শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ালেই টেকসই উন্নয়ন

SHARE

বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে তা আমাদের টেকসই উন্নয়ন এনে দেবে। এমন মত দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন খাতের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বাজেটকে গণমুখী করতে সংসদে বাজেট পেশের পর সাত দিন সংসদ মুলতবি রেখে সংসদীয় কমিটিগুলোর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা গতকাল সকালে ‘জন-বাজেট ২০১৯’-এর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব মতামত দেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে চারটি সংগঠন ও সংস্থা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।

জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি, অ্যাকশন এইড, গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে বিগত চার বছর ধরে ‘জন-বাজেট’ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রথম অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘শুধু খাতভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ দিলেই হবে না। আমাদের অসাম্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।’

অনুষ্ঠানের আয়োজকদের উদ্দেশে মেনন বলেন, ‘আমাদের এ ধরনের ছোট ছোট উদ্যোগগুলোকে আন্দোলনে রূপ দেওয়া প্রয়োজন। না হলে এসব উদ্যোগ হারিয়ে যাবে।’

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমি শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম। সবচেয়ে কম বাজেট হয় এই মন্ত্রণালয়ে। শ্রমিকরা আমাদের জন্য এত কিছু করে কিন্তু তাদের জন্য বাজেট অনেক কম। কিন্তু হতাশ হলে চলবে না। পর্যায়ক্রমে অবস্থার পরিবর্তন হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘এ দেশের তরুণরা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাজেটকে আরো বেশি গণমুখী করতে পারে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাজেটের নানা দিক নিয়ে কথা বলতে পারে। যেমন শিক্ষা খাতে বাজেট ২ শতাংশের মতো। কিন্তু এটি অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে হওয়া উচিত কমপক্ষে ৬ শতাংশ। বঙ্গবন্ধুও বলেছেন শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ হতে হবে কমপক্ষে ৪ শতাংশ। এখন তরুণরা যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়টি বেশি করে আলোচনায় আনে তবে সরকারের গণমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের শ্রমজীবী মানুষের জন্য পেনশন স্কিম চালু করা খুবই জরুরি। প্রতিটি মানুষকে এই স্কিমের আওতায় আনতে হবে। বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এই বিনিয়োগই আমাদের টেকসই উন্নয়ন এনে দেবে।’

গণমুখী বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়ে আতিউর রহমান বলেন, ‘বাজেট সংসদে পেশ করার পর সাত দিন সংসদের কার্যক্রম মুলতবি রাখা উচিত। এরপর এই সাত দিনে সংসদীয় কমিটিগুলো নিজেরা এবং বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবে, আলোচনা করবে। সাত দিন পর প্রতিটি সংসদীয় কমিটি আলোচনা থেকে প্রাপ্ত মূল বিষয়গুলো সংসদে উপস্থাপন করবে। এসব যদি সরকার বিবেচনায় নেয় তবে তা একটি গণমুখী বাজেট হবে।’

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘দেশটা যখন ধনতান্ত্রিক তখন এখানে গণতান্ত্রিক বাজেট করা কঠিন। এখানে ধন যার বেশি সেই কর্তৃত্ব করবে। ফলে আমাদের এখানে বাজেট হয় ওপরের দিকে তাকিয়ে। নিচের খানাখন্দে কে পড়ল তা দেখার সময় নাই। অথচ এ দেশের নিচুতলার শ্রমজীবীরা বছরে ৯৮ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট দেয়। কিন্তু বাজেটে তাদের জন্য বরাদ্দ কতটুকু?’

খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের সহসভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিকী রানা বলেন, ‘বাজেটে কৃষি গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বাজার ব্যবস্থা সংস্কারের মধ্য দিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভ কমিয়ে কিভাবে কৃষক আরো বেশি দাম পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকের পণ্য বিক্রির জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অ্যাপ তৈরি করা যায় কি না সেটা দেখতে হবে।’

স্বাস্থ্যসেবা খাতের অ্যাক্টিভিস্ট আমিনুর রসুল বাবুল বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ খুবই কম। বাজেটে দাতাদের পরামর্শ অনুসরণ করা হয় বেশি। ফলে বাজেটে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের বাজেট হয় কেন্দ্রীভূত। মন্ত্রণালয়ের বিধিমালার আলোকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও তার নিচের প্রতিষ্ঠানসমূহে স্বাস্থ্য বাজেট নির্ধারণ হয়। এখানে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কোনো ভূমিকা নেই। আমাদের বাজেটে জেলা পর্যায়ের সমন্বয় ও স্থানীয় চাহিদার আলোকে করতে হবে।’

প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য দেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মারুফ প্রমুখ। দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সভাপ্রধান প্রতিমা পাল মজুমদার।