১৩ নাকি ‘আনলাকি’ সংখ্যা! সে জন্য জাপানের হাসপাতালগুলোতে নাকি ১৩ নম্বর কক্ষই নেই। কিন্তু ১৩ জন ক্রিকেটারের একটা ক্লাব আছে পৃথিবীতে। সেই ক্লাবের শুরু হয়েছিল যাঁর হাত ধরে, সেই মনসুর আলী খান পতৌদি মৃত্যুবরণ করেছেন ২০১১ সালে। অন্যরা সবাই জীবিত। এই ক্রিকেটারদের একজনের আছে নিজের জন্মদিনে সেঞ্চুরি করার বিরল রেকর্ড। একজন নিজ দেশের ২২তম প্রধানমন্ত্রী! সে দলের খেলোয়াড় মাশরাফি বিন মুর্তজার রয়েছে বিরল রেকর্ড। অতীতে তো নেই, ভবিষ্যতেও সে রেকর্ড ভাঙতে সময় লাগবে প্রচুর।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম রাজনীতিতে নাম লেখান বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম অধিনায়ক নাইমুর রহমান। ২০০০ সালে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচে তাঁর অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয়। তিনি ৮টি টেস্ট ও ২৯টি এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মানিকগঞ্জ-১, তথা মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর, শিবালয় ও ঘিওর উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নাইমুর রহমানের পথ অনুসরণ করেন বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম বোলিং স্তম্ভ এবং এক দিবসীয় ক্রিকেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। জাতীয় দলের অধিনায়ক থাকাকালে নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো দেশের জাতীয় সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়ার রেকর্ড একমাত্র বাংলাদেশ অধিনায়কের ঝুলিতেই আছে এখন! ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হলেও রাজনীতিতে তাঁর অভিষেক হয় ২০১৮ সালে। সে বছরই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি নড়াইল–২ আসন থেকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হলেও এখনো ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি। বর্তমানে মাশরাফি বিন মুর্তজা ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
নাইমুর রহমান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা—এই দুজন বাংলাদেশি ক্রিকেট খেলোয়াড় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেও রাজনীতির সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের সম্পৃক্ততা অনেক বেশি। সম্ভবত ভারতীয় ক্রিকেটাররাই উপমহাদেশীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন প্রথম। এর শুরুটা হয় মনসুর আলী খান পতৌদির হাত ধরে।
নবাব পরিবারের সন্তান এবং ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক মনসুর আলী খান পতৌদি মাত্র ২১ বছর বয়সে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ভারতের হয়ে ১৯৬১ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ৪৬টি টেস্ট ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন, যার মধ্যে ৪০টি ম্যাচেই তিনি ছিলেন দলের অধিনায়ক। মনসুর আলী ১৯৭১ সালে রাও বীরেন্দ্র সিংয়ের নেতৃত্বে ‘বিশাল হরিয়ানা পার্টি’ বা গ্রেটার হরিয়ানা পার্টির পক্ষে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং হেরে যান। এ ছাড়া ১৯৯১ সালে গ্রেটার হরিয়ানা পার্টি কংগ্রেসের সঙ্গে একীভূত হয়ে গেলে মনসুর আলী কংগ্রেসের অধীনে ভূপাল থেকে সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং শেষ পর্যন্ত হেরে যান। সে সময় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিজয়ী দলের অধিনায়ক কপিল দেব তাঁর জন্য প্রচার চালিয়েছিলেন। এই পরাজয়ের পর তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছিলেন।
মনসুর আলী খান পতৌদির পথ অনুসরণ করে রাজনীতিতে আসেন কীর্তি আজাদ। ততটা পরিচিত না হলেও তিনি ছিলেন ১৯৮৩ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। মূলত একজন অফ স্পিন বোলার হিসেবে তিনি ১৯৮০ সালে অভিষিক্ত হয়ে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। পরে তিনি রাজনীতিতে নাম লেখান। তবে কীর্তি আজাদ যে রাজনীতিতে আসবেন, সেটা নির্ধারিতই ছিল। কারণ, তাঁর বাবা ভগবত ঝাঁ আজাদ ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। ১৯৮৮ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ভগবত ঝাঁ আজাদ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি প্রথম দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে জয় লাভ করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে তিনি বিহারের দ্বাভাঙ্গা থেকে বিজেপির টিকিটে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে তিনি বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত হন এবং ২০১৯ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পার্টিতে যোগদান করেন।
ক্রিকেটের এই পূর্বসূরিদের পথ ধরে ভারতের রাজনীতির মাঠে নামেন জনপ্রিয় ক্রিকেটার নবজ্যোত সিং সিধু। ভারতীয় এই সাবেক টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ১৯৮৩ সালে এবং তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৯ সালে। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ধারাভাষ্যকার ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন। এরপর তিনি ২০০৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) যোগ দেন এবং অমৃতসর থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। এরপর ২০১৬ সালে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করার আগে পাঞ্জাব থেকে রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হন। এরপর ২০১৭ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন এবং অমৃতসরে তাঁর আগের আসন থেকে সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
