২৪ জুন, ২০১৬। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৫৯ ডলার বেড়ে ১ হাজার ৩২০ ডলার হয়। দর বৃদ্ধির এই প্রবণতা দেখে সে দিনই দেশের বাজারে তড়িঘড়ি করে সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ২২৫ টাকা বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। এক দিন পর বাড়তি দাম সারা দেশে কার্যকর হয়।
৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৪৪ ডলার কমে ১ হাজার ২৬৬ ডলার হয়। গত ২৪ জুনের দাম ধরলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ৫৪ ডলার কমে যায় সোনার দর। তবে এবার আর দেশের বাজারে সোনার দাম কমালেন না সমিতির নেতারা। পরের ২০ দিনে বিশ্ব বাজারে সোনার দর হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্যে থাকলেও সার্বিকভাবে দাম বাড়েনি। তবু দাম কমেনি। ফলে বাড়তি দামেই সোনা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা।
কমোডটি এক্সচেঞ্জ মার্কেটে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বিশুদ্ধ বা ২৪ ক্যারেট সোনার প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) দাম ছিল ১ হাজার ২৬৫ ডলার ৯৩ সেন্ট। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে হয় এক ভরি। তার মানে প্রতি ভরির দাম দাঁড়ায় ৪৭৪ ডলার ৭৩ সেন্ট। দেশি মুদ্রায় ৩৭ হাজার ৯৭৯ টাকা (এক ডলার=৮০ টাকা ধরলে)। আবার ২৪ ক্যারেটে সোনার ভরিতে থাকে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা। ২২ ক্যারেটে পাওয়া যায় ৯১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাজারের এই হিসাব ধরলে ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরির দাম ৩৪ হাজার ৮০১ টাকা। ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী, বিদেশ থেকে এক ভরি সোনা আনতে ৩ হাজার টাকা শুল্ক ও ৪ শতাংশ অগ্রিম বাণিজ্য মূসক (এটিভি) দিতে হয়। তাতে এক ভরি সোনার দাম প্রায় ৩৯ হাজার টাকা হয়। তবে দেশে বর্তমানে এই মানের বা ২২ ক্যারেট সোনা ভরিপ্রতি ৪৮ হাজার ৩৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২১ ক্যারেট সোনার ভরি ৪৬ হাজার ১৮৯ টাকা।
গত পাঁচ বছরে ৫০ বারের বেশি সোনার দাম হ্রাস বা বৃদ্ধি করেছে জুয়েলার্স সমিতি। প্রতিবারই সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বা সভাপতি সোনার দাম বৃদ্ধি-হ্রাসের কারণ জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি কিংবা হ্রাসের কথাই বলেছেন। কয়েকবার তাঁরা দাম নির্ধারণে বিশ্ববাজারের পাশাপাশি পুরান ঢাকার তাঁতী বাজারের পোদ্দার সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীন বুলিয়ন মার্কেটে পাকা সোনার জোগান ও চাহিদার কথাও বলেন।
আন্তর্জাতিক ও দেশের বাজারে সোনার দামের অসামঞ্জস্য বিষয়ে গতকাল বিকেলে জানতে চাইলে জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে বা কমলে তো হবে না। যতক্ষণ না দেশের ব্যাংক কিংবা অন্য সংস্থা থেকে আমাদের কাছে সোনা বিক্রি করা না হচ্ছে, ততক্ষণ আমরাও পারব না।’ দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে বৈধভাবে সোনা কেনাবেচার ব্যবস্থা করার দাবি করছেন বলেও জানান তিনি।
পরে জানতে চাইলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘গয়না তৈরির জন্য স্বর্ণশিল্পীদের ভরিতে ২ আনা পাকা সোনা দিতে হয়। অন্যদিকে ক্রেতারা গয়না তৈরির মজুরি দিতে চান না। সে জন্য বুলিয়ন মার্কেটের প্রতি ভরি সোনার দামের সঙ্গে ২৩-২৮ শতাংশ বৃদ্ধি করেই সোনার দর নির্ধারণ করা হয়।’
তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়লে দেশে কেন দাম বাড়ায় সমিতি? কমলে কেন কমানো হয় না? এসব প্রশ্নের জবাবে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে সমিতির এই নেতা বলেন, ‘সোনার দাম বৃদ্ধি-হ্রাসের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আমরা করব। বিশ্ববাজারের দর ২৫ ডলার কম বা বেশি হলেই দাম পরিবর্তন হবে। শিগগিরই এটি আমরা করে ফেলব।’