হিলারি ক্লিনটনঃ বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর নারী

SHARE

hillary_clinton_by_gage_skidmore_2

ইমারত হোসেন

হিলারি ক্লিনটন ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে, শিকাগোর ইলিনয়েসে জন্মে ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভারসিটি থেকে আইন বিষয়ে “ল” ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে সহপাঠী বিল ক্লিনটনকে বিয়ে করেন। ১৯৯৩- ২০০১ সাল পর্যন্ত ফার্স্ট লেডি ছিলেন। এরপর ২০০১-২০০৯ পর্যন্ত ইউ এস সিনেটর ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই করার ঘোষণা দেন। ২০০৮ সালে প্রাথমিক নির্বাচনে তিনি পরাজয় মেনে নেন যখন দেখেন ডেলিগেটদের ভোটে বারাক ওবামা বিজয়ী হতে চলেছেন। জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের পর বারাক ওবামা তাকে রাষ্ট্রীয় সচিব পদে নিয়োগ দেন। ২০০৯ সালে তিনি ক্যাবিনে সদস্য হিসেবে শপথ নেন এবং ২০১৩ সাল পর্যন্ত এপদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে তিনি আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়াই করার ঘোষণা দেন।

clinton-young

শৈশবঃ
হিলারি ডায়নে রডহ্যাম ক্লিনটন জন্মে ছিলেন ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে, শিকাগোর ইলিনয়েসে। তিনি শিকাগোর কেন্দ্রস্থল থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত উপশহর ইলিনয়েসের পার্ক রিজে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি হাফ রডহ্যাম ডোরথি এমা হাওয়েল রডহ্যাম এর বড় সন্তান। তার ছোট দুই ভাই হাফ জুনিয়র এবং এন্থনি। যুবতি বয়সে তিনি রিপাবলিকান দলে সক্রিয় ছিলেন ১৯৬৪ সালে রিপাবলিকান দলের মনোনীত রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ব্যারি গোল্ডওয়াটার পক্ষে প্রচারণা চালান। তিনি রেভারেন্ড মারটিন লুথার কিং জুনিয়রের বক্তৃতা শুনে উৎসাহিত হন।
হিলারি বড় হন একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে। তার বাবা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের নৌবাহিনীতে সৈনিক ছিলেন এবং পরবর্তিতে একটি ছোট ব্যবসার মালিক হন। হিলারি যখন সময় পেতেন তখনই পারিবারিক ব্যবসায়ে সাহায্য করতেন। তার বাবা একজন কট্টর রিপাবলিকান ছিলেন। হিলারির মা ডরোথির শৈশব খুবই কঠিন ছিল। ডরোথির বাবা মা তাকে ছোট বেলায় ফেলে রেখে চলে যায়। তিনি তার এক আত্মীয়র বাসায় থাকার জন্য যান কিন্তু তারা তাকে তাদের সাথে রাখতে অস্বীকৃতি জানান। ১৪ বছর বয়সে ডরোথি বুঝলেন এ অবস্থা থেকে বাচার উপায় নিজের পায়ে দাঁড়ান। তাই তিনি গৃহকর্মী ও আয়া হিসেবে কাজ শুরু করেন। হিলারি তার মায়ের কাছ থেকেই শিশুদের জন্য লড়াই করার উৎসাহ পেয়ে ছিলেন।

