অপহরণের চার দিন অতিবাহিত হলেও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) ফেরত দেয়নি বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাককে। বারবার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও পতাকা বৈঠকে বসতে সম্মত হচ্ছে না বিজিপি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া যায়নি- এ অজুহাতে তারা অপহৃত বিজিবি সদস্যকে ফেরত প্রদানে সময় ক্ষেপণ করছে। মিয়ানমারের বেপরোয়া আচরণে হতবাক সংশ্লিষ্টরাও।
এদিকে অপহৃত বিজিবি সদস্য নায়েক আবদুর রাজ্জাককে হাতকড়া পরিহিত কয়েকটি ছবি বিজিপির ফেসবুক পেজে প্রকাশের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রাজ্জাকের নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে আর তার পেছনে বিজিপির একজন সদস্য দাঁড়িয়ে আছে। দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রাজ্জাকের সামনে তার অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী রেখে তাকে আসামির মতো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। আরেকটি ছবিতে তাকে হাতকড়া পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিজিবি সদস্যকে ফিরিয়ে আনতে সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। দ্রুত তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। বিভিন্ন লেভেল থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কথা বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাজ্জাকের ছবি বিজিপির ফেসবুকে দেওয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা শিষ্টাচার-বহির্ভূত।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর এ ব্যাপারে বলেন, বাংলাদেশের নিয়মিত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একজন সদস্যের ওপর মিয়ানমার যে ধরনের অমানবিক আচরণ করেছে তা ভালো দৃষ্টান্ত নয়। তিনি বলেন, এমনিতেই রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে এক ধরনের টানাপড়েন রয়েছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ঠেলে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশে মানবিক সংকট তৈরি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে খুব জোরালো কোনো উদ্যেগ চোখে পড়ছে না। এখন বিজিবির একজন সদস্যকে আটকের পর যে ধরনের আচরণ করছে, সেটাও খুব নিন্দনীয়। এ অবস্থায় স্বাভাবিক কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি আরও কিছু করার সময় এসেছে বলেই মনে হচ্ছে।
কূটনীতি বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিজিবির নায়েক রাজ্জাকের ওপর যে আচরণ ছবিতে দেখা গেছে, সেটা মিয়ানমার রাষ্ট্রের অমানবিক এবং অগ্রহণযোগ্য আচরণেরই প্রকাশ। মিয়ানমার স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের সনাতনি একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সেটা আবারও তারা প্রমাণ করল। যদি দ্রুত নায়েক রাজ্জাককে তারা ছেড়ে না দেয় তাহলে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার তো বটেই, বাংলাদেশের আরও কঠোর পদক্ষেপের কথা ভাবা উচিত।
বিজিবির এক কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমার অধিকাংশ সময় সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করছে না। বিভিন্ন ব্যাপারে তারা অহেতুক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করে। বাংলাদেশ এসব ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক হয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। সীমান্তে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার উদ্ভব হলে মিয়ানমার তা নিরসনে দ্রুত সাড়া দেয় না। রাজ্জাক নিরাপদ ও সুস্থ আছেন বলে জানান বিজিবি কর্মকর্তারা।
টেকনাফে বিজিবি-৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু জার আল জাহিদ জানান, ঘটনার পর থেকে পতাকা বৈঠকে বসার জন্য বারবার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তারা ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ার কথা জানিয়ে বৈঠকে সম্মত হচ্ছে না। মিয়ানমারের সঙ্গে শনিবার যোগাযোগ করা হয়েছে। অনুমতি পেলে তারা বৈঠকে আসবে বলে জানিয়েছে।
গত বুধবার সকালে নাফ নদীতে বাংলাদেশের জলসীমায় দুটি নৌকায় তল্লাশি চালায় টহলরত বিজিবির একটি দল। এ সময় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি পূর্বদিক থেকে একটি ট্রলারে করে এসে বিজিবির টহল দলের ওপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে। এতে বিজিবির সিপাহি বিপ্লব কুমার (২১) গুলিবিদ্ধ হন। এক পর্যায়ে আহত বিপ্লব কুমারকে নিয়ে বিজিবি দল নিরাপদ অবস্থানে চলে এলেও অপর সদস্য নায়েক আবদুর রাজ্জাককে তুলে নিয়ে যায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।