দক্ষিণ আফ্রিকার ভূতটা যেন পেয়ে বসল শ্রীলঙ্কাকে। চাপে ভেঙে পড়ল। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ওভার থ্রোয়ে চার; ম্যাচ ঘুরে যেতে পারত এমন পরিস্থিতিতে সহজ ক্যাচ হাতছাড়া; যাচ্ছেতাই গ্রাউন্ড ফিল্ডিং; উইকেটকিপারের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল বাউন্ডারিতে। এ সবই যখন ঘটছে, তখন ভাগ্যে সওয়ার সরফরাজ কাঁধে তুলে নিলেন দলকে। জেতা ম্যাচে পরাজয়ের খাদের কিনারে পৌঁছে যাওয়া দলকে আবার ফেরালেন। ৬১ রানের অপরাজিত এক ইনিংসে পাকিস্তানকে জেতালেন ৩ উইকেটে। দলকে নিয়ে গেলেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। ১৪ জুন কার্ডিফেই যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।
২৩৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১ উইকেটে ৯২ রান তুলে ফেলেছিল পাকিস্তান। ম্যাচ জেতা সময়ের ব্যাপার যখন মনে হচ্ছিল তাদের জন্য, সে সময়ই ঘুরে গেল চাকা। ১৩৬ রানে ৬ উইকেট পড়ল যখন, পাকিস্তানের জেতার সম্ভাবনাই যেন আইসিইউতে চলে গেল। কার্ডিওগ্রাফকে প্রায় সরলরেখায় নিয়ে আসার কাজটা হলো রান আউটে ফাহিম বিদায়ের পর। তখনো জয় থেকে ৭৫ রান দূরে পাকিস্তান। হাতে মাত্র ৩ উইকেট। একদিকে সরফরাজ থাকলেও অন্য দিকে লেজ বেরিয়ে পড়েছে। নেমেছেন মোহাম্মদ আমির।
সেই আমির কী অবিশ্বাস্য সঙ্গ দিলেন! ৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে সেমিফাইনালে চলে গেল পাকিস্তান। আমির অপরাজিত ছিলেন ২৮ রানে। অনুমান-অযোগ্য পাকিস্তান তাদের ধ্রুপদ চেহারায় দেখা দিল আবার। শ্রীলঙ্কার জন্য বুক ভেঙে যাওয়া হলেও নিরপেক্ষ সমর্থক হিসেবে ক্রিকেটের অসাধারণ এক ম্যাচ নিশ্চয়ই উপভোগ করেছেন আপনি। যে ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দিক থেকে খলনায়ক খুঁজে বের করা যাবে অনেককেই। যেমন ৩৮.২ ওভারে লাসিথ মালিঙ্গার বলে মিড অনে সহজ ক্যাচ ছাড়লেন থিসারা পেরেরা। ৩৮ রানে বেঁচে গেলেন সরফরাজ। এক ওভার পর মালিঙ্গার বলেই বদলি ফিল্ডার ক্যাচ ফসকালেন সেকুগে প্রসন্ন। তখনো পাকিস্তানের রান ২০০ পেরোয়নি। এবারও বেঁচে যাওয়া ব্যাটসম্যান সরফরাজ। পাকিস্তান অধিনায়কের রান ৪০। কিন্তু পাকিস্তানের জন্য আপাতত নায়ক সরফরাজই। রানের সংখ্যায় বড় কিছু নয়, তবু ৭৯ বলের ইনিংসটা সরফরাজ মনে রাখবেন আজীবন।
অথচ পাকিস্তান এ ম্যাচের লাগাম ধরে রেখেছিল সিংহভাগ সময়ে। মনে হচ্ছিল, অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনাল হয়ে ওঠা ম্যাচটা একপেশে হয়তো হবে। শ্রীলঙ্কাকে ২৩৬ রানে অলআউট করে দিয়ে নিজেরা বিনা উইকেটে তুলে ফেলল ৭৪। গত ম্যাচে অভিষিক্ত ফখর জামান ৩৬ বলে ৫০ রান করে ফিরলেন যখন, তখনো পাকিস্তানের হিসাবটা একদম সহজ। পাকিস্তানের ১৬৩ রান দরকার, মাত্র ১২ ওভারের খেলা চলছে।
তখনই শুরু হলো বিপর্যয়। দেখতে দেখতে ৪৫ রানের মধ্যে আরও ৫ উইকেট নেই পাকিস্তানের। স্কোর হয়ে গেল ৬ উইকেটে ১৩৭। ছয়ে নামা সরফরাজ এর কিছুটা নিজে সরাসরি প্রত্যক্ষ করলেন উইকেটে দাঁড়িয়ে। ভাগ্যও মনে হচ্ছিল লঙ্কানদের পাশে। প্রস্তুতি ম্যাচে অনেকটা এমন পরিস্থিতিতে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে দলকে জিতিয়েছিলেন তরুণ ফাহিম আশরাফ। একটি করে চার ও ছক্কায় শুরুটাও করেছিলেন ভালো। কিন্তু সরফরাজের সঙ্গে ২৫ রানের জুটিটা ভাঙল অদ্ভুত রান আউটে। সরফরাজের স্ট্রেট ড্রাইভ বোলার পেরেরার আঙুলে লেগে ভেঙে দিল নন স্ট্রাইক প্রান্তের উইকেট। রিপ্লেতে দেখা গেল, ব্যাট শূন্যে ছিল ফাহিমের। সপ্তম উইকেটের পতন!
সেখান থেকেই ৭৫ রানের সেই অবিশ্বাস্য জুটি। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জুটি নিয়ে গর্ব করছে বাংলাদেশের সমর্থকেরা। পরের ম্যাচে মরগান-স্টোকসের জুটিও আলোচনা ছড়াল। আজ পাকিস্তানি সমর্থকদের আলোচনার জন্য তৈরি হলো আরও একটি জুটি। দেরিতে হলেও বেশ জমে উঠল চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এখন সেমিফাইনালেও রোমাঞ্চকর ম্যাচের অপেক্ষা।