hillary-clinton5

শিক্ষা ও প্রাথমিক কর্ম জীবনঃ
রডহ্যাম ওয়েলসলি কলেজে অধ্যয়ন করেছেন যেখানে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯৬৯ সালে গ্রাজুয়েশনের পূর্বে সিনিয়র ক্লাস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ইয়েল ইউনিভারসিটিতে “ল” তে অনার্স করেন। ছাত্র জীবনে তিনি বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিন প্রথমবার ওয়াশিংটন ডি সি-তে আসেন ইউ এস সিনেটর ওয়াল্টার মনডেলের মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার কমিটিতে কাজ করতে। ১৯৭৪ সালে তিনি রাষ্ট্রপতির অভিশংসন তদন্ত কমিটির সদস্য হন। সে সময় তিনি ওয়াটারগেট স্ক্যান্ডাল ঘটনায় হাউজ অফ রিপ্রেসেনটেটিভ জুডিসিয়ারি কমিটিতে পরামর্শ দিচ্ছিলেন। রাষ্ট্রপতি রিচারড এম নিক্সন পদত্যাগের পর তিন আরকান্সাস ইউনিভারসিটিটির শিক্ষক পদে যোগদান করেন। যেখানে তার সহপাঠী বিল ক্লিনটনও শিক্ষকতা করতেন।

hillary-clinton4

বিল ক্লিনটনকে বিয়েঃ
১৯৭৫ সালে ১১ অক্টোবর তিনি বিল ক্লিনটনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পূর্বে বিল তার জন্য একটা ছোট বাড়ি কিনেছিলেন যেটি তিনি পছন্দ করেছিলেন। যখন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হল তখন তিনি রাজি হলেন এবং বিল তাকে বললেন যে তিনি তার জন্য সেই বাড়িটি কিনেছেন।তাদের কন্যা চেলসি ভিক্টোরিয়া জন্মগ্রহন করেন ১৯৮০, ২৭ ফেব্রুয়ারি। ১৯৭৭ সালে তিনি রোজ ল ফার্মে যোগদান করেন। পরে তাকে লিগ্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের খন্ডকালিন চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ১২ বছর আরকান্সাস স্টেটের ফার্স্ট লেডি হিসেবে তিনি এডুকেসনাল স্ট্যান্ডার্ড কমিটিতে চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। ১৯৮৮-১৯৯১ পর্যন্ত তিনি দ্যা ন্যাশনাল ল জার্নাল এর আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষমতানবান ১০০ নারী আইনজীবীর তালিকায় ছিলেন।

ফার্স্ট লেডিঃ
১৯৯২ সালের বিলের নির্বাচনী প্রচারণায় হিলারি তার স্বামীর একজন নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হন। বিল ক্লিনটন রাস্ট্রপতি হওয়ার পর তাকে জাতিও স্বাস্থ্য পুনর্গঠন টাস্কফোসের প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করেন। এ সময় তিনি ও তার স্বামী হোয়াইট ওয়াটার রিয়াল ইস্টেট প্রজেক্টে বিনিয়োগ করেন। ফেডারেল গভারমেনটের $৭৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে প্রজেক্ট ব্যাংক মরগান গ্যারান্টি সেভিং ব্যর্থ হয়। হোয়াইট ওয়াটার পরবর্তিতে কংগ্রেসের শুনানি এবং স্বাধীন তদন্তের বিষয় হয়ে উঠে। ১৯৯৮ সালে হোয়াইট হাউস মনিকা লেওয়িনস্কি যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে। যদিও হিলারি ক্লিনটন তার স্বামীর পক্ষে দাড়িয়ে ছিলেন। জনশ্রুতি আছে তিনি তার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে চেয়ে ছিলেন। বিল ক্লিনটনকে এ জন্য অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু ইউ. এস সিনেট তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয় এবং তিনি বেচে গিয়েছিলেন।
hillary-clinton6
সিনেটে জয়লাভ এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে হিলারিঃ
হোয়াইট হাউসে বিল ক্লিনটনের দুই মেয়াদে হিলারি ক্লিনটন সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি ইউ. এস সিনেটের সিটের জন্য লড়াই করবেন। বিস্ময়করভাবে তিনি রিপাবলিকান রিক ল্যজিওকে ৫৫-৪৩ ভোটে পরাজিত করেন। ফার্স্ট লেডি হিসেবে তিনি প্রথম কোন সরকারি অফিস জয় করলেন এবং নিউ ইয়র্ক থেকে প্রথম নারী হিসেবে ইউ. এস সিনেটে নির্বাচিত হলেন। ২০০৭ সালে তিনি আমেরিকার প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে নিজের নাম ঘোষণা করলেন। ২০০৮ ডেমোক্রেটদের প্রাথমিক নির্বাচনে সিনেটর ক্লিনটন পয়াজয় স্বীকার করেন যখন দেখেন ডেলিগেটদের ভোটে বারাক ওবামা স্পষ্টভাবে জয়লাভ করতে চলেছেন।

