বাণিজ্য মেলায় নারী ক্রেতা বেশি

SHARE

বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন বয়সের নারী ক্রেতা বেশি। তারা স্টলে স্টলে ঘুরে যাচাই-বাছাই করে পছন্দেরটা কিনছেন। নারীরা সবচেয়ে বেশি কিনচ্ছেন ঘরগৃহস্থালি এবং সাজ-সজ্জার জিনিস। দাম একটু বেশি দিয়ে হলেও পছন্দেরটা নিচ্ছেন।

রাজধানীর আগারগাঁয়ে অনুষ্ঠিত এবারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় আসা নারী ক্রেতাদের অনেকে বলেন, রাজধানীর যানজটের কারণে বিভিন্ন শপিং সেন্টার ঘুরে রকমারি পছন্দের পণ্য কিনতে অনেক সময় ব্যয় হয়। কিন্তু বাণিজ্য মেলায় একই জায়গায় অনেক ধরনের পণ্য কেনার সুযোগ থাকায় অল্প সময়ে কেনাকাটা সারা যায়। তাই তারা আগ্রহ নিয়ে বাণিজ্য মেলায় এসেছেন কোনাকাটা করতে। গৃহিণী সুফিয়া মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি প্রতিবছর বাণিজ্য মেলা থেকে কেনাকাটা করি। এখানে অনেক স্টল থাকে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি হয়। অল্প সময়ে ঘুরতে ঘুরতে কেনা যায়। যানজটের কারণে ঢাকা শহরে এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করা এক দিনে সম্ভব হয় না। তাই বাণিজ্য মেলা আমার পছন্দ।

সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, নারী ক্রেতারা আগ্রহ নিয়ে প্লাস্টিকের রকমারি জিনিস কিনছেন। প্লাস্টিকের তৈরি পানি খাওয়ার গ্লাস, চামচ, জগ, ঝুড়ি, খেলনা থেকে শুরু করে ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, সোফাসেট, আলমারি, শোবার খাটসহ ঘর-গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার্য প্রায় সব কিছুই পাওয়া যাচ্ছে বাণিজ্য মেলায়। গুণগতমানের এসব প্লাস্টিক পণ্যের দাম একই ডিজাইনের কাঠ, স্টিল, কাঁচ বা সিরামিকের পণ্যের চেয়ে কম। এবারের বাণিজ্য মেলায় আমদানীকৃত প্লাস্টিক পণ্যের চেয়ে দেশি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা বেশি। বাণিজ্য মেলায় দেশি-বিদেশি সব প্রতিষ্ঠানই প্লাস্টিক পণ্য বিক্রিতে বিভিন্ন ছাড় দিচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে। প্রাণ আরএফএল, বেঙ্গল গ্রুপসহ বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠানও শুধু বাণিজ্য মেলার জন্য বিশেষ মূল্য ছাড় দিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে পাঁচটি বা তার বেশি পণ্য কিনলে মোট মূল্যের শতকরা ১০ শতাংশ কম নিচ্ছে।

বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, বাণিজ্য মেলাকে সামনে রেখে আমাদের বিশেষ প্রস্তুতি থাকে। শুধু এ মেলায় বিক্রির জন্য অনেক নতুন পণ্য আনা হয়। তবে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা ভেবে দাম সহনীয় রাখা হয়। এ ছাড়া মেলায় বিভিন্ন ছাড় দেওয়া হয়।

প্লাস্টিকের চেয়ার কেনার পর বেসরকারি চাকরিজীবী নন্দী রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, কাঠ, স্টিল বা রড আয়রনের আসবাবের চেয়ে প্লাস্টিক পণ্যের দাম কয়েক গুণ কম। টেকসইও। বাণিজ্য মেলায় অনেক স্টল ঘুরে এসব কিনেছি।

প্রাণ আরএফএল এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রায় আড়াই হাজার ডিজাইনের পণ্য নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে পুরনো পণ্যের পাশাপাশি শুধু এবারের বাণিজ্য মেলার জন্য এসেছে নতুন ধরনের প্রায় চার শতাধিক পণ্য। মেলা উপলক্ষে আনা বিভিন্ন ডিজাইনের থালা, বাটি, গ্লাস, ভাতের ডিশ, তরকারির ডিশ গড়ে ২০ টাকা থেকে দুই শ /আড়াই শ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এসব পণ্য সব শ্রেণির গৃহিণীর কাছেই আকর্ষণীয়। বাণিজ্য মেলায় প্রাণ আরএফএলের বেস্টবাই প্যাভিলিয়নে এসে নারীরা পণ্য না কিনে ফিরছে এমন আগতদের সংখ্যা খুব কম।

শুধু প্লাস্টিক নয়, নারীরা আগ্রহ নিয়ে স্টিলের হাঁড়ি, কলসি, চামচ, গ্লাস কিনছেন। সিরামিকের থালা-বাসনও কিনছেন। শাইনপুকুর মুন্নু সিরামিকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে থাইল্যান্ড, ইরান, ভারত থেকে আমদানীকৃত এসব পণ্য। যদিও দেশি পণ্যের চেয়ে বিদেশি পণ্যের দাম কিছুটা বেশি।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, সময় বাঁচিয়ে সহজে রান্নাবান্না করা যায় এমন সব পণ্য কিনছেন অনেক নারী। এর মধ্যে সবজি কাটা, রুটি বানানো, ডিম ফেটানোর যন্ত্র বেশি বিক্রি হচ্ছে। সবজি কাটার যন্ত্র পাওয়া যাচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায়। মেলাতে অনেক নারীকে পাপোশ, ঘর মোছার স্টিক, ময়লা কাপড় রাখার ঝুড়ি কিনে হাতে নিয়ে ঘুরতে দেখা গেল। অনেককে আবার বড় বড় হাঁড়ি-কড়াই কিনে নিয়ে অন্য জিনিস কিনতে বিভিন্ন স্টলে স্টলে ঘুরতে দেখা গেল। ননস্টিক থালা-বাসনও কিনছেন অনেকে। ফাইবারের পণ্যের চাহিদাও কম নয়। এসব পণ্য ৫০ থেকে ৫০০ টাকা বা এর বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

বিছানার চাদর, বালিশের কভার, সোফার কুশন থেকে তোয়ালে, সিফটিপিন সবই কম বেশি কিনছেন নারীরা। ঘর সাজানোর ফুলসহ বিভিন্ন শোপিস কিনছেন অনেক নারী। সঙ্গে শিশুকন্যা, বোন বা নারী আত্মীয়কে নিয়ে অনেক নারীকে স্টলে স্টলে ঘুরে জুতা, স্যান্ডেল কিনতে দেখা গেল। এ ক্ষেত্রে ভারত থেকে আনা সুতার কাজ করা নাগরা স্যান্ডেল জুতা বেশি বিক্রি হচ্ছে। দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে বয়সে তরুণীরা বেশি কিনছে সাজসজ্জার জিনিসপত্র। ১০ টাকা দামের মাথার ক্লিপের থেকে নামি কম্পানির ব্র্যান্ডের দামি প্রসাধনী সবই বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সারি সারি সাজানো জুয়েলারির দোকানে নারী ক্রেতার ভিড় বেশি। ভারত থেকে আমদানীকৃত গোল্ড প্লেটেড জুলেয়ারির চাহিদা বেশি। এসব পণ্য ২০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা বা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ইরান, থাইল্যান্ডের হাতের ব্রেসেলেট, গলার মালা কিনছেন অনেক নারী।