহরানের জন্য চরম বোকামি হবে বলে তেহরানকে সাবধান করেছে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওদিকে, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়ালে ব্রিটেন তাতে অংশ নিতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালে সেই যুদ্ধে ব্রিটেন অংশ নিতে আগ্রহী নয়।
কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে টিকে থাকা এ মন্ত্রী আরো বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ওই যুদ্ধে অংশ নিতে অনুরোধ জানাবে না বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের খুব কাছের মিত্রদেশ হলেও তাদের যেকোনো অনুরোধ সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে ব্রিটেন কোনো যুদ্ধে জড়াতে আগ্রহী নয় বলেও জানান হান্ট। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচির তীব্র বিরোধী ব্রিটেন।
ইরাকও ঘোষণা দিয়েছে, তাদের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানে হামলা চালানোর সুযোগ দেয়া হবে না।
ইরান ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক আগ্রাসী মনোভাবের মধ্যেই ইরাকের প্রেসিডেন্ট বাহরাম সালিহ এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ইরাক চায় না, তাদের ভূমি ব্যবহার করে ইরান কিংবা কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেউ হামলা চালাক।
বাগদাদ এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে, ইরাকের ভূমি ব্যবহার বিষয়ক কোনো চুক্তি নেই বলেও জানান তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে ইরানের কর্মকাণ্ডকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ইরাকে ৫ হাজার সেনা রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।