নবজ্যোত সিং সিধুর এক বছর পর ভারতীয় ক্রিকেটে অভিষেক হয় মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের। ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়কদের মধ্যে অন্যতম সেরা অধিনায়ক তিনি। আজহার ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। এ ছাড়া তিনিই এখন পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট দলের একমাত্র অধিনায়ক, যিনি ৩টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০০ সালে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে জড়িত হওয়ার পর তিনি ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন। ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর ২০০৯ সালে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে হায়দরাবাদের এই ব্যাটসম্যান তাঁর রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করেন। সে বছরই উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আজহার। তবে এ পর্যায়ে তিনি অন্ধ্র প্রদেশ হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন। এরপর ২০১৪ সালে তিনি রাজস্থান রাজ্যের টনক-সোয়াই মাধোপুরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। বর্তমানে তিনি ভারতের তেলঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদে রয়েছেন।
ল ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে রেকর্ড ৬৬৪ রানের পার্টনার ছিলেন বিনোদ কাম্বলি। এ ছাড়া এই প্রতিভাধর ক্রিকেটারই পৃথিবীর একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি নিজের জন্মদিনে সেঞ্চুরি করেছিলেন। স্কুল ক্রিকেটে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেও জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট ক্যারিয়ার তাঁর দীর্ঘ ছিল না। ১৯৯১ সালে ভারতের পক্ষে অভিষেক হওয়া এই ব্যাটসম্যানের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ হয় ২০০০ সালে। খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি মূলত মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ছিলেন। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করেন। এরপর কাম্বলি লোক ভারতী পার্টিতে যোগ দেন এবং দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। ২০০৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি ভোটারলি, মুম্বাই থেকে লোকসভা পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন এবং নির্বাচনে পরাজিত হন।
আন্ডার নাইনটিন বিশ্বকাপ ২০০০’–এ ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ভারতীয় জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। ছিলেন টিম ইন্ডিয়ার দুর্দান্ত ফিল্ডার এবং নির্ভরযোগ্য মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ছিলেন দূর থেকে অসাধারণভাবে বল থ্রো করে রান আউট করায় সিদ্ধহস্ত। তিনি মোহাম্মদ কাইফ। ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বাদ পড়ার পর কাইফ বিভিন্ন প্যানেলে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ক্যারিয়ার তৈরি করার চেষ্টা করেন। মোহাম্মদ কাইফ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। উত্তর প্রদেশের ফুলপুর থেকে কংগ্রেসের হয়ে তিনি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অংশ নেন। সে নির্বাচনে তিনি বিজেপির কেশব প্রসাদ মৌর্যর কাছে পরাজিত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বিভিন্ন দলের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন।
‘শ্রীশান্ত। শান্তাকুমারন শ্রীশান্ত নয়, কিংবা এস শ্রীশান্তও নয়। আমাকে শ্রী শ্রীশান্ত, তারপর শ্রী, এবং অবশেষে এস শ্রীশান্ত নামে ডাকা হতো। আমি শুধু শ্রীশান্ত।’ নিজের নাম বিষয়ে তাঁকে এভাবেই ঘোষণা দিতে হয়েছিল। শ্রীশান্ত ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট টিমের ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলার এবং ডানহাতি ব্যাটসম্যান। রঞ্জি ট্রফিতে হিমাচল প্রদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে রেকর্ড করেছিলেন শ্রীশান্ত। ২০০৫ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ভারতের ২০০৭ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১১–এর ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। তবে ২০১৩ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড শ্রীশান্তকে আজীবন ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে। এরপর ২০১৬ সালে শ্রীশান্ত ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) যোগদান করেন এবং তিরুবনন্তপুরম থেকে কেরালা বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে কংগ্রেসের ভি এস শিভকুমারের কাছে নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। একাধারে ক্রিকেটার, সংগীতশিল্পী, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ—ভারতে প্রতিষ্ঠিত এবং জনপ্রিয় হওয়ার এই চার রাস্তায় হাঁটা একমাত্র মানুষ হলেন শ্রীশান্ত।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপ জেতার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট দল যখন নিবিড় অনুশীলনে ব্যস্ত, গৌতম গম্ভীর তখন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং রবি শংকরকে সামনে রেখে ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) যোগ দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর প্রস্তুতি যে অসাধারণ ছিল, প্রায় ৭ লাখ ভোটে জিতে সেটা প্রমাণ করেছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং সর্বকালের সেরা ওপেনারদের অন্যতম গৌতম গম্ভীর। তিনি ভারতের ২০১১ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ২০০৪ সালে ভারতের পক্ষে অভিষেক হওয়া এই ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ হয় ২০১৩ সালে। এ বছরের ২২ মার্চ তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং পূর্ব দিল্লি থেকে নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
