অপহরণের দীর্ঘ ৪১ মাস পর সোমালীয় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া সেই ৭ নাবিকের নাম পরিচয় জানা গেছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বাংলামেইলকে তাদের নাম ও পরিচয় নিশ্চিত করেছে।
উদ্ধার পাওয়া বাংলাদেশি নাবিকেরা হলেন- সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের সুলতানপুরের গোলাম মোস্তফা, ধুলিহর ইউনিয়নের ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান, একই গ্রামের নূরুল হক, সাতক্ষীরার আশাশুনির কুল্যার আবুল কাশেম, চাঁদপুর জেলার লিমন সরকার এবং চট্টগ্রামের আমিনুল ইসলাম ও জাকির হোসেন।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার পতাকাবাহী এমভি আলবেদো থেকে গত ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর তাদের অপহরণ করেছিল সোমালীয় জলদস্যুরা। এরপর থেকে তারা জলদস্যুদের হাতেই বন্দী ছিল।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিভাগ (ইউএনওডিসি) এবং কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় এ নাবিকদের মুক্ত করা হয়েছে। তবে নাবিকদের নাম প্রকাশ করেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, মুক্ত হওয়া ৭ নাবিককে সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত করে ইউএনওডিসির একটি বিশেষ বিমানে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এরপর প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে স্থানীয় আগা খান হাসপাতালে।
কেনিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের পক্ষ থেকে ওই নাবিকের জন্য থাকা, খাওয়া এবং দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে সব ধরনের প্রক্রিয়া দ্রুত করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কেনিয়ার নাইরোবিস্থ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, অপহরণের পর থেকেই নাবিকদের মুক্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে তৎপরতা অব্যাহত ছিল। জানা গেছে, অপহৃত ২২ নাবিকের সাত জন বাংলাদেশের, সাত জন পাকিস্তানের, ছয়জন শ্রীলঙ্কার, একজন ভারত ও অপরজন ইরানের নাগরিক।
ভারতীয় নাবিকদের জলদস্যুদের হাতে বন্দী অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেভাল ফোর্স জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ৭ জুলাই জনদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় এমভি আলবেদো ডুবে যায়। নাবিকদের তখন নাহাম-৩ নামে ছিনতাই করা আরেকটি জাহাজে তোলা হয়।
জিম্মিদের পরিবারের বরাতে জানা গিয়েছিল, পকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা তাদের নাবিকদের মুক্তিপণ দিয়ে দিয়ে ২০১২ সালে ছাড়িয়ে নেয়।
তবে পাকিস্তানের জিও টিভি জানিয়েছে, দেশটির একজন নাবিক গতকাল বাংলাদেশি নাবিকদের সঙ্গে মুক্তি পেয়েছে। সোমালীয় জলদস্যুদের হাত থেকে সাধারণত মুক্তিপণ দিয়েই নাবিকদের উদ্ধার করতে হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, নীতিগতভাবে সরকার জলদস্যুদের মুক্তিপণ দিতে পারে না। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘের একটি সংস্থা ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যস্থতায় মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশি নাবিকেরা। মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্ত করা হয়েছে তাদের। যদিও প্রথমে জলদস্যুরা ৩ লাখ ডলার দাবি করে। পরে তারা সাত লাখ ডলার দাবি করেছিল।