ইউ.এস সেক্রেটারি অফ স্টেটঃ
বারাক ওবামা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করেই হিলারি ক্লিনটনকে সেক্রেটারি অফ স্টেট হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০০৯ সালের ২১ জানুয়ারিতে আমেরিকার ৬৭ তম সেক্রেটারি অফ স্টেটের দায়িত্ব নেন। তার মেয়াদে তিনি মানবাধিকার, নারী অধিকারকে আমেরিকার পদক্ষেপের কেন্দ্রীয় আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে তুলে আনেন। তিনি আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ভ্রমণকারী সচিব হয়ে উঠেন এবং আমেরিকার অবস্থান তুলে ধরতে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকে উৎসাহিত করেন। আরব বসন্ত এবং লিবিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যপারে তিনি আমেরিকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বে স্টেট ডিপার্টমেন্ট তদন্তের আওতায় আসে যখন ২০১২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ব্যঞ্জিতে ইউ স কূটনীতিকের ওপর ভয়ঙ্কর হামলা যেখানে ইউ এস এম্বাসেডর ক্রিসটোফার স্টিভেন্স সাথে আরও তিন জন নিহত হন। বেনগাজির হামলা সম্পর্কে একটি স্বাধীন প্যানেলের রিপোর্টে কৌশলগত ব্যর্থতা, নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপকীয় ত্রুটি ধরা পড়ে।

স্বাস্থ্য সঙ্ক্রান্ত আলোড়নঃ
২০১২ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেসের সামনে বেনগাজি হামলার দায়ভার স্বীকার করার জন্য দিনক্ষণ ঠিক ছিল। কিন্তু তিনি পাকস্থলীতে জীবাণু সংক্রমণ সঙ্ক্রান্ত অসুস্থতার অজুহাতে সাক্ষ্য প্রদানের নির্ধারিত দিন বাতিল করেন। পরে আলোড়ন ওঠে যে তিনি সংজ্ঞাহীনতায় ভুগছিলেন। কিছু কংগ্রেস সদস্য তার অসুস্থতার সময় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
hillary-clinton8
বেনগাজি সাক্ষ্য ও পদত্যাগঃ
২০১৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ক্লিনটন বেনগাজি হামলার সাক্ষ্য দেন। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে ঘটনার সম্পূর্ণ দায়ভার গ্রহণ করেন এবং হামলায় নিহতদের স্মরণ করে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই তিনি বলে আসছিলেন যে তিনি একবারই সেক্রেটারি অফ স্টেট হিসেবে থাকবেন। ২০১৩ সালে ১ ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিক পদত্যগ করেন।

২০১৬ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হিলারিঃ
২০১৪ আলের জুনে হিলারি একটি স্মৃতি কথা মূলক বই প্রকাশ করেন যেটি নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার তালিকার শীর্ষে ছিল। পরের বছর তিনি সমালোচনার সম্মুখীন হন যখন জানা যায় তিনি সেক্রেটারি অফ স্টেটের দায়িত্ব পালন করাকালীন ব্যক্তিগত ইমেইল এড্রেস সরকারি কাজে ব্যবহার করেন। একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার ব্যাক্তিগত ইমেইল এড্রেস সদ্ব্যবহার করেন কিছু সুবিধার জন্য যেটাতে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রটোকলের অনুমতি ছিল।

ব্যাপক অনুমানের পর ২০১৫ সালে তিনি ইউ.এস রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান। তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ডেমোক্রেট দলে গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন এবং যদি নির্বাচিত হন তাহলে প্রথম নারী হিসেবে মনোনয়ন পাবেন।