বাংলাদেশ ও ভারতই নয়, পাকিস্তানের ইমরান খানও তাঁর ক্রিকেটজীবন শেষে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, ইমরান খানই এখনো পর্যন্ত একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করতে পেরেছেন। এদিক থেকে বলা যায়, ক্রিকেটার রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবচেয়ে সফল তিনি।
খেলোয়াড়ি জীবনে ইমরান খান নিয়াজি বিশ্ব ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের অন্যতম, সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৭১ সালে খেলায় অভিষেক ঘটে তাঁর এবং অধিনায়ক হিসেবে ১৯৯২ সালে পাকিস্তানকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করে খেলা থেকে অবসর নেন তিনি।
ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে যুক্ত হন ইমরান। দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান দিয়ে ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ। পরের বছর ১৯৯৭ সালে তিনি নির্বাচনে দুটি কেন্দ্র থেকে দাঁড়ালেও দুটিতেই হেরে যান। ২০০২ সালে নির্বাচনে জয়ী হন ইমরান খান। এরপর ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট হয়ে মোশাররফ তৎকালীন সেনাপ্রধানের পদে থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। ইমরান খান ওই নির্বাচনের বিরোধিতা করে ওই বছরের ২ অক্টোবর ৮৫ জন পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে পদত্যাগ করেন। এরপর ২০১৩ সালে পাকিস্তানের ১০তম নির্বাচনে তাঁর দল দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে ভোটে জয়লাভ করে। এরপর ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই পাকিস্তানের ১১তম জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তাঁর দল আসনসংখ্যার বিচারে সর্ববৃহৎ দলে পরিণত হয়। তিনি ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট ইমরান খান নিয়াজি পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের পর শ্রীলঙ্কেতেও ক্রিকেটারদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার নজির রয়েছে। এ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার দুজন বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার খেলোয়াড়ি জীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
১৯৯৬ সালে যিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন, তিনি অর্জুনা রানাতুঙ্গা। ১৯৮২ সালে ক্রিকেট খেলায় অভিষেক ঘটে তাঁর। এরপর ২০০০ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। অবসরের পর শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা পার্টিতে যোগ দিয়ে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং কলম্বো জেলা থেকে ২০০১ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন। ২০০৪ সালে ইউপিএফএ বিজয় লাভের পর তাঁকে শিল্প, পর্যটন ও বিনিয়োগ উন্নয়নের ডেপুটি মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। ২০১০ সালে রানাতুঙ্গা ইউপিএফএ ছেড়ে চলে যান এবং সারথ ফনসেকার নেতৃত্বে ডিএনএর ডেমোক্রেটিক পার্টিতে যোগ দেন এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির ডেপুটি নেতার দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে পদত্যাগ করলেও ডিএনএর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। তিনি ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মাইথ্রিপালা সিরিসেনাকে সমর্থন করেছিলেন। সিরিসেনার বিজয়ের পর রানাতুঙ্গাকে হাইওয়ে, বন্দর ও শিপিং মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।
একই গুরুর শিষ্য সনাথ জয়সুরিয়াও তাঁর বয়োজ্যেষ্ঠ ক্রিকেটার অর্জুনা রানাতুঙ্গার পথে হাঁটেন। একই দেশে, একই দলে ক্রিকেট খেললেও রানাতুঙ্গা আর জয়সুরিয়ার মধ্যে রেকর্ডের মিল না থাকলেও আমাদের মাশরাফির সঙ্গে মিল আছে তাঁর। সেটি হলো, গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় দলের সদস্য থাকাকালে সক্রিয় রাজনীতি করা। বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা মারকুটে ওপেনারদের অন্যতম এবং ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলঙ্কা দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সনাথ জয়সুরিয়া ২০১০ সালে মাতারা জেলার প্রার্থী হিসেবে রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৯১ সালে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তাঁর এবং ২০১১ সালে তিনি অবসর নেন। এরপর জয়সুরিয়া মাহিন্দা রাজাপক্ষের নেতৃত্বে প্রথমে ডাক বিভাগের ডেপুটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং পরবর্তী সময়ে ইউপিএফএ সরকারের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।