চট্টগ্রাম সংবাদদাতা : আতঙ্কের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল সমাবেশ। গত এক সপ্তাহ ধরে দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই বিষোদগার করছিলেন। কিন্তু সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম শহীদ মিনারের সামনে এসেই পরস্পরের সঙ্গে আলিঙ্গন করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এবং মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ডাকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।
ইতিপূর্বে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে প্রকাশ্যে খুনি আখ্যা দিয়েছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আর আ জ ম নাছির বলেছিলেন, না পাওয়ার বেদনা আর বয়সের ভারে ন্যুব্জ মহিউদ্দিন চৌধুরী পাগলের প্রলাপ বকছেন, আর টুপি মাথায় মিথ্যে বলছেন। ফলে সোমবারের সমাবেশে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা থাকবে এমনটি আশঙ্কা ছিল সবার মধ্যে। এ অবস্থায় অনেক দলীয় নেতাও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু শেষপর্যন্ত তেমনটি আর হয়নি।
সভার শেষ বক্তা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, নগর আওয়ামী লীগে কোনো বিরোধ নেই। বক্তব্য দেয়ার সময় আমি অনেক কিছু বলেছি। কেন বলেছি সেটা আজকে না-ই বা বললাম। আমরা একই ঘরে আছি। পদবির জন্য প্রতিযোগিতা হতে পারে। ভেতরে অনেক কিছু থাকতে পারে। তার অর্থ খুনোখুনি নয়, মারামারি নয়। আমাদের মধ্যে কোন যুদ্ধ নেই। আমাদের মধ্যে অমিল থাকবে। তাই বলে দন্দ্ব থাকবে কেন? ভুল বুঝাবুঝি হবে, এটা নিয়ে একটা পক্ষ ব্যাপক প্রচার করছে। যাতে আমাদের মধ্যে ফাটল ধরাতে পারে। আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ এক আছি। কোন পক্ষ চাইলেও সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারবে না।
মহিউদ্দিন চৌধুরী যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন মোবাইল ফোন টিপছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
নগরের উন্নয়ন প্রসঙ্গে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম নগর উন্নয়নে আমি ও সাধারণ সম্পাদক (আ জ ম নাছির উদ্দীন) মিলে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করব। এসময় আ জ ম নাছির মুচকি হাসেন। বাসায় লাঠি রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের অস্ত্র আছে প্রতিহত করার জন্য। আমি লাঠি রাখি নিজের সুরক্ষার জন্য। দেশে জঙ্গি বেড়েছে। লাঠি দিয়ে জঙ্গি প্রতিহত করব।
সাংবাদিকদের সমালোচনা করে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের দুইজনের দ্বন্দ্ব নিয়ে পত্রিকায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে যাচ্ছেন। যাতে আমাদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হয়। তাই আমি বলব, পত্রিকায় লিখে আমাদের ছোট করবেন না। এসময় তিনি মঞ্চ থেকে আ জ ম নাছিরকে ডেকে নিয়ে আলিঙ্গন করেন। দুই জন দুই জনের হাত ধরে মঞ্চে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে স্লোগান দেন।
তনে সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি। তিনি কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধুই স্বাধীনতা চাননি, তিনি অর্থনৈতিক মুক্তিও চেয়েছিলেন। রাজনৈতিক স্বাধীনতার চেয়ে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অনেক বেশি কঠিন। তাই বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারিতে সবাইকে এক জায়গায় আসার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। এখনো দেশে ১৯৭১ সালের দোসররা দেশেকে অস্থির করার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের সফল হতে দিতে পারি না। দেশে জঙ্গি কার্যক্রম বেড়েছে। তবে শেখ হাসিনার শক্তিশালী অবস্থানের কারণে জঙ্গিরা সফল হচ্ছে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। দুই নেতার বাইরে যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম বক্তব্য রাখেন। সমাবেশের সঞ্চালনায় ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক।