নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ও কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবির ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) ব্যবসার আড়ালে তারা জেএমবির কার্যক্রম চালাতো বলে জানায় র্যাব।বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত র্যাব-১১ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু জিহাদি বই, বোমা তৈরির সরঞ্জাম হিসেবে তারকাটা, গান পাউডার, ডেটোনেটরসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা নিহত জঙ্গি তামিম-সারোয়ার গ্রুপের সক্রিয় সদস্য বলে জানায় র্যাব।
শুক্রবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীস্থ র্যাব-১১ এর ব্যাটেলিয়ন সদর দফতরে প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১১ এর ব্যাটালিয়ান অধিনায়ক (সিও) লেফটেনেন্ট কর্নেল কামরুল হাসান গণমাধ্যমের কর্মীদের এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ঢাকার ডেমরা এলাকার মো. জামাল ওরফে রাসেল জিহাদী (৪৫), ঢাকার কদমতলী এলাকার খন্দকার আবু নাঈম ওরফে নাঈম জিহাদী (৪৯), ডেমরা এলাকার নুরুল আবছার (২৭), নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার মহসিন (৫২) ও রূপগঞ্জ এলাকার জাবির হাওলাদার (২২)।
পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে, কুমিল্লার গৌরিপুর এলাকা থেকে আক্তারুজ্জামান মারুফ (৩২), মাওলানা ওমর ফারুক (৩২) ও কাশেম মুন্সীকে (৩১) গ্রেফতার করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেনেন্ট কর্নেল কামরুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জেএমবি সদস্যদের গোপন বৈঠকের খবর পেয়ে র্যাব-১১ এর একটি দল সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সাইনবোর্ড এলাকায় পারিজাত মার্কেটে অভিযান চালায়।
এসময় এমএলএম পদ্ধতিতে অনলাইন মার্কেটিং ব্যবসার নামে জেএমবির অস্থায়ী কার্যালয় থেকে তাদের প্রধান সমন্বয়ক জামাল ওরফে রাসেল জেহাদীসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়।
সেখানে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কয়েকটি ককটেল, বিপুল পরিমাণ গান পাউডার, বিস্ফোরক দ্রব্য ও জঙ্গিবাদি বই উদ্ধার করে।
পরে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী র্যাব কুমিল্লা জেলার গৌরিপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও তিনজনকে আটক করা হয়।
সিও আরও জানান, জেএমবির আটককৃত এই সদস্যরা নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও ঢাকা, কুমিল্লা ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক বিস্তার করেছে। তাদের এই নেটওয়ার্কের আওতায় তথ্য প্রযুক্তি, জঙ্গিবাদ ও অস্ত্রচালনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী বিপুল পরিমাণ সদস্য ছড়িয়ে রয়েছে।
তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত ৮ জেএমবি সদস্য তামিম ও সারোয়ার গ্রুপের সদস্য। তামিম ও সরোয়ার নিহত হওয়ার পর রাসেল জিহাদী এ গ্রুপটির মূল সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছে বলে জানায় সিও।
যে কোনো ধরণের নাশকতা ঠেকাতে র্যাবের এই জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে লেফটেনেন্ট কর্নেল কামরুল হাসান জানান।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছে তারা জেএমবির সক্রিয় সদস্য। গত দেড় বছর ধরে তারা একত্রিত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার জন্য তারা বেশ কিছু বিস্ফোরক মজুদ রেখেছিল।
তারা বিভিন্ন এলাকাতে বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য ভুয়া জাতীয় আইডি কার্ড তৈরি করতো ও ফেসবুকে ভাইরাল আকারে উগ্র মতাদর্শ প্রচার করতো। সম্প্রতি তারা নতুন দিগন্ত নামের একটি অনলাইন ই কমার্স ব্যবসা চালু করে। আর ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্নজনকে ফেসবুক থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাটিয়ে বন্ধুত্ব তৈরি করে পরে উগ্রবাদী পোস্ট পাঠাতো।
গ্রেফতারকৃতরা এমএলএম ব্যবসার অন্তরালে জেএমবি সদস্য সংগ্রহ করতো। তারা থ্রিমা, ইমো, ওয়াসট এ্যাপস ব্যবহার করে সদস্য সংগ্রহ করতো।
র্যাবের একটি সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত রাসেল জিহাদীর সঙ্গে জেএমবির অনেক ওপর মহলের যোগাযোগ রয়েছে। তাদেরকে খোঁজা হচ্ছে।