ভালোবাসায় তালা মারা নিষিদ্ধ হচ্ছে। কারণ প্রেমিক-প্রেমিকাদের ধারণা তালা মেরে চাবিটা ছুড়ে ফেলে দিলে আর ভাঙবে না প্রেম! আলাদা হবে না প্রেমের জুটি!
এমন বিশ্বাসেই প্যারিসের সেতুগুলোতে ‘লাভ লকস’ বা ‘ভালোবাসার তালা’ ঝুলিয়ে দিয়েছে প্রায় সাত লাখ জুটি। তরুণ কপোত-কপোতীদের জন্য এটা অনেকটা যেন ‘শিল্প আর প্রেমের রাজধানীতে নিজেদের ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখে যাওয়া, নিজেদের জন্য এক স্মৃতির জানালা খুলে রেখে যাওয়া। ফরাসি ও বিদেশি পর্যটকদের মধ্যেও এটা তুমুল জনপ্রিয়। কিন্তু প্যারিসে এই ভালোবাসার তালা নিষিদ্ধের জন্য শুরু হয়েছে ‘নো লাভ লকস’ প্রচারাভিযান।
প্রথমে একটি দুটি সেতুতে ভালোবাসার তালা মারা শুরু হলে এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে নগরের বিভিন্ন জায়গায়। সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় নটরডেম গির্জায় যাওয়ার জন্য শ্যেন নদীর ওপর বানানো সেতুগুলোর একটি ‘পুঁন দে লা আর্শসিভিশে’। এখন এটি ‘লাভ লক ব্রিজ’ হিসেবে পরিচিত।
প্যারিসে বসবাসরত দুই মার্কিন নারী ভালোবাসার তালা নিষিদ্ধের দাবিতে ‘নো লাভ লকস’ প্রচারাভিযান শুরু করেছেন। লিসা আনসেলমো এবং লিসা টেইলর হাফ নামের এ দুই নারী প্যারিসের মেয়র এবং প্যারিসের সিটি কাউন্সিল বরাবর লেখা এক আবেদনের পক্ষে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানেও নেমেছেন।
প্রচারাভিযানে বলা হয়েছে ‘প্যারিসে ভালোবাসার তালা এখনই নিষিদ্ধ করো! আমাদের ঐতিহ্যের স্থানগুলো রক্ষা করো!’ ‘ভালোবাসা মুক্ত করো। আমাদের সেতুগুলো রক্ষা করো’।
ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া এই প্রচারাভিযানে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ জন স্বাক্ষর করেছেন।
এদিকে ‘লাভ লকস’ নিষিদ্ধের দাবিতে হতবাক হয়েছেন অনেক প্যারিসবাসী। অনেকেই এতে ক্ষুব্ধ। অনেকে দুই মার্কিন নারীর চিন্তাকে সমর্থন করে এই ভালোবাসার তালা ঝোলানোটাকে একটা ‘পাগলামি’ হিসেবেই আখ্যায়িতও করেছেন।
তালার ওজনের সঙ্গে নিরাপত্তার প্রশ্নটিও যুক্ত। আর্টস স্কুলের সেতুটি একটা ছোট্ট হাঁটাপথের সেতু। কিন্তু এতে ঝোলানো তালার ওজন প্রায় ৯৩ মেট্রিক টন! আর এর রেলিংয়ের গ্রিল নষ্ট হয়ে যায়। নগর কর্তৃপক্ষ নতুন গ্রিল লাগিয়ে দেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই তা তালায় পূর্ণ হয়ে যায়।
প্যারিসের সেতুর মতো জার্মানির হোহেনসোলার্ন সেতু এবং হা পেনি সেতুটিও‘লাভ লক’ ঝোলানোর জন্য বিখ্যাত। ২০১২ সালে ডাবলিনের সিটি কাউন্সিল সেতুতে ভালোবাসার তালা ঝোলানো নিষিদ্ধ করে। কিন্তু জনগণের তোপের মুখে কোলনের সেতুতে ‘লাভ লক’ নিষিদ্ধের চেষ্টা থেকে বিরত হয় নগর কর্তৃপক্ষ।-ইন্টারনেট