বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন কয়েকশ’ মানুষ। কারও এক চোখ, কারও আবার দুচোখের দৃষ্টিই হারিয়েছেন। রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এখনও চিকিৎসা চলছে ৭৭ জনের। এ হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. খাইর আহমেদ চৌধুরী সময় সংবাদ বলেন, ভুক্তভোগীদের মধ্যে কারও কারও প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি সেবা।
সম্প্রতি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র ১৭ বছর বয়সেই নিভে গেছে ইবাত হোসেনের চোখের আলো। পরিবারের বড় ছেলের এমন করুণ পরিণতি কিছুতেই মানতে পরছেন না তার মা। কথা ছিলো পড়াশুনা শেষে পরিবারের হাল ধরবে ইবাত। কিন্তু ইবাত তো বটেই পুরো পরিবারের সামনেই এখন অন্ধকার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই নরসিংদীতে পুলিশের ছোররা গুলিতে আহত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন ইবাত। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে আসতে হয় ঢাকায়। হাসপাতালের ছোট্ট একটি বিছানায় এখন এক সময়ের দূরন্ত ইবাত হোসেনের সময় কাটে শুয়ে-বসে।
এ হাসপাতালেই চোখে আঘাতপ্রাপ্ত বা গুলি নিয়ে আসতে হয়েছে দেড়শ’র বেশি শিক্ষার্থীকে। মরতুজা তাদেরই একজন। নোয়াখালীর দশম শ্রেণির এ শিক্ষার্থীরও হারাতে বসেছে দুই চোখ। আন্দোলনে মরতুজা বা ইবাতের মতো চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৭ জন। এরই মধ্যে সেবা নিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার খানেক মানুষ।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান খাতা থেকে জানা গেছে, ওই হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে দৃষ্টি হারিয়েছেন ১৯ জন। এক চোখ হারিয়েছেন ৩৮২ জন।
ভুক্তভোগী ও পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. খাইর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের শুরুর সময় পর্যন্ত যে হারে আহত মানুষ আসতে থাকে, তা সামলাতে রীতিমতো হিমিশিম খেতে হয় আমাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘চোখে-মুখে গুলিবিদ্ধ এত মানুষ এর আগে দেখেনি কখনও। এ হাসপাতাল তৈরি হওয়ার আগে কখনো এ ধরনের অবস্থা দেখেননি। চিকিৎসা চলবে বা ভবিষ্যতেও অপারেশনও দরকার হতে পারে তাদের। যার মধ্যে কিছু সংখ্যককে কর্নিয়া বদলাতেও হতে পারে।’
ভুক্তভোগীরা চান, তাদের এ অবদান যেন মনে রাখে-বাংলাদেশ! স্বজনরা বলছেন, দেশের জন্য নিজের চোখ হারিয়েছেন যারা তাদের জন্য স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিক সরকার। পাশাপাশি এ ত্যাগ যেন রচিত হয় ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে।