ভারতের দর্প চূর্ণ করে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

SHARE

bd team 22কবি সুকান্ত বলেছেন- ‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়। জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।’

শেরে বাংলার ২২ গজে কবির ভাবকে সঠিক প্রমাণ করলেন ক্রিকেট মাঠের বীর যোদ্ধারা। এবার তারা নিজের জ্বলেননি, বরং ১২০ কোটির ভারতকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছার-খার করেছেন ১৬ কোটি জনতার প্রতিনিধি এগার বীর বাঙালি।

এক ম্যাচে কত কী পেল বাংলাদেশ। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এটি টাইগারদের ১৮তম সিরিজ জয়। দেশের মাটিতে ১৪তম। ভারতের বিরুদ্ধে টানা দুই জয়।

তার চেয়ে উল্লেখ্য করার বিষয় এই জয়ে মাশরাফি বাহিনী নিশ্চিত করল ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আগুনঝরা বোলিংয়ে ‘বিস্ময় বালক’ মুস্তাফিজ গড়লেন বিশ্বরেকর্ড।

এতসব অর্জনের পসরা সাজানো ম্যাচে রোববার মিরপুরে ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ২-০ তে সিরিজ জয় নিশ্চিত হলো মাশরাফি বাহিনীর। বৃষ্টি কারণে ম্যাচের দৈর্ঘ্য নির্ধারিত হয় ৪৭ ওভার। প্রথমে ব্যাট করে মুস্তাফিজের বোলিং তোপে ৪৫ ওভারে ২০০ রানে অলআউট হয় ভারত। আর বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ২০০ রানই। জবাবে ৩৮ ওভারে ৪ উইকেটে ২০০ রান তুলে জয় পায় বাংলাদেশ। মুস্তাফিজ ম্যাচ সেরা হন।

তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের ওপেনিং জুটি ইনিংসের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং উপহার দেয়। তবে তাদের ৩৪ রানের জুটি বিচ্ছিন্ন হয় সপ্তম ওভারে। কুলকার্নির বলে তামিম (১৩) ক্যাচ দেন ধাওয়ানের হাতে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৫২ রান যোগ করেন সৌম্য ও লিটন। দলীয় ৮৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অশ্বিনের নিচু হয়ে আসা বলে সৌম্য এলবির ফাঁদে পড়েন। সৌম্য ৪৭ বলে ৩৪ রান করেন।

সঙ্গীর বিদায়ের পর লিটনও ফিরে যান। আকসার প্যাটেলের শিকার হওয়ার আগে তিনি ৩৬ রান করেন। চতুর্থ উইকেটে মুশফিক-সাকিব ৫৪ রানের জুটি গড়েন। মুশফিক রান আউট হলে ভাঙে তাদের জুটি। মুশফিক ৩১ রান করেন। এরপর সাকিব-সাব্বির মিলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। তারা ৪৮ রানের জুটি গড়েন। সাকিব পূর্ণ করেন ৩০তম হাফ সেঞ্চুরি। তিনি ৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন। ১ রান নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন সাব্বির। সাব্বির ২২ রানে অপরাজিত ছিলেন। ভারতের কুলকার্নি, অশ্বিন ও আকসার প্যাটেল একটি করে উইকেট নেন।

এর আগে ভারতের ইনিংসটাই ছিল মুস্তাফিজ আতঙ্কে ধসে পড়ার দৃশ্যে পরিপূর্ণ। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইনের অধিকারী ভারতের সামনে রীতিমতো ‘যমদূত’ হয়েই উপস্থিত হলেন বাংলাদেশের এই তরুণ।

মিরপুরে ধ্রুপদী বোলিংয়ে তিনি মনে করিয়েছেন সর্বকালের সেরা বাঁহাতি পেসার ওয়াসিম আকরামকে। এমন শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনের বিরুদ্ধে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন মোস্তাফিজ। জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান ভিটরির পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেটের কীর্তি গড়েন মোস্তাফিজ। প্রথম ম্যাচেও ৫০ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

৪৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ধোনিদের ত্রাহি মধূসূদন দসা বানিয়েছেন সাতক্ষীরার এই তরুণ। ক্রিকেট বিশ্ব দেখলো ১৯ বছর বয়সী এই পেসারের স্লোয়ার, কাটারের সামনে কীভাবে নতজানু হয়ে পড়লো ভারতের পরাক্রমশালী ব্যাটিং লাইন। এদিন তার বোলিং জাদু শুরু ইনিংসের প্রথম ওভারেই। দ্বিতীয় বলেই রোহিত শর্মা (০) পয়েন্টে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দেন। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ভারত কোহলি-ধাওয়ানের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে। তাদের ৭৪ রানের জুটি ভাঙেন নাসির।

ইনিংসের ১৩তম ওভারে কোহলিকে এলবির ফাঁদে ফেলেন নাসির। আউটের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট কোহলি ২৩ রান করেছিলেন। ব্যাটিং অর্ডারে উন্নতি নিয়ে চার নম্বরে আসেন অধিনায়ক ধোনি। ধাওয়ানের সঙ্গে তার ৩৫ রানের জুটি ভাঙেন নাসিরই। ১৩তম হাফ সেঞ্চুরি করা ধাওয়ান ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। ধাওয়ান ৫৩ রান করেন। দলীয় ১১০ রানের রাইডু (০) রুবেলের শিকার হলে চতুর্থ উইকেট হারায় ভারত। পঞ্চম উইকেটে রায়নাকে নিয়ে ইনিংস বিনির্মাণে ব্যস্ত হন ধোনি। তাদের যুগলবন্দি ৫৩ রানেই থামিয়ে দেন দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে আসা মোস্তাফিজ। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র প্রথম ওভারেই ব্যক্তিগত ৩৪ রানে ফিরেন রায়না।

পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে আবারও মোস্তাফিজ ঝলক। পরপর দুই বলে ধোনি ও আকসার প্যাটেলকে ফিরিয়ে দেন তিনি। ওভারের তৃতীয় বলে একপ্রান্ত আগলে থাকা ধোনি বিভ্রান্ত হয়েছেন মোস্তাফিজের স্লোয়ারে। সৌম্যর হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৭৫ বলে ৪৭ রান করেন ভারতীয় অধিনায়ক। পরের বলেই আকসার প্যাটেল এলবির ফাঁদে পড়েন। মুস্তাফিজের হ্যাটট্রিকটা হতে দেন নি অশ্বিন।

অবশ্য সেই অশ্বিনকেই (৪) পঞ্চম শিকার বানিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন মুস্তাফিজ। ৪৪তম ওভারের পঞ্চম বলের পর নামে বৃষ্টি। প্রায় ঘণ্টা খানেকের বিরতির পর ভারতের ইনিংস স্থায়ী হয় সাত বল। বৃষ্টির পর এসেই দুর্দান্ত ইয়র্ককারে মোস্তাফিজ বোল্ড করেন জাদেজাকে (১৯)। পরের ওভারে ভুবনেশ্বরকে কুমারকে আউট করে ভারতের ইনিংসের লেজটা মুড়ে দেন রুবেল। নাসির-রুবেল ২টি করে উইকেট নেন।