রোজায়ও নাশতা বনলতায়, সরকারের গচ্চা সাড়ে তিন লাখ টাকা

SHARE

দিন যত গড়াচ্ছে, রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের শোভন চেয়ারের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ তত তলানিতে নামছে। আজ মঙ্গলবার একদিনে সরকার বঞ্চিত হয়েছে তিন লাখ ৫৮ হাজার ১২৫ টাকার টিকিট বিক্রি থেকে। আজ সকালে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া বনলতা এক্সপ্রেসের ৯২৮টি শোভন চেয়ারের মধ্যে ফাঁকা ছিল ৫০৮টি এবং দুপুরে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনে ফাঁকা ছিল ৪৪৭টি আসন।

আজ প্রথম রোজার দিনেও টিকেটের সঙ্গে কেটে নেওয়া ১৫০ টাকার সকালের নাস্তা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দুপুরে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনেও একই খাবার দেওয়া হয়। দুপুরের খাবারটি কেউ কেউ হাতে করে বাসায় নিয়ে যান। অনেকে বগিতে ফেলে যান। পরে রেলকর্মীরা সেগুলো উঠিয়ে নেন। রোজার মধ্যেও সকালে ১৫০ টাকার নাস্তা দেওয়া অব্যাহত রাখায় যাত্রীদের মধ্যে তুলকালাম সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে তোপের মুখে পড়েন রেলকর্মীরা।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একমাত্র খাবারের কারণে বনলতায় আগ্রহ হারাচ্ছেন যাত্রীরা। এতে করে প্রতিদিনই ট্রেনটির অধিকাংশ বগি খালি যাচ্ছে। মঙ্গলবার সকালেও একই অবস্থা হয়েছে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময়। এদিন বেশিরভাগ শোভন চেয়ারের আসন ফাঁকা ছিল।’

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং কাউন্টার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বনলতা এক্সপ্রেসের ৯২৮টি শোভন চেয়ারের মধ্যে ফাঁকা ছিল ৫০৮টি আসন। বিক্রি হয়েছিল ৪২০টি। একইভাবে দুপুরে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা বনলতা এক্সপ্রেসের শোভন চেয়ারের ৪৪৭টি আসন ফাঁকা ছিলো। বিক্রি হয়েছে ৪৮১টি। দুটি ট্রেনে আজ আসন ফাঁকা ছিল ৯৫৫টি। এতে করে সরকার একদিনে তিন লাখ ৫৮ হাজার ১২৫ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এদিকে বনলতার দুই ট্রিপে ৩২০টি এসি চেয়ারসহ মোট এক হাজার ২২১ টি সিট বিক্রি করেছে। সেখান থেকে ১৫০ টাকা করে খাবারের মূল্য বাবদ চুক্তি নেওয়া প্রতিষ্ঠান ডিএমপি আয় করেছে এক লাখ ৮৩ হাজার ১৫০ টাকা।

বুকিং কাউন্টার সূত্র আরো জানায়, আজ সকালে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া সিল্কসিটি ট্রেনে একটি সিটও ফাঁকা ছিল না। এমনকি ৯ মে পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। অথচ বনলতা এক্সপ্রেসের শোভন চেয়ারের অর্ধেকের মতো টিকিট গতকাল পর্যন্ত বিক্রি হয়নি।
বনলতা এক্সপ্রেসের যাত্রী দেলোয়ার হোসেন প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কতটা স্বেচ্ছাচারি হলে সকালে রোজাদারদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা যায় তার নমুনা দেখালো রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

বনলতা এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ারের যাত্রীদের নিম্নমাণের খাবার দিয়ে ১৫০ টাকা করে টিকেটের সঙ্গে কেটে নেওয়ার বিষয়ে গত ৩ মে কালের কণ্ঠে অনুসন্ধানী খবর প্রকাশের পর তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়। এরপর এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য গত ৫ মে রেল মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। গত ৬ মে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন রাজশাহীর সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে ফোন করে এ সিদ্ধান্ত দ্রুত বাতিলের ঘোষণা দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটি বাতিল হয়নি।