ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সরকার ফ্রান্সের রাজনৈতিক মানচিত্রের পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনে ম্যাখোঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সমৃদ্ধিমুখী বড় ধরনের সংস্কারের পথে হাঁটবে তারা।
গত রবিবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা পার্লামেন্ট নির্বাচনে ম্যাখোঁর দল রিপাবলিক অন দ্য মুভ (আরইএম) এবং সহযোগী দলগুলো মোট ৫৭৭টি আসনের মধ্যে ৩৫০টি আসনে জয়লাভ করে। তবে নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে কম। সরকারের মুখপাত্র ক্রিস্টোফার কাস্টানের বলেন, মাত্র ৪৪ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে না পারার ব্যর্থতা রাজনীতিবিদদের। এর থেকেই বোঝা যায় ফ্রান্সের রাজনীতিতে পরিবর্তন কতটা জরুরি।
আরটিএল রেডিওকে কাস্টানের এলআইএমের জয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত রাতেরটি (রবিবার রাত) প্রকৃত বিজয় নয়। প্রকৃত জয় আসবে আগামী পাঁচ বছরে যখন আমরা পরিবর্তন আনব। ’ অবশ্য বিশ্লেষকরা ধারণা করছিলেন আরো বেশি আসনে জয় পাবেন ম্যাখোঁ। যদিও ৩৫০টি আসন দিয়েই তিনি মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে একেবারে ভাসিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। ফ্রান্সের গত কয়েক দশকের রাজনীতি সমাজবাদী ও রক্ষণশীল দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
বামপন্থী পত্রিকা ‘লিবারেশন’ গতকাল মূল শিরোনামে লেখে ‘মধ্যপন্থীদের জয়’। অর্থনীতি বিষয়ক পত্রিকা লাস ইকোসের শিরোনাম ছিল, ‘সফল জুয়া খেলা’।
কাস্টানের জানান, গতকালই প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্দ ফিলিপের সরকারের পদত্যাগ করার কথা। তাঁর ধারণা, ফিলিপকে আবারও পুনর্নিয়োগ দেওয়া হবে।
ম্যাখোঁর জয়কে স্বাগত জানিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। ম্যাখোঁ নিজেও শ্রম আইন শিথিল করার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চান। অবসর ভাতা ব্যবস্থায় তিনি হাত দেবেন আগামী বছর। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচার চালানোর সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, করপোরেট কর ৩৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে আনা হবে। এ ছাড়া জ্বালানি, কারিগরি শিক্ষা ও সড়ক অবকাঠামো খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করবেন তিনি। ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতির বিষয়টিও সামাল দিতে হবে তাঁকে।
গত মে মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ধরনের জয় পান ম্যাখোঁ। ফ্রান্সের রাজনীতিতে দ্বিদলীয় শাসন ব্যবস্থায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল তা পূরণ করে দেন ম্যাখোঁ। এক বছর আগেও এমন পরিস্থিতির কথা কল্পনা করা যেত না।
রিপাবলিকান পার্টি এবং তাদের রক্ষণশীল জোটসঙ্গী পেয়েছে ১৩১টি আসন। পার্লামেন্টে তারাই প্রধান বিরোধী দল। অতি কট্টরপন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্ট পেয়েছে আটটি আসন। সোশ্যালিস্ট পার্টি ও তাদের সহযোগীরা পেয়েছে ৪৪টি আসন। গত কয়েক দশকের মধ্যে এটিই তাদের সবচেয়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি। এবার রেকর্ডসংখ্যক (২২৩) নারী আইন প্রণেতা নির্বাচিত হয়েছেন। ম্যাখোঁ প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেন্ডার ভারসাম্য রাখার যে চেষ্টা করেছেন এটি তারই ফল বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।