কোপা আমেরিকা রোড টু ফাইনাল: আর্জেন্টিনা-চিলি

SHARE

chile argentinaআসরের শুরু থেকেই ব্রাজিল ও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের সঙ্গে এবার অন্যতম ফেভারিট ধরা হয়েছিল স্বাগতিক চিলি এবং আর্জেন্টিনাকে।

দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লড়াইয়ে ইতোমধ্যেই অনেক নাটকীয়তা দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। সব হিসেব নিকেষ শেষে এখন চূড়ান্ত লড়াইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে এবারের টুর্নামেন্ট।

আর এক ম্যাচ মাঠে গড়ালেই পর্দা নামবে এবারের কোপা আমেরিকা আসরের। শেষের ডাক শোনা গোলেও এই আসর এখনো পর্যন্ত ম্যাড়ম্যাড়েই রয়ে গেছে বলে মনে করছেন ফুটবল বোদ্ধারা।

নিষেধাজ্ঞা আর খেলোয়াড়দের অপেশাদার আচরণে শুরু থেকেই কিছুটা শ্রী হারিয়েছে এই টুর্নামেন্ট। তারপরও সব হজম করে নিয়ে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে প্রকৃত লাতিন ফুটবলের ছন্দ খুঁজে বেড়াচ্ছেন ফুটবলভক্তরা।

তবে চূড়ান্ত লড়াইয়ের আগে কিছুটা উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে কোপার আসর। টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট আর্জেন্টিনা শুরু থেকে নিজেদের মেলে ধরতে না পারলেও শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ের ঠিক আগে যেন ধপ করেই জ্বলে উঠেছে। তবে চেনা কন্ডিশনে শুরু থেকেই দ্যুতি ছড়ানোর চেষ্টা করে আসছে চিলি।

এই আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বার চ্যাম্পিয়ন দলটির নাম আর্জেন্টিনা। এবার চিলির সঙ্গে শেষ ম্যাচে জিতলেই শিরোপা জয়ে উরুগুয়েকে ছুয়ে ফেলবে তারা। কিন্তু এবার আর্জেন্টাইনদের শুরুটা হয়েছে বেশ ম্যাড়ম্যাড়েভাবেই।

আসরে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তারকা রয়েছে এই দলটিতেই। কিন্তু মেসি-ডি মারিয়া-অ্যাগুয়েরোরা শুরু থেকেই নিজেদের হারিয়ে খুঁজছিলেন।

১৩ জুন প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এবারের কোপা অভিযান শুরু হয়েছে আর্জেন্টিনার। গ্রুপ ‘বি’ এ নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ২-২ ব্যবধানের ড্রয়ে পয়েন্ট খুইয়ে বসে জেরার্ডো মার্টিনোর দল।

ওই ম্যাচে দলীয় অধিনায়ক গোল পেলেও খোলসবন্দি তলোয়ারের মতোই ছিলো পুরো আর্জেন্টিনা দলের পারফরম্যান্স। তাই প্রথম ম্যাচে ড্রয়ের ফলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাদের।

কিন্তু সেমিফাইনালে এই প্যারাগুয়েকে দ্বিতীয়বার পেয়েই যেন ঝাল মিটিয়েছে আর্জেন্টিনা। কোপায় গতবারের রানার্সআপ দলটির বিপক্ষে সর্বশেষ দেখায় মেসি এন্ড কোং পেয়েছে ৬-১ গোলের বিশাল জয়।

আর এ জয়ের মধ্যে দিয়ে ফাইনালের আগে চিলিকে এক প্রকার পরোক্ষ হুমকিই দিয়ে রাখল এই আসরে ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন দলটি।

এর আগে গ্রুপপর্বে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ড্রয়ের পর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা। গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচেও দুর্বল জ্যামাইকার বিপক্ষেও পেয়েছে ঠিক একই ব্যবধানের কষ্টের জয়।

দলের সেরা তারকারা জ্বলে উঠতে না পারায় নকআউট পর্বেও আর্জেন্টিনাকে জয় পেতে হয়েছে ভাগ্যের জোরে। ২৬ জুন কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকার ভাগ্যে ৫-৪ ব্যবধানে জিতেছে আলবিসেলেস্তেরা।

তবে ফাইনালের আগে প্যারাগুয়েকে বিধ্বস্ত করে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলটি।

মোট ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন হলেও ১৯৯৩ সালে কোপায় সর্বশেষ শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। গতবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠার পরও জার্মানির বিপক্ষে হেরে স্বপ্ন ভেঙ্গে চূড়মার হয়েছে দলটির।

তাই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব নিয়ে এবার কিছুটা সান্তনা পেতে চাইবে ডিয়েগো ম্যারাডোনার উত্তরসূরীরা।

এদিকে ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ চিলির রয়েছে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি গোল। ম্যাড়ম্যাড়ে কোপায় যা একটু মন ভরানোর মতো ফুটবল খেলেছে তারাই। ১১ জুন উদ্বোধনী দিনে ইকুয়েডরকে ২-০ গোলে হারিয়ে দুর্দান্ত পথচলা শুরু করেছে তারা।

পরের ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে ৩-৩ গোলে কিছুটা থমকে দাঁড়ালেও পুষিয়ে নিয়েছেন এর পরের ম্যাচেই।

গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে স্বাগতিক চিলি এক জয় আর অপরটিতে ড্রয়ের ম্যাচে গোল করেছে মোট ৫টি। কিন্তু ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে এক বলিভিয়াকেই ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে সানচেজ-ভিদালরা।

স্বাগতিকদের সাফল্যের এই জয়যাত্রা অব্যাহত থাকে কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়েও। শেষ আটের লড়াইয়ে তারা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে হারিয়েছে ১-০ ব্যবধানে।

তারপর সেমিফাইনালেও জয়জয়কার চিলিয়ানদের। ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে ইডুয়ার্ডো ভার্গাসের নৈপুণ্যে পেরুকে ২-১ ব্যবধানে ছিটকে দিয়েছে  জর্জো সাম্পাওলির প্রশিক্ষিত দলটি।

দুর্দান্ত প্রতাপে এবারের কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠে আসলেও এই টুর্নামেন্টে চিলিয়ানদের অর্জন ততটা সমৃদ্ধ নয়। সর্বশেষ এই আসরে তারা ফাইনাল খেলেছিল ২৮ বছর আগে।

তা ছাড়া লাতিন ফুটবলের মুকুট কখনোই মাথায় উঠেনি দলটির। তাই ঘরের মাঠে এবার নতুন সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষায় থাকতে পারে চিলি সমর্থকরা।