ব্লাড ক্যান্সার চিকিৎসায় আর বিদেশ নয়

SHARE

ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ। তিনি সৌদি আরবের রিয়াদস্থ বাদশাহ ফয়সাল স্পেশালাইজড হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটে (বিএমটি) অ্যাসিস্ট্যান্ট কনসালট্যান্ট হিসেবে ১০ বছর কাজ করেছেন। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে এসংক্রান্ত নানা সেমিনারে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। চার বছর আগে এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকায় যোগদান করে এখানকার বিএমটি ইউনিটটিকে আইসোলেটেড হেমাটোলজি ইউনিটে রূপদান করেছেন। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট নিয়ে কথা বলেছেন তিনি

প্রশ্ন : অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন বা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলুন।

ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ : বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা। অস্থিমজ্জা হচ্ছে হাড়ের মধ্যে থাকা এক ধরনের নরম টিস্যু। আর স্টেমসেল হচ্ছে অস্থিমজ্জায় থাকা অপরিণত কোষ, যা শরীরে প্রয়োজনীয় রক্তকণিকা বাড়াতে কাজ করে। বেশ কিছু রক্তরোগ ও আরো কিছু অসুখে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এই অস্থিমজ্জা এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যাতে জীবন রক্ষার জন্য প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

আমরা ট্রান্সপ্লান্ট প্রক্রিয়ায় রোগীর আক্রান্ত বোনম্যারো কেমোথেরাপির মাধ্যমে নষ্ট করে দাতার শরীর থেকে নেওয়া স্টেমসেল রক্তে প্রবেশের মতো করেই শরীরে প্রবেশ করিয়ে দিই। অর্থাৎ দাতা বা রোগীর দেহ থেকে বিশেষ ধরনের রক্তকোষ (স্টেমসেল) সংগ্রহ করে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। এ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে স্টেমসেলগুলো থেকে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হতে শুরু করে।

প্রশ্ন : কোন ধরনের রোগীদের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের পরামর্শ দেওয়া হয়?

ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ : থ্যালাসেমিয়া, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, লিউকেমিয়ার মতো রোগে আক্রান্তদের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয় সাধারণত অ্যালোজেনিক পদ্ধতিতে আর মায়োলোমা, লিম্ফোমার চিকিৎসা করা হয় অটোলোগাস পদ্ধতিতে।

প্রশ্ন : আপনারা কোন পদ্ধতিতে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করছেন? সম্ভাব্য খরচ কেমন?

ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ : দুটি পদ্ধতি রয়েছে, অটোলোগাস ও অ্যালোজেনিক। ‘অটোলোগাস’ পদ্ধতিতে রোগীর নিজের সুস্থ বোনম্যারো তার নিজের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। আর ‘অ্যালোজেনিক’ পদ্ধতিতে ভাই-বোন কিংবা দাতার কাছ থেকে নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। আমাদের সেন্টারে অটোলোগাস পদ্ধতির বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করছি। আমাদের বিশেষায়িত টিম এখন অ্যালোজেনিক পদ্ধতির বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। অটোলোগাস পদ্ধতিতে খরচ হয় সাত থেকে আট লাখ টাকার মতো; আর অ্যালোজেনিক পদ্ধতিতে খরচ পড়ে ১৫-২০ লাখ টাকার মতো।

প্রশ্ন : আপনাদের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের বিশেষত্ব কী?

ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ : আমরা প্রথম বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করি ২০১৬ সালের মার্চে। একটি আদর্শ বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট বলতে যা বোঝায় এবং এতে যা যা থাকা দরকার, তার সবই আছে আমাদের ইউনিটে। আমরা বলতে চাই, এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকার বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটটি বিশ্বমানের। এখানকার চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্টরা উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বিশেষ করে ইনফেকশন ডিজিস কন্ট্রোলের বিষয়টিকে আমরা সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। কারণ বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের পর রোগীদের ইনফেকশন হয়ে অনেকের মারাত্মক পরিণতি হয় এবং তখন রোগীকে বাঁচাতে দীর্ঘদিন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) থাকারও প্রয়োজন পড়ে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ জন্য বিষয়টিকে আমরা বেশ গুরুত্ব দিচ্ছি।

প্রশ্ন : আপনাদের সফলতার হার কেমন?

ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ : আমরা এখানে মাইলোমা, লিম্ফোমা, লিউকেমিয়ার রোগীদের অটোলোগাস পদ্ধতিতে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের চিকিৎসা দিচ্ছি। এরই মধ্যে আমাদের সাফল্যের হার শতভাগ।

প্রশ্ন : বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের জন্য রোগীরা বিদেশে যায় কেন বলে আপনি মনে করেন?

ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ : কয়েক বছর আগেও বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের জন্য বিদেশ পাড়ি দিতে হতো বাংলাদেশি রোগীদের। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত পর্যায়ে এ চিকিৎসা চালু থাকলেও বেসরকারি কোনো হাসপাতালে এত দিন এই চিকিৎসা চালু ছিল না। বেসরকারি পর্যায়ে আমরা সর্বপ্রথম চালু করেছি। এখন সম্ভবত বাইরে যাওয়ার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমেছে। তা ছাড়া বাংলাদেশি রোগীদের ব্ল্যাড ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করে এখন আর দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ

কো-অর্ডিনেটর ও কনসালট্যান্ট, হেমাটোলজি অ্যান্ড স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগ, এ্যাপোলো হসপিটালস্, ঢাকা