চলতি মৌসুমে নওগাঁয় ব্যাপক হারে গমের আবাদ করা হয়েছে। বোরো আবাদে খরচ বেশি ও লাভ কম হওয়ায় এবং বাজারে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় গম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক। এ বছর গম চাষে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং ফলন ভাল হবে এমনটাই জানিয়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০ হাজার ৭৬১ হেক্টর। আর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ২৬ হাজার ৩৩৫ হেক্টর। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিল ২৪ হাজার ৪২০ হেক্টর। জেলার ১১টি উপজেলায় কম-বেশি গমের আবাদ করা হয়েছে। তবে সাপাহার উপজেলায় ৮ হাজার ৩৫০ হেক্টর এবং এবং পোরশা উপজেলায় ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ করা হয়েছে। উন্নত জাতের গম প্রতিভা, শতাব্দী, বারী-২৫, ২৬ ও ২৭ আবাদ করেছেন কৃষক।
জানা গেছে, গম আবাদে ধানের চেয়ে পানি ও সারসহ শ্রমিক খরচ কম এবং লাভ বেশি হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে গমেরও নতুন জাত উদ্ভাবন হয়েছে। কৃষকরা আশা করছেন, বাজারে দাম ভাল থাকলে আগামীতে গমের আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে।
পোরশা উপজেলার নীতপুর বাঙ্গালপাড়া গ্রামের কৃষক বদিউজ্জামান জানান, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের বারী-২৬ গমের আবাদ করেছেন। গম চাষে বিঘা প্রতি প্রায় সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। গম চাষে ঝামেলাও কম। পানি সেচ ২/৩ টা দিলেই হয়। গম ভাল হলে বিঘা প্রতি প্রায় ১০/১১ মণের মতো হয়।
একই গ্রামের কৃষক আবুল হাসেম জানান, এবার ৪ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের বারী-২৫ গমের আবাদ করেছেন। ধান চাষে খরচ বেশি হওয়ায় এবং দাম কম হওয়ায় গম চাষের প্রতি বেশি আগ্রহী। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এলাকার সাধারণ কৃষকদের ঘরে যখন খাবার থাকে না তখন গম থেকে কিছুটা সুবিধা পাওয়া যায়।
সাপাহার উপজেলার জয়দেবপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সমস্যা প্রকট। ধান আবাদে পানি বেশি দিতে হয় এবং খরচও বেশি। এছাড়া কাজের লোকদের বড়ই অভাব। কিন্তু গম চাষে তেমন খরচ হয় না। বিঘা প্রতি ৪/৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এবার প্রায় ১২ বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন। ফলন ভাল হলে বিঘা প্রতি প্রায় ১২/১৩ মণের মতো হবে।
এছাড়া একই গ্রামের কৃষক মহসিন আলী জানান, এ বছর গম চাষে আবহাওয়া অনুকূল রয়েছে। আশা করছি ফলনও ভাল হবে। গম চাষে স্বল্প পানিতে ৩টি সেচ দিতে হয় এবং পরিশ্রম স্বল্প। কৃষি অফিস থেকে স্বল্প পানিতে আবাদে ফসলের প্রতি কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চল বিশেষ করে সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর উপজেলায় পানির প্রচুর সমস্যা। পানির সমস্যার কারণে স্বল্প পানিতে স্বল্প সেচে আবাদের কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের উন্নত জাতের গমের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।