আর্থিক খাতে লুটপাটের ঘটনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
লুটপাটের শিকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে মূলধন হিসেবে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়ায় অর্থমন্ত্রীকে আইনের আওতায় আনতে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলারও দাবি জানান তিনি।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য বাবলু এই দাবি জানান।
‘বিচিত্র দেশের বিচিত্র মন্ত্রীর বিচিত্র বাজেট’ উল্লেখ করে বাবলু অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনি কি উন্নয়নের মহাসড়কে নাকি দুর্যোগের মহাসড়কে আছেন সেটা বিবেচনার বিষয়। বিরোধী দলের এ সদস্য ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আপনার বয়স হয়ে গেছে। এখন সসম্মানে পদত্যাগ করে সম্মানের সঙ্গে বিদায় দিন। নিঃশর্ত বিদায় নিয়ে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে মুক্তি দিন।
ব্যাংকখাতে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ করেন বাবলু। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে আসা হয়েছে। এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে আছে। এর মধ্যে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কার টাকা অবলোপন করছেন? মানুষের টাকা লুট হচ্ছে, বিদেশে পাচার হচ্ছে। এসব নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কোনও বক্তব্য নেই।
তিনি বলেন, সোনালী, অগ্রণী ও বেসিকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অবস্থা দৈন্যদশা। ব্যাংকিং খাতে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এই টাকা দিয়ে বাজটের ঘাটতি পূরণ করা যেতো। খেলাপি ঋণ আদায় হলে ভ্যাট বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।
লুটপাটকারীদের বিচারের আওতা আনা হয় না কেন এ প্রশ্ন তুলে বাবলু বলেন, লুটপাট কারা করছে? এরা কি আপনাদের চেয়ে, সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? কেন তাদের আইনের আওতায় আনবেন না? বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দুদক নাকি তার বিরুদ্ধে কিছু পায়নি। শেয়ার বাজার লুট হয়েছে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
লুটপাটের শিকার ব্যাংকগুলোকে মূলধনের ঘাটতি পূরণে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে বাজেটে অর্থমন্ত্রী যে প্রস্তাব করেছেন তার কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধী দলের বাবুল।
তিনি বলেন, ট্যাক্স পেয়ারের দুই হাজার কোটি টাকা উনি ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি পূরণে দিচ্ছেন। মানুষের টাকা দিয়ে লুটপাটের টাকা পূরণ করছেন? এটা কোনও নৈতিকার মধ্যে পড়ে না। এটা অনৈতিক কাজ।
তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রীর এই টাকা দেয়ার কোনও অধিকার নেই। ট্যাক্স পেয়ারের মানি দিয়ে লুটের টাকার ঘাটতি পূরণের কোনও অধিকার নেই। এজন্য তো উনাকে (অর্থমন্ত্রী) আইনের আওতায় আনতে হবে। অর্থমন্ত্রীকে এজন্য আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। উনার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনা উচিত বলে আমি মনে করি।