খালেদার সৌদি সফর স্থগিতের নেপথ্যে

SHARE

khaledaসার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে শেষ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার সৌদি আরব সফর স্থগিত করা হয়েছে। দলের নেতাদের একটি বড় অংশ কারাগারে থাকা ও কিছু নেতার অন্য তৎপরতা বিবেচনা করে খালেদা জিয়া এ সিদ্ধান্ত নেন। তবে ঈদের পর তিনি সৌদি যেতে পারেন।

আজ এই খবর দিয়েছে মানবজমিন।

মানবজমিন লিখেছে:

পবিত্র ওমরাহ পালনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সৌদি আরব সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সৌদি রাজপরিবারের অতিথি হিসেবে প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান মাসে তার ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেয়ার সার্বিক প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। সৌদি আরবেও খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গীদের আবাসন ও যাতায়াতের প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে আকস্মিকভাবে সফর স্থগিত করা হয়।

বিএনপির তরফে সফর বাতিল বা স্থগিতের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। বিএনপি নেতারাও এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে শেষ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার সফর স্থগিত করা হয়েছে। দলের নেতাদের একটি বড় অংশ কারাগারে থাকা ও কিছু নেতার অন্য তৎপরতা বিবেচনা করে খালেদা জিয়া এ সিদ্ধান্ত নেন। তবে ঈদের পর তিনি সৌদি যেতে পারেন। সৌদি কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন দুবাই হয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। একইভাবে যুক্তরাজ্য থেকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্ত্রী-কন্যা এবং মালয়েশিয়া থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী-কন্যা দুবাই থেকে খালেদা জিয়ার সফর সঙ্গী হওয়ার কথা ছিল। রাজকীয় মেহমান হিসেবে ১৩ জনের ভিসাও সংগ্রহ করা হয়। সে অনুযায়ী বিমান টিকিট বুকিংসহ অন্যান্য প্রস্তুতি সারা হয়েছিল। অগ্রবর্তী একটি দল ইতিমধ্যে সৌদি আরবও পৌঁছেছেন।

সূত্র জানায়, এবার খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে তার দুই ছোটভাইয়ের স্ত্রী, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত এনামুল হক চৌধুরী, ব্যক্তিগত আলোকচিত্রী নূরউদ্দিন নূরু ও তার গৃহকর্মী ভিসা পেয়েছেন। অন্যদিকে দলের দুইজন সিনিয়র নেতা ভিসা পেয়ে ইতিমধ্যে সৌদি আরব পৌঁছেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কয়েকটি ঘটনা এতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার নিয়মিত সফরসঙ্গীদের মধ্যে তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেলের বিরুদ্ধে একটি মামলায় চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। ফলে তাদের ইমিগ্রেশনে গ্রেফতারের একটি আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হওয়ার কথা থাকলেও মামলা জটিলতার কারণে তারা যেতে পারছেন না। এদিকে সৌদি দূতাবাস থেকেও সফরসঙ্গীদের কারও কারও ভিসা পাওয়া যায়নি।

আরেকটি সূত্র জানায়, রমজানের মধ্যেই দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন বিষয়ে কিছু কাজ করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। আইনগত প্রক্রিয়া অনুযায়ী রমজানেই দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মির্জা আলমগীর জামিনও পেয়েছিলেন। কিন্তু সরকার জামিনের বিরোধিতা করে আপিল করায় তার মুক্তি বাধাগ্রস্ত হয়।

এমন পরিস্থিতিতে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে তিনি একটি বৈঠকও করেছেন ৬ জুলাই সোমবার। সে বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু মতামত তুলে ধরেন সিনিয়র নেতারা। এছাড়া মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে পুলিশ। এরপরই পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে বার্তা দেয়া হয়েছে- তিনি সৌদি আরব যাওয়ার পথে তার সফরসঙ্গীদের কাউকে কাউকে গ্রেফতার করা হতে পারে। এছাড়া তিনি সৌদি আরব যাওয়ার পর হঠাৎ করেই একটি গ্রেফতার অভিযান চালাতে পারে সরকার। সেই সঙ্গে ফেরার পথে তাকে বাধা দেয়া হতে পারে। এই সময়ে দল ভাঙনের একটি কৌশল বাস্তবায়নের অপচেষ্টা হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে সৌদি সফরের বিষয়টি স্থগিত বা বাতিল করা হয়।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে যোগ দেয়ার জন্য যুক্তরাজ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছিলেন তারেক রহমান। কিন্তু ঢাকা থেকে বার্তা না পেয়ে তার টিকিট ওপেন করা হয়। যাতে যেকোনো সময় তিনি ভ্রমণ করতে পারেন। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও কন্যারা সৌদি আরব যাওয়ার জন্য দুবাই’র উদ্দেশে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দরে রওনা দিয়েছিলেন। পথেই তিনি ঢাকা থেকে বার্তা পাওয়ার পর বাসায় ফিরে যান তিনি।

সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের সফর চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হয়নি। ওমরাহ পালনের যাবার জন্য আগামীকাল ১০ জুলাই শুক্রবার আরেকটি সম্ভাব্য দিন রয়েছে।
এদিকে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব দেশের রাজনীতির একটি বিশেষ পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় রাখছে তার ইঙ্গিত মিলেছে। গতকাল মিরপুরে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে একই মামলায় ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ জামিন আবেদন করলে আদালত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুর জামিন মঞ্জুর করেছে।

এদিকে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পেট্রলবোমা হামলার নির্দেশকারী খালেদা জিয়া ও তার সহযোগীসহ সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো বিচারের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ২৭ ধারা অনুযায়ী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রয়েছে। এ আইনের ২৭ ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।’

শিল্পকলা একাডেমীতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মঙ্গলবার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠকে তার বক্তব্যের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত দলে ভাঙন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সরকার পক্ষের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল এক অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দেশ গভীর সঙ্কটের দিকে যাচ্ছে, লক্ষণ ভালো দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে সৌদি আরব বিএনপির প্রথম সারির নেতারা ইতিমধ্যে মদিনায় জড়ো হয়েছেন। যাবতীয় প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে হঠাৎ করেই খালেদা জিয়ার সৌদি আরব সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে প্রবাসী নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।