দুই শিশুর মায়ের স্বীকারোক্তি নিয়ে সন্দেহ পুলিশের

SHARE

Ishrat-Zahan-Oroni_Alvi-Ama
দুই শিশু খুনে মায়ের ‘দায় স্বীকারের’ কথা জানালেও ঘটনার পেছনে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রামপুরা থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান রোববার বলেছেন, র‌্যাবের পর পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদেও দুই শিশু সন্তানকে হত্যার স্বীকারোক্তি ‘ভাবলেশহীনভাবেই’ দিয়েছেন এই নারী।
“এই ঘটনার পেছনে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ হয়। পুলিশ প্রকৃত ঘটনা বের করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে,” বলেছেন ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন।
দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা মাহফুজা স্বীকার করেছেন বলে র‌্যাব-পুলিশ জানানোর পর তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে; যদিও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এই নারীকে মানসিকভাবে সুস্থ বলেই তাদের মনে হয়েছে।
মাহফুজা আসলেই কি খুন করেছেন? করলে তা কি একাই করেছেন? কোন কারণ তাকে সন্তান হত্যার মতো কাজে প্ররোচিত করেছে? তার দাম্পত্যে কী সমস্যা ছিল? তিনি কি মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন?- এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হচ্ছে পুলিশকে।
১৪ বছরের নুসরাত আমান অরণী এবং ছয় বছরের আমান আলভীকে দাফনের পর মাহফুজাকে জামালপুর থেকে ধরে আনে র‌্যাব। এরপর জানানো হয়, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ‍দুশ্চিন্তা থেকে নিজেই দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন চল্লিশোর্ধ্ব এই নারী।
অরণী ভিকারুন নিসানূন স্কুলের ইস্কাটন শাখায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত; বনশ্রীর হলি ক্রিসেন্ট স্কুলের নার্সারির শিক্ষার্থী ছিল আলভী।
তারা পড়াশোনায় কেন ছিল- তা জানতে রোববার দুপুরে ওই বাসায় যান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজ; তিনি কথা বলেন বাড়ির মালিক মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের সঙ্গে।
স্কুলশিক্ষক কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি (পুলিশ কর্মকর্তা) বাসায় এসে অরণীর স্কুলের সর্বশেষ বার্ষিক পরীক্ষার নম্বরপত্র সংগ্রহ করেছেন।
“আমাকে বললেন, স্যার দেখেন তো ও কোনো পরীক্ষায় ফেল করেছে কি না? আমি দেখলাম মেয়েটা তো খারাপ ছাত্রী ছিল না। সে চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় বিজ্ঞানে ৮০ নম্বরের বেশি পেয়েছে, শুধু একটি বিষয়ে সর্বনিম্ন নম্বর ৬৩। এটা তো ভালো ফলাফল।”
আলভীর বিদ্যালয় হলি ক্রিসেন্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামীনা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নার্সারিতে ওঠার সময় আলভী ষষ্ঠ হয়েছিল। সে ক্লাসে নিয়মিত আসত। তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের দুষ্টুমি বা খারাপ ফলাফল করার মতো তথ্য নেই।”
সন্তানদের ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা থেকে হত্যার কথা স্বীকারের বক্তব্য পেলেও মাহফুজার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ এখনও উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
উপ-কমিশনার আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শনিবার রাতেও পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
পাঁচ দিনের রিমান্ডে দুদিনের জিজ্ঞাসাবাদে মাহফুজা নিজের আগের বক্তব্যেই অনড় রয়েছেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাবলেশহীনভাবে সন্তান হত্যার কথা স্বীকার করছেন মাহফুজা। তার চোখে কোনো পানিও দেখা যায়নি।”
মাহফুজার দায় স্বীকারের বক্তব্য নিয়ে ইতোমধ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তার ভাই জাকির হোসেন সরকার। তিনি বলছেন, তার বোনের পারিবারিক কোনো সঙ্কট ছিল না, আর সন্তানদেরও ভালবাসতেন তিনি।

র‌্যাবের বক্তব্যের পর ব্যবসায়ী আমানুল্লাহ সন্তান হত্যাকাণ্ডের জন্য স্ত্রীকে আসামি করে মামলা করার পর অপ্রকাশ্যে আছেন তিনি।

বনশ্রীর বি ব্লকের চার নম্বর রোডের নয় নম্বরে কাদেরের পাঁচ তলা বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী, দুই সন্তান ও মাকে নিয়ে থাকতেন আমানুল্লাহ।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ওই বাসা থেকে অরণী ও আলভীকে নিসাড় অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে খাবারে বিষষ্ক্রিয়ার সন্দেহের কথা বলা হয়। পরদিন ময়নাতদন্তে চিকিৎসকরা শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পেলে তদন্তে নামে র‌্যাব।

এরপর আমানুল্লাহ ও মাহফুজাকে র‌্যাব ঢাকায় নিয়ে এলেও শিশু দুটির দাদি রয়ে গেছেন জামালপুরে। আমানুল্লাহ ও তার মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

মাহফুজা ও আমানুল্লাহ সম্পর্কে চাচাত ভাই-বোন। পারিবারিক সম্মতিতে দেড় দশক আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। আমানুল্লাহর পোশাক শিল্পের ব্যবসা রয়েছে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মাহফুজা কিছু দিন কলেজে শিক্ষকতা করলেও পরে তা ছেড়ে দেন।

মাহফুজার শিক্ষকতা ছেড়ে দেওয়া, পারিবারিক কলহ এবং অন্য কেউ এই ঘটনায় জড়িত কি না- এসব প্রশ্নের উত্তরই খোঁজা হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।