ছেলেকে বলাৎকার করার প্রতিশোধ নিতে কলেজছাত্র মাহফুজ সরকারকে অপহরণ করা হয়। পরে তাকে হত্যার পর ৬-৭ টুকরা করে ট্রলি ব্যাগে নিয়ে মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফেরদৌস ওয়াহিদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা জানান এ মামলায় গ্রেফতার রাবেয়া ইসলাম রাবু।
গত ২৬ মে বিকাল থেকে কলেজছাত্র মাহফুজ নিখোঁজ হন। ২৭ মে এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয় মাহফুজের পরিবারের পক্ষ থেকে। এরপর পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে রাবেয়াকে আটক করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মাহফুজকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে।
পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাবেয়াকে আদালতে পাঠানো হয়।
রাবেয়ার স্বীকারোক্তির পর মাহফুজকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও তার ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় উদ্ধার করেন পুলিশ। তবে এখনো মাহফুজের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
নিহত মাহফুজ নরসিংদী পৌর শহরের বৌয়াকুর এলাকার আবদুল মান্নান সরকারের ছেলে। তিনি নরসিংদী সরকারি কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
মাহফুজের বড় ভাই অ্যাডভোকেট মোস্তফা সরকার রাসেল জানান, গত ২৬ মে বিকালে মাহফুজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর সে আর ফিরে আসেনি। তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে ২৭ মে নরসিংদী সদর থানায় একটি জিডি করা হয়।
তিনি জানান, পরদিন মাহফুজের মোবাইল থেকে একটি কল আসে তার ফোনে। তাকে জানানো হয়, ‘মাহফুজ বর্তমানে তাদের হেফাজতে রয়েছে। এই নাম্বার থেকে এটাই তাদের শেষ কল। পরে অন্য নাম্বার থেকে কল দেয়া হবে। মাহফুজকে ফিরে পেতে হলে তাদেরকে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে; নতুবা তাকে হত্যা করা হবে। এ কথা বলে রাসেলকে চারটি বিকাশ ও তিনটি রকেট নাম্বার দেয়া হয়।’
এরপর রাসেল ও তার বাবা মান্নান সরকার মাহফুজকে বাঁচানোর জন্য তিনটি রকেট নাম্বারে এক লাখ টাকা পরিশোধ করে। এরপরও তারা মাহফুজকে ফেরত না পেয়ে নরসিংদী সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়।
২৮ মে মাহফুজের বাড়িতে গিয়ে তার নিখোঁজের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন নরসিংদী শহরের রাঙ্গামাটিয়া মহল্লার প্রবাসী আল-মামুনের স্ত্রী ইনডেক্স প্লাজার এমডি গার্মেন্টস নামে একটি দোকানের মালিক রাবেয়া ইসলাম রাবু।
মাহফুজকে খোঁজাখুঁজি করার জন্য বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন ব্যক্তির নাম ঠিকানা দেন।
এতে সন্দেহ হলে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নরসিংদী থানার এসআই নূরে আলমকে বিষয়টি জানান মাহফুজের বাবা। পরে ফোনে রাবুকে থানায় যেতে বলেন এসআই নুরে আলম।
রাবু তার আরও দুই বোনকে নিয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় গিয়ে এসআই নূরে আলমের সঙ্গে দেখা করেন। কথা-বার্তার এক পর্যায়ে এসআই নূরে আলম তাকে থানায় আটকে রেখে দুই বোনকে বাসায় পাঠিয়ে দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহরিয়ার আলম ও ওসি গোলাম মোস্তফা যৌথভাবে রাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে সোমবার রাতে পুলিশ সুপার আমেনা বেগম জিজ্ঞাসাবাদ করলে মাহফুজকে খুনের কথা স্বীকার করলে মঙ্গলবার রাবুকে নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে রাবেয়া স্বীকার করেন, ২৬ মে রাতে মাহফুজকে ডেকে তার বাড়িতে নিয়ে যান তিনি। ঘরে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রাবু তাকে জড়িয়ে ধরে। এসময় রাবুর ভাগিনা শাহাদাৎ হোসেন রাজু তাকে পেছন দিক থেকে এলোপাথারি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর রাবু ও রাজু মিলে মাহফুজের মৃতদেহটি ৬-৭টি খণ্ড করে ঘরে থাকা ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখে। পরদিন ফ্রিজ থেকে খণ্ডিত দেহটি একটি ট্রলি ব্যাগে ঢুকিয়ে নৌকা ঘাটে গিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে পাশ্ববর্তী বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দী এলাকায় মেঘনা নদীর গভীর পানিতে ফেলে দেয়।
জবানবন্দিতে রাবেয়া আক্তার আরও জানান, তিনি নরসিংদী শহরের রাঙ্গামাটিয়া মহল্লার শাহ আলম মোল্লার মালিকানাধীন বাড়ির ৫ তলায় ভাড়া থাকতেন। কলেজছাত্র মাহফুজ তার পূর্ব পরিচিত। সে সূত্রেই রাবেয়ার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল মাহফুজের। এ সুযোগে তার ছোট ছেলেকে বলাৎকার করে মাহফুজ। এই ক্ষোভে মাহফুজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, মাহফুজের লাশ উদ্ধারে ঘটনাস্থল শনাক্ত করার পর ডুবুরি দল নিয়ে তল্লাশি চালানো হবে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।