বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র (১৫ খণ্ড) হাক্কানী পাবলিশার্সের কাছ থেকে সংগ্রহ করাসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে চার বছর আগে করা আপিল প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
ফলে দেশের প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র বিতরণে এখন বাধা নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম। আর হাক্কানী পাবলিশার্সের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেছেন, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুসারে হাক্কানী পাবলিশার্স ১৭ হাজার বই ছাপিয়েছিল। আপিল প্রত্যাহার হওয়ায় এখন হাক্কানী পাবলিশার্সের কাছ থেকে ওই দলিলপত্র সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহ ও ক্রয় করতে আর কোনো বাধা নেই।
আইনজীবী সূত্রগুলো বলেছে, চাহিদা অনুসারে দলিলপত্র ছাপার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তা ক্রয়ে ছাড়পত্র চাইলে তথ্য মন্ত্রণালয় তা না দেওয়া এবং দলিলপত্র প্রকাশে বাংলা একাডেমিকে দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাক্কানী পাবলিশার্সের পক্ষে ২০১১ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেওয়ার পাশাপাশি বাংলা একাডেমিকে সুপারিশের কার্যক্রম স্থগিত করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ২০০৯ সালের ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে হাক্কানী পাবলিশার্সের ছাপানো ১৭ হাজার সেট বই ৩০ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করে বাজারে সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়। বলা হয়, পরবর্তীকালে সরকার চাইলে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দলিলপত্র ছাপাতে পারবে।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তথ্য মন্ত্রণালয়। ২০১৩ সালের ২২ মে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেন। আজ মঙ্গলবার অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালতে বিষয়টি ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। হাক্কানী পাবলিশার্সের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে আপিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ফলে ইতিপূর্বে হাইকোর্টের রায়ে দেওয়া স্থগিতাদেশও থাকছে না। হাইকোর্ট বলেছিলেন, অবিলম্বে বই কিনে বিতরণ করা হোক। তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে এর বিরুদ্ধে আপিলটি করা হয়েছিল। বহু স্কুল, কলেজ ও লাইব্রেরিতে এই দলিলপত্র ইতিমধ্যে পেলে নিশ্চয়ই জ্ঞানের ভান্ডার আরও সমৃদ্ধ হতো। এসব চিন্তা করে সরকার আপিলটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রায় ২৭ কোটি টাকা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এবং এ বছরই তা ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ করে এই দলিলপত্র কেনার ব্যাপারে। ফলে এখন দলিলপত্র বিতরণে বাধা নেই।
মনজিল মোরসেদ বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্রের তৃতীয় খণ্ডে বিবৃত ইতিহাস থাকার কারণে এর আগে তা বাতিলের জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। এ মামলার রায়ে হাইকোর্ট স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানার জন্য ব্যাপকভাবে দলিলপত্র বিতরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও দলিলপত্র প্রকাশে হাইকোর্টের আগের রায় অকার্যকর করতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার কারণে চার বছর ধরে শিক্ষার্থীদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের এই দলিলপত্র পৌঁছেনি। ফলে তারা প্রকৃত ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এরপরও সরকারের আপিল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।