পরিস্থিতি বিচিত্র৷ এলাকার বাইরে কারও সঙ্গে যোগাযোগ নিষিদ্ধ৷ দেশের বাইরের কারও কোনো সাহায্য নেওয়াও চলবে না৷ সন্তান দু’টোর বেশি নয়, প্রথমটার থেকে তিন বছর পরে দ্বিতীয় সন্তান, এর মধ্যে গর্ভবতী হলে হয় জেলে যেতে হবে অথবা জোর করে ভ্রূণহত্যা করা হবে৷ এই ফরমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নারী সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ বর্তমানে অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকত্বহীন৷ অথচ ১৯৮২ সালের নতুন আইনের পূর্বে তাদের নাগরিকত্ব ছিল৷ ওই সময় থেকেই রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে নাম নথিভুক্ত করাতে চাপ দেওয়া হয়৷ কারণ, তাতে ওদের তাড়ানো সহজ হবে৷ ২০১৪ সালে বর্মা সরকার ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ বাতিল করে দেয় এবং রোহিঙ্গাদের বাঙালি হিসেবে নথিভুক্ত করে৷ অধিকাংশ রোহিঙ্গার কাছ থেকে সরকারের দেওয়া সাদা কার্ড ফেরত নেওয়া হচ্ছে৷ তাতে নাগরিকদের ঘরবাড়ি জমি-জায়গা ইত্যাদির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ থাকে৷ পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে অস্থায়ীভাবে থাকার সবুজ কার্ড৷ ফলে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি হিসেবে প্রমাণ করার আর কোনো বাধা থাকল না৷
বর্তমানে কোনো রোহিঙ্গা পুরুষ কাজের জন্যে সীমান্ত পার হয়ে অস্থায়ী ভাবে বাংলাদেশ বা থাইল্যান্ডে গেলে প্রথমত তাকে আর দেশে ঢুকতে হবে না এবং ইতিমধ্যে তার স্ত্রীর সন্তান হলে শিশুটির পিতৃপরিচয় প্রশাসন স্বীকার করবে না৷
পশ্চিম বর্মার রাখাইন রাজ্য হল সাবেক আরাকান আর এই আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিমদের মাতৃভাষা রোহিঙ্গা যা প্রকৃতপক্ষে ইন্দো-আর্য ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত চট্টগ্রাম ঘেঁষা বাংলা উপভাষা৷ মায়ানমারের বর্মিদের কাছে তথাকথিত বাঙালি মাত্রেই অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি৷ ওদের আশঙ্কা, রোহিঙ্গা মুসলিমদের জনসংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে৷ অথচ সর্বশেষ জনগণনায় দেখা গিয়েছে, কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা প্রায় একই আছে৷ রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে ৭৮৬ সংখ্যা ব্যবহার করে৷ বর্মিদের অলীক আশঙ্কা, ৭+৮+৬=২১, অর্থাত্ ২১ শতকে মায়ানমার নাকি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের আয়ত্তে চলে যাবে৷ যার কোনো যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি নেই৷
মায়নামারের পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে প্রায় আট লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম বসবাস করে৷
২০১২ সালে বর্মি-রোহিঙ্গা দাঙ্গার পর থেকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মায়নামারের বিভিন্ন শিবিরে আছেন এবং কিছু গোষ্ঠী চোরাই ভাবে অন্য দেশে ছোটো ছোটো দলে উপদলে পালাতে থাকেন৷ অনেকে চরম ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম বনাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে থাইল্যান্ডে পালাতে গিয়ে সেনাদের হাতে ধরা পড়ে বা মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে মারা পড়েছেন৷ মায়ানমার-থাই সীমান্তের কাছাকাছি ইতিমধ্যে ১৭টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে৷ ১৩৯টি কবরের হদিস মিলেছে৷ কোনো কোনো কবরে একাধিক লাশ৷
সাজেদুল হক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক কলেজশিক্ষক