সম্পদে নারী যেন বঞ্চিত না হয়, দৃষ্টি দিন

SHARE

সম্পত্তি আইন অনুযায়ী দাদার সম্পত্তিতে বাবার মৃত্যুর পর তাঁর মেয়ে ওয়ারিশরা যেন ছেলে সন্তানের মতো ভাগ পায়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একই সঙ্গে সমাজের সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে সরকারের আইনি সহায়তাকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে খুন, অগ্নিসন্ত্রাস, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা এবং ধর্ষণের মতো মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

গতকাল রবিবার সকালে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৯’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বেসরকারি সংস্থা, প্যানেল আইনজীবী এবং লিগ্যাল এইড—এই তিনটি ক্যাটাগরিতে বিশেষ সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন তিনি।

উপস্থিত বিচারপতিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সামনে বিচারপতি বা অন্য সকলে রয়েছেন, তাঁদেরকে আমি অনুরোধ করব, হ্যাঁ, আমাদের ইসলাম ধর্ম বা মুসলিম আইন (শরিয়া আইন) মানতে হবে, এটা ঠিক; কিন্তু কেবল শরিয়া আইনের দোহাই দিয়ে মা-মেয়েকে বঞ্চিত করে বাবার সম্পদ যে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়, তার কোনো সুরাহা করা যায় কি না—আপনারা দয়া করে একটু দেখবেন। এটা করা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘এখানে মেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে, অথচ আমরা স্লোগান তুলি যে দুটি সন্তানই যথেষ্ট। এখন দুটি সন্তানই যদি মেয়ে হয়; তখন বাবার সম্পত্তির ভাগ স্ত্রী পাবে যতটুকু, মেয়ে ততটুকু পাবে বা বঞ্চিত হবে, এখানে কিভাবে এর সুরাহা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি শরিয়া আইনে হাত দিতে বলব না। কিন্তু সম্পত্তি আইনে তো এটার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে মেয়ে-ছেলে না লিখে যদি সন্তান লিখে দেওয়া যায় তাহলে সন্তান ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক তার ভাগটা তো অন্তত সে পাবে। এর জন্য একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’ তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ এবং মাওলানা এর বিরোধিতাও করতে পারেন। তবে, তিনি অনেক ধর্মীয় নেতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। যাঁরা এই মেয়েদের অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। দেখা গেছে, তাঁদের অনেকেরই ওয়ারিশ কেবল কন্যাসন্তান বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আইনমন্ত্রীসহ সকলকেই এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের ওয়ারিশ হিসেবে কন্যাসন্তান রয়েছে তারা আমৃত্যু যেন সম্পত্তি ভোগ করতে পারে এবং তাদের মৃত্যুর পর তাদের কন্যারা যেন পৈতৃক সম্পত্তির ওপর নিজের অধিকার পায়।’

সরকারপ্রধান বলেন, যদিও ইসলাম একমাত্র ধর্ম যেখানে মা-বাবা মারা গেলে কন্যাসন্তানকে তাদের সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। তার পরও তারা অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়। কারণ, ভাইয়েরা দিতে চায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমনও ঘটনা আমি দেখেছি ভাই ভাইকে খুন করেছে বা আত্মীয়-স্বজনরা খুন করে সম্পত্তি দখল করে নিয়ে ভাইয়ের ছেলে-মেয়ে, স্ত্রীসহ তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তাদের স্থান হয়েছে বস্তিতে। ছেলে-মেয়েরা হয়ে গেছে টোকাই আর মহিলা হয়তো বাড়ি বাড়ি কাজ করে খাচ্ছে বা তার ঠাঁই হয়েছে কোনো পতিতালয়ে।’ তিনি বলেন, ‘এই সামাজিক অবিচার যেন বন্ধ হয়, এগুলোর দিকেও আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি মানুষ ন্যায়বিচার পাক। সেই ব্যবস্থাটা যাতে নেওয়া হয়, সেটা আপনারা নেবেন। আমরা চাই না আমরা যেমন বিচার না পেয়ে কেঁদেছি আর কাউকে যেন এভাবে না কাঁদতে হয়। সকলে যেন ন্যায়বিচার পায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমাতে হবে। কারাগারে এখনো অনেকেই আছে। কী কারণে যে জেলে সে জানে না। তাদের দোষটা কী তাও তারা জানে না। কী করে আইনগত সহায়তা তারা পাবে সেটাও জানে না। এ বিষয়টা দেখার জন্য আমি ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

এসিডদগ্ধ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী, প্রতিবন্ধী, পাচারকৃত নারী বা শিশু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানা আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অক্ষম নাগরিকদের সম্পূর্ণ সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। সূত্র : বাসস।