জয়া ‘বাংলাদেশের সানি লিওন’ নয়

SHARE

joyaবিতর্ক যেন জয়া আহসানের পিছু ছাড়ছে না। যদিও নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে মুখরোচক বিতর্ক নতুন নয়। কিন্তু সেই বিতর্কের সূত্রপাত যখন দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের কারণে ঘটে তখন সেই দৈনিকের বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কিন্তু ‍পরক্ষণেই যখন জানা যায়, দৈনিকটি স্বনামধন্য তখন অবাক এবং একইসঙ্গে হতাশ হতে হয় বৈকি! তেমনই একটি ভুল এবং হতাশাজনক সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় দৈনিক ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’।

‘বাংলাদেশের সানি লিওন! দেশ ছাড়ার হুমকি জয়া এহসানকে’ এমন শিরোনামে গত ৮ নভেম্বর খবর প্রকাশ করে আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন ভার্সন। কিন্তু এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র উল্লেখ করেনি তারা। এমনকি প্রকাশিত সংবাদের শিরোনামের সঙ্গে মূল খবরের কোনো সামঞ্জস্যও নেই। শুধু তাই নয়, জয়া আহসানের নামও তারা ছেপেছে ভুলভাবে। এ ধরনের ভুল তারা প্রায়ই করছে। এর আগেও এ নিয়ে কম আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। অমিতাভ বচ্চনকে আমরা নিশ্চয়ই ‘অমিতভ বচ্ছন’ বলবো না!

যাই হোক, এবার জয়ার প্রসঙ্গে আসি। আনন্দবাজার লিখেছে : ‘ফতোয়া জারি হল বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী জয়া এহসানের বিরুদ্ধে। সূত্রে খবর, জয়া বাংলাদেশের সানি লিওন এই অভিযোগে তাকে অবিলম্বে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে খুনের হুমকিও।’

 অথচ আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি, জয়াকে এ ধরনের কোনো হুমকি কেউ দেয়নি। দিলে আমরাই প্রথম এ সংবাদ পেতাম। কিন্তু তা হয়নি। আমরা আমাদের নায়িকার সংবাদ জানছি পাশের দেশের সংবাদপত্র থেকে। এ ক্ষেত্রে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের উদ্দেশ্য কী? এর উদ্দেশ্য হতে পারে দুটি। এক আমরা অতীতে দেখেছি, চলচ্চিত্র মুক্তির আগে এর নায়ক-নায়িকা অথবা সংশ্লিষ্ট কাউকে নিয়ে খবর বানিয়ে দর্শকের মধ্যে কৌতূহল তৈরির চেষ্টা করা হয়। হতে পারে এই সংবাদটিও সেই উদ্দেশে তৈরি করা। দুই জয়ার ক্যারিয়ারে অশ্লীলতার তকমা জুড়ে দিয়ে তাকে টালিউডে অপদস্থ করা। কিন্তু দৈনিকটির এ কথা ভুলে যাওয়া উচিত হয়নি যে, সংবাদটির সঙ্গে দেশের সম্মানও জড়িত ছিল। বিশেষ করে আমরা যখন ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। দেশে জঙ্গিগোষ্ঠী যখন সুযোগ পেলেই অন্ধকার কমোডের আড়াল থেকে তেলাপোকার মতো বেরিয়ে এসে গায়ের ওপর বসতে চাইছে তখন তাদের জড়িয়ে এ ধরনের ভুল সংবাদ প্রকাশ কতটা দায়িত্বসঙ্গত- এমন প্রশ্ন সচেতন পাঠক করতেই পারেন।

জয়া আহসান আমাদের দেশের প্রথম সারির একজন। তিনি এ দেশের চলচ্চিত্রের প্রতিনিধিত্ব করেন। এর আগে  ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী-টু’চলচ্চিত্রের একটি গানের দৃশ্য নিয়ে বেশ সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে তাকে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো বিতর্কের মুখে পড়লেন এই অভিনেত্রী। তবে এবার নিজ দেশে নয়, ঘটনার সূত্রপাত পরবাস থেকে। গত ১৬ অক্টোবর ‘রাজকাহিনী’ ছবিটি মুক্তি পায়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগকে কেন্দ্র করে ছবিটি নির্মিত। এতে ‘রুবিনা’ নামে একটি চরিত্রে অভিনয় করেন জয়া। ছবির মূল কাহিনী এগারো জন পতিতাকে নিয়ে। এর মধ্যে জয়াও একজন। ছবিতে সহশিল্পী রুদ্রনীল ঘোষের সঙ্গে তার একটি দৃশ্য নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।

এ দিকে সমালোচনার বিষয়টাকে জয়া আহসান এক প্রকার উড়িয়েই দিয়েছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন। বলেছেন, ‘সমালোচকদের কথা আমি খুবই গুরুত্ব দেই। তাদের কাছে যদি আমার অভিনীত দৃশ্যটিকে সমালোচনার যোগ্য মনে হয় তাহলে নিশ্চয়ই বিষয়টি সেরকম কিছুই।’ পরে আবার এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘সিনেমাটিতে কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ সব শিল্পীরা ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু সে তুলনায় আমার পর্দায় উপস্থিতি অন্য সবার চেয়ে বেশি। এতে অভিনয় করার মানে হচ্ছে ঐতিহাসিক একটা কাজের অংশ হয়ে থাকা। বাংলাদেশের একজন শিল্পী হিসেবে তারা সম্মান করে আমাকে নিয়ে গেছেন। এটি আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। অভিনয়ের জায়গাও ছিল। দর্শকরা দেখলে বাকিটা বুঝতে পারবেন।’

অর্থাৎ জয়া কোন প্রসঙ্গে, কতটুকু চরিত্রের প্রয়োজনে এমন দৃশ্যে অভিনয় করেছেন সেটা সিনেমা না দেখে বলা যাবে না। এবং এটাই হওয়া উচিত। অথচ আমরা দেখলাম, এ কারণে তার বিরুদ্ধে দেশ ছাড়ার হুমকির খবর! জয়া আহসান সুদর্শনা মডেল, জনপ্রিয় ও মেধাবী অভিনেত্রী। হাজারো যুবকের স্বপ্নের রানি তিনি। জয়া অভিনীত ‘গেরিলা’ ছবিটির কথা কার না মনে আছে! এই ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করে মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। এই ছবিতে অভিনয় ছিল জয়া আহসানের জীবনের সেরা ঘটনা। এরপর আর থেমে থাকেননি জয়া। একের পর এক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেও বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সাফল্য পাওয়া কম কথা নয়। শুধু ঢাকার চলচ্চিত্র নয়, কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন আমাদের জয়া। অরিন্দম শীলের ‘আবর্ত’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে কলকাতার চলচ্চিত্র অঙ্গণে দারুণভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। ছবিটিতে অভিনয় করার সুবাদে শৈলজানন্দ পদকও পেয়েছেন। তাহলে কলকাতাতেই কেন জয়া আহসানকে নিয়ে হঠাৎ এমন মুখরোচক খবর প্রকাশ পাবে? কেন তাকে বলা হবে ‘বাংলাদেশের সানি লিয়ন’? এ প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গেলে হবে না। খুঁজতে হবে এর কারণ। কেননা জয়া আহসান এ দেশের নায়িকা, আমাদের নায়িকা।